আম্বেদকর এবং আধুনিক ভারতের জাতপাত প্রথা

অরুন্ধতী রায় | Jan 02, 2021 07:39 am
আম্বেদকর এবং আধুনিক ভারতের জাতপাত প্রথা

আম্বেদকর এবং আধুনিক ভারতের জাতপাত প্রথা - ছবি : সংগৃহীত

 

(আইনবিদ, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, নৃতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ ও অর্থনীতিবিদ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৮৯১-১৯৫৬) বাবাসাহেব হিসেবেই ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের কাছে সুপরিচিত। ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসন-শোষণে নিপীড়িত নিম্নশ্রেণীর মানুষের সামনে তিনি আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। জাতপাত থেকে দলিত সম্প্রদায়কে চিরতরে মুক্তি দিতে তিনি বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে ভারতীয় সংবিধানের পিতা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

ভারতের বুকারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় সম্প্রতি তাকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন : দ্য ডক্টর অ্যান্ড দ্য সেইন্ট নামে। অরুন্ধতী রায় মনে করেন, আম্বেদকরই ছিলেন ভারতের জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত গান্ধীর সবচেয়ে বড় শত্রু। তিনি তাকে কেবল রাজনৈতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নয়, বরং নৈতিকভাবেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।)


বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে ধনী ১০০ লোকের হাতে যে সম্পদ রয়েছে, তা দেশটির জিডিপির এক-চতুর্থাংশের সমান। ১২০ কোটি লোকের দেশটিতে ৮০ কোটির বেশি মানুষ দিনে ২০ রুপিরও কম অর্থে বাঁচে। সত্যিকার অর্থে বিশাল বিশাল করপোরেশনই দেশটির মালিক, তারাই দেশটিকে চালাচ্ছে। রাজনীতিবিদ আর রাজনৈতিক দলগুলো বড় বড় ব্যবসায়িকপ্রতিষ্ঠানের ভর্তুকিপ্রাপ্ত সত্তা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছে।

এটা প্রচলিত জাতপাত প্রথার নেটওয়ার্কে কী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে? অনেকে বলেন, জাতপাত প্রথা ভারতীয় সমাজকে আলাদা করে রেখেছে, এর কারণেই শিল্প বিপ্লবের পর পাশ্চাত্যের সমাজের মতো এই সমাজ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি। কারো মত এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের কথা হলো, নজিরবিহীন নগরায়ন এবং নতুন কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ফলে পুরনো সমাজকে বড় ধরনের ঝাঁকি দিয়েছে। এর ফলে জাতপাতের ক্রমপরম্পরা মুছে না গেলেও অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষের বক্তব্যে যুক্তি আছে। নিচে আমি কিছু অসাহিত্য জাতীয় কিছু লেখা লেখিছি, সেজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ফর্বসের সম্প্রতি ডলারের হিসাবে বিলিয়নিয়ারের তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ৫৫ জন ভারতীয় স্থান পেয়েছেন। বলা বাহুল্য, তালিকাটি করা হয়েছে ঘোষিত সম্পদের হিসাব থেকে। এমনকি এসব ডলার বিলিয়নিয়ারের মধ্যেও সম্পদের বণ্টন খাড়া পিরামিডের মতো। এই তালিকার শীর্ষের ১০ জনের সম্পদের পরিমাণ বাকি ৪৫ জনের চেয়ে অনেক বেশি। এই শীর্ষ ১০-এর সাতজন বৈশ্য, তারা সবাই বড় বড় করপোরেশন পরিচালনা করেন, বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। তাদের নিজস্ব বন্দর, খনি, তেলক্ষেত্র, গ্যাসক্ষেত্র, জাহাজ কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, টেলিফোন নেটওয়ার্ক, পেট্রোক্যামিক্যাল প্লান্ট, অ্যালুমিনিয়াম প্লান্ট, সেলফোন নেটওয়ার্ক, টেলিভিশন চ্যানেল, টাটকা খাবারের দোকান, হাই স্কুল, চলচ্চিত্র নির্মাণ কোম্পানি, স্টেম সেল স্টোরেজ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নেটওয়ার্ক এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন রয়েছে। তারা হলেন : মুকেশ আম্বানি (রিলায়েন্স ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড), লক্ষ্মী মিত্তাল (অরসেলর মিত্তাল), দিলিপ শাংভি (সান ফার্মাসিউটিক্যালস), রুইয়া ব্রাদার্স (রুইয়া গ্র“প), কে.এম বিরলা (অদিত্য বিরলা গ্র“প), সাবিত্রি দেবী জিন্দাল (ও.পি জিন্দাল গ্র“প), গৌতম আদানি (আদানি গ্র“প) ও সুনীল মিত্তাল (ভারতি এয়ারটেল)। অন্য ৪৫ জনের মধ্যেও বৈশ্য আছেন ১৯ জন। বাকিদের মধ্যে বেশির ভাগই পারসি, বোহরা ও খত্রি (এরা সবাই বণিক সম্প্রদায়) এবং ব্রাহ্মণণ। এই তালিকায় একজনও দলিত বা আদিবাসী নেই।

বড় বড় ব্যবসা ছাড়াও বানিয়ারা (বৈশ্য) ভারতজুড়ে নগরগুলোতে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, মহাজনি কারবার করছে। কোটি কোটি গরিব কৃষক ও আদিবাসী (এমনকি মধ্য ভারতের গভীর বনে বাসকারীরাও) এসব বানিয়ার ঋণের কারেন্ট জালে আটকা পড়ছে। ‘স্বাধীনতার’ পর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয় অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে- অরুনাচলপ্রদেশ, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও আসাম- বিদ্রোহ, সামরিকায়ন ও রক্তপাত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মারোয়াড়ি আর বানিয়া ব্যবসায়ীরা ওইসব এলাকায় বসতি গেড়েছে, উচ্চকিত না থেকে তারা তাদের ব্যবসা সুসংহত করেছে। তারাই এখন এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে।

ভারতে ১৯৩১ সালের আদমশুমারিতে শেষবারের মতো জাতপাতের উল্লেখ ছিল। তাতে দেখা যায়, বৈশ্যরা মোট জনসংখ্যার ২.৭ শতাংশ (আর অচ্ছ্যুৎ ১২.৫ শতাংশ)। অনেক ভালো স্বাস্থ্যপরিচর্যা এবং তাদের শিশুদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা সত্ত্বেও বৈশ্যদের সংখ্যা বাড়ার বদলে সম্ভবত কমেছে। কিন্তু নতুন অর্থনীতিতে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নজিরবিহীন। ছোট কিংবা বড় ব্যবসা, কৃষি কিংবা শিল্প- সব খানেই জাতপাত আর পুঁজিবাদ মিলেমিশে অস্বস্তিকর, বৈষম্যপূর্ণ ভারতীয় সঙ্কর সৃষ্টি করেছে। জাতপাত-ব্যবস্থা একাকার হয়ে গেছে।

বৈশ্যরা কেবল তাদের ওপর অর্পিত দৈব দায়িত্ব পালন করে চলেছে। অর্থশাস্ত্র (আনুমানিক প্রচলিত ইংরেজি সালের ৩৫০ বছর আগে) বলে, সুদের ব্যবসা বৈশ্যদের অধিকার। মনুশাস্ত্র আরো (আনুমানিক প্রচলিত ইংরেজি সালের ১৫০ বছর আগে) আরো এগিয়ে গিয়ে সুদের হারও নির্ধারণ করে দিয়েছে : মাসে ব্রাহ্মণদের জন্য ২ শতাংশ, ক্ষত্রিয়দের জন্য ৩ শতাংশ, বৈশ্যদের জন্য ৪ শতাংশ, শূদ্রদের জন্য ৪ শতাংশ। বার্ষিক হিসাবে ব্রাহ্মণদের সুদ দিতে হবে ২৪ শতাংশ হারে, শূদ্র ও দলিতদের ৬০ শতাংশ হারে। এমনকি বর্তমানকালের কঠিন সমস্যাগ্রস্ত চাষী বা ভূমিহীনদের কাছ থেকে মহাজনেরা বার্ষিক ৬০ শতাংশ (কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি) হারে সুদ নিয়ে থাকে। তারা যদি সুদ নগদে পরিশোধ করতে না পারে, তবে ‘কায়িক সুদ’ পরিশোধ করে। সেটা হলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মহাজনদের বিনা পারিশ্রমে শ্রম দেওয়া, কিন্তু ওই ঋণ কখনো শোধ হয় না। ‘নিচু’ জাতের কোনো লোককে বাধ্যতামূলক শ্রমে লাগানো না যাওয়ার মনুস্মৃতির উল্লেখ ছাড়াই সেটা চলে।

ভারতীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বৈশ্যরা। ব্রাহ্মণরা- ভূদেবরা (পৃথিবীর দেবতা) করে কী? ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তারা মোট জনসংখ্যার ৬.৪ শতাংশ। তবে বৈশ্যদের মতো এবং একই কারণে তাদের হারও সম্ভবত কমছে। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের (সিএসডিএস) সমীক্ষা অনুযায়ী, পার্লামেন্টে ব্রাহ্মণদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চ হারে যে প্রতিনিধিত্ব ছিল, তা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এর মানে কি ব্রাহ্মণদের প্রভাব প্রতিপত্তি কমে গেছে?

আম্বেদকরের মতে, ব্রাহ্মণরা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে মাত্র তিন শতাংশ হলেও সেখানকার সরকারি চাকরির গেজেটেড পদের ৩৭ শতাংশ এবং নন-গেজেটেড পদের ৪৩ শতাংশ তাদের দখলে। এখনকার অবস্থা নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করার উপায় নেই। কারণ ১৯৩১ সালের পর আবির্ভাব ঘটেছে ‘প্রজেক্ট অব আনসিয়িং’-এর। যেসব তথ্য পাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো না পাওয়ায় আমাদেরকে হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা-ই নিয়ে কাজ করতে হয়। ১৯৯০ সালে ‘ব্রাহ্মণ পাওয়ার’-এ খুশবন্ত সিং বলেছিলেন : ‘আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যায় ব্রাহ্মণদের সংখ্যা ৩.৫ শতাংশের বেশি নয়। অথচ তারা সরকারি চাকরির ৭০ শতাংশের মতো কব্জা করে রেখেছে। আমার মনে হয়, এই হিসাবটা কেবল গেজেটেড পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সিভিল সার্ভিসের উচ্চতর পদে তথা উপসচিব থেকে বড় বড় পদে ৫০০ জনের মধ্যে ব্রাহ্মণ ৩১০ জন, অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবের ২৬টি পদের মধ্যে ১৯ জন ব্রাহ্মণ, ২৭ জন গভর্নর ও লে. গভর্নরের মধ্যে ১৩ জন ব্রাহ্মণ, ১৬ জন সুপ্রিম কোর্ট বিচারকের ৯ জন ব্রাহ্মণ, হাইকোর্টের ৩৩০ জন বিচারপতির মধ্যে ব্রাহ্মণ ১৬৬, ১৪০ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৫৮ জন ব্রাহ্মণ, মোট ৩,৩০০ আইএএস অফিসারের মধ্যে ২,৩৭৬ জন ব্রাহ্মণ। নির্বাচনী পদেও তারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। ৫০৮ জন লোকসভা সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন ব্রাহ্মণ, রাজ্যসভার ২৪৪ জনের মধ্যে ব্রাহ্মণ ৮৯ জন। এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ব্রাহ্মণরা জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫ শতাংশ হলেও তারা দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরিগুলোর ৩৬ থেকে ৬৩ শতাংশ মুঠোবদ্ধ করে রেখেছে। এমনটা কিভাবে হলো, আমি জানি না। তবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে ব্রাহ্মণদের উচ্চতর আইকিউয়ের কারণে এমনটা হয়েছে।’ খুশবন্ত সিংয়ের এই পরিসংখ্যান হয়তো ত্র“টিপূর্ণ, খুব বেশিমাত্রায় ভুল নয়। এই পরিসংখ্যান মাত্র ২৫ বছরের পুরনো। হালনাগাদ তথ্য পেলে ভালো হতো, কিন্তু তা পাওয়ার উপায় নেই।

সিএসডিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৫০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের সব প্রধান বিচারপতির ৪৭ শতাংশ ছিলেন ব্রাহ্মণ। একই সময়ে হাইকোর্ট ও নিম্নতর আদালতের সহযোগী বিচারপতিদের ৪০ শতাংশ ছিলেন ব্রাহ্মণ। ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস কমিশনের ২০০৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় আমলাতন্ত্রের ৩৭.১৭ শতাংশ ব্রাহ্মণ। তাদের বেশির ভাগই উচ্চ পদগুলোতে সমাসীন।

মিডিয়াতেও ব্রাহ্মণরা ঐতিহ্যগতভাবেই প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে। সেই ১৯৪৫ সালে আম্বেদকর যে কথা বলেছিলেন, আজও তার অনুরণন শোনা যায় : ‘অচ্ছ্যুৎদের কোনো মিডিয়া নেই। কংগ্রেসের মিডিয়া তাদের জন্য বন্ধ, এই মিডিয়া তাদের ন্যূনতম প্রচারও না দিতে বদ্ধপরিকর। অচ্ছ্যুৎদের নিজস্ব কোনো মিডিয়া নেই, এর কারণও রয়েছে। কোনো পত্রিকা বিজ্ঞাপনের অর্থ ছাড়া টিকতে পারে না। বিজ্ঞাপনের টাকা আসে কেবল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর ভারতে সব ব্যবসা (ছোট বা বড়) কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কিত। তারা কংগ্রেসী নয়, এমন কোনো সংগঠনকে সহায়তা করে না। ভারতে প্রধান সংবাদ পরিবেশনকারী সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস ইন ইন্ডিয়ার সব স্টাফ নেয়া হয় মাদ্রাজি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় থেকে। বস্তুত, ভারতের পুরো মিডিয়া তাদেরই হাতে। আর সবারই জানা আছে, তারা পুরোপুরি কংগ্রেসপন্থী, কংগ্রেসবিরোধী কোনো খবর তারা প্রকাশ করার সুযোগ দেয় না। এগুলো অচ্ছ্যৎদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

সিএসডিএস ২০০৬ সালে নয়া দিল্লির মিডিয়া এলিটদের সামাজিক মুনাফার ওপর সমীক্ষা চালিয়েছিল। দিল্লিভিত্তিক ৩৭টি হিন্দি ও ইংরেজি প্রকাশনা এবং টেলিভিশন চ্যানেলের ৩১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, এগুলোর মধ্যে ইংরেজি ভাষার প্রিন্ট মিডিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ এবং টেলিভিশনের ৭৯ শতাংশ ‘উচ্চ বর্ণের’। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ ব্রাহ্মণ। এই ৩১৫ জনের মধ্যে একজনও দলিত বা আদিবাসী নন; মাত্র চার শতাংশ শূদ্র এবং তিন শতাংশ মুসলিম (যারা মোট জনসংখ্যার ১৩.৪ শতাংশ)।

এই হলো সাংবাদিক এবং ‘মিডিয়া পারসোনালিটি’। তারাই বড় বড় মিডিয়া হাউজের মালিক। তারা কাদের পক্ষে কাজ করেন? চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের মধ্যে তিনটির মালিক বৈশ্য, একটির মালিক ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। ভারতের সবচেয়ে প্রচারবহুল মিডিয়া কোম্পানি দ্য টাইমস গ্র“পের (বারনেট, কলম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লি.) মিডিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল ‘টাইমস নাউ’। এই কোম্পানির মালিক একটি জৈন পরিবার (বানিয়া)। ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের’ মালিক মারোয়াড়ি বানিয়া ভারতিয়া পরিবার। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের’ মালিক গোয়েনকা, এটাও মারোয়াড়ি বানিয়া পরিবার। ‘দ্য হিন্দু’র মালিক একটি ব্রাহ্মণ পরিবার। ‘দৈনিক জাগরণ’ সবচেয়ে প্রভাবশালী হিন্দি পত্রিকা (সার্কুলেশন সাড়ে পাঁচ কোটি)। এটির মালিক কানপুরের গুপ্ত পরিবার, তারাও বানিয়া। ‘দৈনিক ভাস্কর’ও প্রভাবশালী হিন্দি পত্রিকা। এর সার্কুলেশন এক কোটি ৭৫ লাখ। এর মালিক আগারওয়ালারা বানিয়া। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (মালিক গুজরাটি বানিয়া মুকেশ আম্বানি) ২৭টি প্রধান জাতীয় ও আঞ্চলিক টিভি চ্যানেলের মালিক। অন্যতম বৃহৎ জাতীয় টিভি খবর ও বিনোদন নেটওয়ার্ক জি টিভি নেটওয়ার্কের মালিক সুভাষ চন্দ্র বানিয়া। দক্ষিণ ভারতে জাতপাত প্রথা অনেকটা ভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইনাদু গ্র“পের (তারা সংবাদপত্র, বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র নগরী এবং ডজন খানেক টিভি চ্যানেলসহ অনেক কিছুর মালিক) মালিক অন্ধ্রপ্রদেশের কাম কৃষক বর্ণের রামোজি রাও। এটা বিগ মিডিয়ার ব্রাহ্মণ-বানিয়া মালিকানার ধারাকে রুখে দিয়েছে। আরেকটি প্রধান মিডিয়া হাউজ সান টিভি গ্র“পের মালিক মারন পরিবার। তারা ‘পশ্চাৎপদ’ বর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। তবে তারাও বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর।

(ভারতের ফ্রন্টলাইন পত্রিকায় ১০ মার্চ, ২০১৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us