আপনার শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে তো?

ডা: কানিজ ফাতেমা মনামী | Feb 09, 2021 03:32 pm
আপনার শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে তো?

আপনার শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে তো? - ছবি সংগৃহীত

 

দুই বছরের শিশু হাসান, এ বয়সে অন্য শিশুরা যখন দৌড়ে বেড়ায়, হাসান সেখানে এখনো ঠিকভাবে দাঁড়াতেও শেখেনি। প্রথম মা হওয়া কুলসুম মাঝে মাঝে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে যায়, তারপর আবার শাশুড়ির কথা শুনে আশ্বস্ত হয়, “ওর বাবাও তো একটু দেরিতে হাঁটতে শিখসে।’ কিন্তু হাসান তো এখনো একটা কথাও বলে না। কুলসুম জোর করেই এলাকার শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে গেল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার বললেন, হাসান শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী- সেরেব্রাল পালসি তে আক্রান্ত।

জন্মের প্রথম ৫ বছর শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শিশু অতিক্রম করে বিকাশের মূল স্তর গুলো, যা ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি সোপান। কাজেই বাবা-মা বা শিশুর যতœকারী যদি এ সময়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে গুরুত্বের সাথে দেখেন, তাহলে যেমন শিশুর পূর্ণাঙ্গ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত হবে তেমনি, যে কোনো প্রতিবন্ধকতা নির্ণয় ও চিকিৎসা দান সহজ হবে।

শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী : ঝুঁকিপূর্ণ শিশু :

কিছু শিশুর প্রতিবন্ধী হবার ঝুঁকি অন্যান্য শিশু থেকে বেশি। যেমন-

ষ অপূর্ণ বয়সে জন্ম নেয়া শিশু
ষ অপুষ্ট শিশু
ষ যেসব শিশু জন্মের সময় সঙ্কটাপন্ন থাকে : যেমন দেরি করে কাঁদে, জন্মের প্রথম মাসে খিঁচুনি, ইনফেকশন (সেপসিস), মস্তিষ্কের প্রদাহ (মেনিনজাইটিস), জন্ডিস ইত্যাদি।
ষ শিশু পেটে থাকা অবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইনফেকশন, উচ্চ তাপমাত্রা ইত্যাদি
ষ পূর্ববর্তী শিশু প্রতিবন্ধী হলে

কিভাবে বুঝবেন শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা
ষ খুব সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখেই বোঝা যায় শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ
ষ শিশু যদি শব্দ শুনে চমকে না ওঠে, ঘুরে না তাকায়
ষ আলো বা উজ্জ্বল জিনিসে সংবেদনশীল না হয়
ষ যথাসময়ে কথা না বলে : এক বছর বয়সে কোনো শব্দ না করে, দেড় বছর বয়সে অর্থবোধক শব্দ উচ্চারণ না করে, ২ বছর বয়সে ২ শব্দের বাক্য গঠন না করে।
ষ যদি শিশু ৬ মাসে না বসে, আঠার মাসে হাঁটতে না শেখে।
ষ ৬ মাস বয়সে হাত বাড়িয়ে খেলনা না ধরে, ১ বছরে সূক্ষ্ম জিনিস যেমন মুড়ি ইত্যাদি আঙুল দিয়ে ধরতে না পারে।
ষ সমবয়সী শিশুদের সাথে না খেলে অথবা অস্বাভাবিক আচরণ করে।
ষ শিশুর খিঁচুনি হলে

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুরা ভবিষ্যতে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে :
ষ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা
ষ মানসিক প্রতিবন্ধকতা
ষ শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা
ষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা
ষ মৃগী রোগ
ষ অটিজম
ষ শিক্ষা প্রতিবন্ধকতা
ষ ব্যবহার জনিত সমস্যা

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের বিশেষায়িত চিকিৎসা :
প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে শিশু বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি শিশুর পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করে তার পরবর্তী চিকিৎসার পরিকল্পনা করবেন। সাধারণভাবে এই শিশুদের কে দেড় মাস (৪৫ দিন), ৩ মাস, ৬ মাস, ৯ মাস এবং ১ বছর বয়সে ফলোআপ করা হয়। এ সময় তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ যথাযথ হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়। আসার কথা এই যে, ঝুঁকিপূর্ণ অনেক শিশুই পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে যথাসময়ে ডাক্তারের ফলোআপে থাকা জরুরি; কারণ এর মাধ্যমে যেমন অনেক জটিল রোগ নির্ণয় করা যায় তেমনি অনেক প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার, কিছু জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে সমন্বিত ব্যবস্থা। এই সমন্বিত ব্যবস্থায় রয়েছেন চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, মনোবিজ্ঞানী, বিশেষ শিক্ষক এবং অন্যান্য। বর্তমানে যেসব হাসপাতালে এই সমন্বিত ব্যবস্থা আছে সেগুলো হলো-

ষ ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি।
ষ শিশু বিকাশ কেন্দ্র ( সরকারি মেডিক্যাল কলেজসমূহ )
ষ শিশু হাসপাতাল ঢাকা
ষ নিউরোসাইন্স ইনস্টিটিউট আগারগাঁও
ষ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
ষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
ষ সাহিক

সঠিক রোগ নির্ণয়, সময়োপযোগী চিকিৎসা, সমন্বিত পরিচর্যা, উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা বহুলাংশে কমাতে পারে। আবার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের যদি সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায় তবে তারা প্রতিবন্ধকতাবিহীন অথবা সামান্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কাজেই দেরি না করে প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, শিশু নিউরোলজি
ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us