উচ্চশিক্ষায় বাংলা বনাম ইংরেজি বিতর্ক

এম আর রাসেল | Feb 14, 2021 01:11 pm
উচ্চশিক্ষায় বাংলা বনাম ইংরেজি বিতর্ক

উচ্চশিক্ষায় বাংলা বনাম ইংরেজি বিতর্ক - ছবি সংগৃহীত

 

উচ্চশিক্ষার ভাষা বাংলা না ইংরেজি এ নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন, 'গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষীর সংখ্যা বিপুল, বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা কোনো অসম্ভব কাজ ছিল না।'

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও এ নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। তিনি তার শিক্ষার বাহন প্রবন্ধে লিখেছেন, 'আমরা নিজের ভাষার রসনা দিয়া খাই না; আমাদের কলে করিয়া খাওয়ানো হয়, তাতে আমাদের পেট ভর্তি করে, দেহপূর্তি করে না।’ তবুও প্রশ্ন থেকে যায় আদৌ কি বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব?

মাতৃভাষাই শিক্ষা অর্জন অবশ্যই সুখপাঠ্য। তবে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় ইংরেজি ছাড়া প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। ইংরেজি ভাষা জন- জীবনের মৃত্তিকা থেকে রস সংগ্রহ করে গ্রিক ও ফরাসি ভাষার সংস্পর্শে এসে ফুলে ফলে শোভিত হয়ে উঠেছে।

বাংলা ভাষা কিন্তু ফারসি, ফরাসি, আরবি, ওলন্দাজ, পতুর্গীজ ও ইংরেজি ভাষার আলো বাতাসে বেড়ে উঠলেও পরিপূর্ণ শক্তি অর্জন করতে পারেনি। শক্তিহীন বাহনে চড়ে আর যাই হোক গন্তব্যে পৌছানো সম্ভব নয়।

এক সময় ইংরেজি ভাষাও ছিল অবহেলিত। ব্রিটেন যখন ফরাসিদের দখলে চলে যায় তখন ইংরেজি ভাষাকে কতই না তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে। Ox হলো ইংরেজি শব্দ। কিন্তু এর থেকে যে খাদ্য তা হলো ফরাসি শব্দ Beef. আবার Sheep হলো ইংরেজি শব্দ কিন্ত Mutton হলো ফরাসি। আবার যে স্থানে খাদ্য প্রস্তুত হয় সেই রেস্তোরা শব্দটিও ফরাসি, এমনকি খাদ্য (food) শব্দটিও হলো ফরাসি।

বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠ অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্ত এই দুই বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ইংরেজদের উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র ছিল প্যারিস নগরী।

দ্বাদশ শতকে তর্কবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যাপকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে ১১৬৮ সালে অক্সফোর্ড, ১২০৯ সালে কেম্ব্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে ইংরেজি ভাষা বিশ্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

এই কর্তৃত্ব নিশ্চয় সহজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। গ্রিক, ফরাসি, আরবি প্রভৃতি ভাষার অমূল্য সম্পদগুলোকে নিজের ভাষায় রূপান্তরিত করতে হয়েছে। এত কিছুর পরই না আজ ইংরেজি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে। বাংলা ভাষায় এমনতর সমৃদ্ধ জ্ঞানের আকর খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

শুধু মাত্র কথার গ্রন্থিবন্ধনে বা আবেগের উদ্দীপনায় বাংলাকে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কল্পনা করে হয়ত আত্মতৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে, তবে কার্যসিদ্ধি লাভ সম্ভব বলে মনে হয় না। বাংলা তখনই উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে যখন এই ভাষা নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠবে। এর জন্য দরকার এক কার্যকর রোডম্যাপ। এ ভিন্ন অন্য কোনো পথ আছে বলে আমার মনে হয় না।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us