ইরাকি সাংবাদিক জায়েদির কথা

মো: বজলুর রশীদ | Feb 25, 2021 04:53 pm
ইরাকি সাংবাদিক জায়েদির জুতা নিক্ষেপ

ইরাকি সাংবাদিক জায়েদির জুতা নিক্ষেপ - ছবি সংগৃহীত

 

ইরাকি সাংবাদিক জায়েদি, যিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে পরপর দু’পাটি মোকাসিন জুতা ছুঁড়ে দিয়ে ইতিহাসে খ্যাত হয়েছেন তিনি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাাশিত এক নিবন্ধে বলেন, ‘আমি মুক্ত; কিন্তু আমার দেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ। বছরের পর বছর যুদ্ধে দশ লাখ ইরাকি বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। ইরাকে এখন পঞ্চশ লাখ অনাথ, দশ লাখ বিধবা, আরো অগণিত লাখ লাখ গৃহহীন। দেশের ভেতর ও বাইরে লাখো উদ্বাস্তু। এখন এটিই ইরাকের চিত্র। এর জন্য দখলদার বাহিনী দায়ী। তাদের আক্রমণ-নির্যাতন ভাইকে ভাই থেকে, পড়শীকে পড়শী থেকে পৃথক করেছে, গৃহগুলো পরিণত হয়েছে দাফনের স্থানে।

আমার দেশ নির্যাতিত। বাগদাদ জ্বলছে। হাজার হাজার দুদর্শাগ্রস্ত মানুষের ফটোগ্রাফ আমার মস্তিষ্কের কোষে অহরহ আঘাত করছে। আবু গারিবের কলঙ্ক, ফালুজ্জা হত্যাকাণ্ড; নাজাফ, হাদিজা, সদর সিটি, বসরা, দিয়ালা, মসুল প্রজ্বলিত হচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত ইরাক। অনেক জায়গায় ঘুরেছি দেশের মানুষের কষ্ট কত তীব্র তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। তাদের দুঃখের দহনে জ্বলেছি। সুযোগ যখন এলো তখন আর হাতছাড়া করলাম না। ক্রিমিনাল বুশকে যখন আমি জুতা মারলাম, তখন বুঝাতে চেয়েছিলাম যে- কী পরমাণ নির্জলা মিথ্যা সে বলে চলেছে, আমি চেয়েছি সেটি ওখানেই প্রত্যাখ্যাত হোক, প্রতিবাদ হোক। কোনো হিরো হওয়ার বাসনা আমার ছিল না, চিন্তাও করিনি।’

ইরাক শ্মশানে পরিণত হলো, ১৫ লাখ মানুষ নিহত হলো, পঙ্গু-বিকলাঙ্গ, উদ্বাস্তু ও অসুস্থরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে; কিন্তু এর জন্য কাউকে দোষী পাওয়া গেল না। আইসিসি, একমাস আগে গত ডিসেম্বরে ব্রিটিশ যুদ্ধাপরাধীদের তদন্ত করতে অস্বীকার করেছে এবং বুশ, ব্লেয়ার ও হাওয়ার্ড কেউ এখন নাকি বিচারের আওতায় নেই।

যুদ্ধের লোমহর্ষক বিভীষিকার মধ্যে প্রতিদিনি গড়ে আমেরিকার ২০ জন সেনা সদস্য বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা করেছে। এই সংখ্যা পুরো যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিহত সেনাসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। ফেরুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত ৪৫৭৫ জন মার্কিন এবং ১৮১ জন ব্রিটিশ সেনা নিহত হয়। আহত ৩২,২০০ জন। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা ব্ল্যাকওয়াটারের ৯১৭ জন কর্মকর্তাও নিহত হয়। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে যুবক সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যরা বেশি। এক গবেষণায় জানা গেছে যুবক সেনারা বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে এবং প্রেয়সী ও সন্তানদের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য তারা পাগলপারা হয়ে ওঠে। সোস্যাল মিডিয়াতে পরিবার পরিজনদের লাইবাশো ও ‘হাই হ্যালো’ তাদের অস্থির করে তোলে। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ না দেখতে পেয়ে ওরা আত্ম হননের পথ বেছে নেয়।

জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করায় প্রথম ভিকটিম হলো জাতিসঙ্ঘ সনদ। কেননা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জাতিসঙ্ঘই বিশ্ব শান্তি ও উন্নতির ভরসাস্থল। কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রকে ভয় ও আক্রমণ করা প্রতিহত করার মন্ত্র নিয়ে জাতিসঙ্ঘ উজ্জীবিত। ২০০২ সালের ‘বুশ ডকট্রিন’ সব মহলেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল প্রয়াত কফি আনান এই অভিযানকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। পশ্চিমাদের এই পদক্ষেপের কারণে এখন আক্রান্ত হচ্ছে মুসলিম প্রধান দেশ সিরিয়া, লিবিয়া, লেবানন ও ইয়েমেন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us