ডোনবাস : বাইডেন ও পুতিনের মধ্যে প্রথম রাউন্ড

বুরহানুদ্দিন দুরান | Apr 07, 2021 01:15 pm
বাইডেন ও পুতিন

বাইডেন ও পুতিন - ছবি সংগৃহীত

 

ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চলটি আবারো বৈশ্বিক আলোচনার শীর্ষে চলে এসেছে। গত ২৬ মার্চ রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে চার ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পরে মস্কো ও কিয়েভ বাকযুদ্ধ শুরু করার সাথে সাথে সেখানে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ হুমকি দেন যে 'ডনবাসে নতুন যুদ্ধ শুরু করার যেকোনো প্রচেষ্টা ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে পারে।' একথা সত্য যে ল্যাভরভ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে এই শব্দগুলোই উচ্চারণ করেছেন।

অতি সাম্প্রতিকে এই ঘটনাবলির পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তনি ব্লিংকেনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। উভয় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে পরবর্তী যোগাযোগের পরে, কিভ ঘোষণা করে যে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইউক্রেনীয়রা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সীমান্তবর্তী ন্যাটো মিত্রদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সতর্কবার্তার জবাব দেন এই বলেন যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিলে রাশিয়া তার নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

কিয়েভ যেমন মস্কোকে সামরিক মহড়ার ছদ্মবেশে একটি নতুন উস্কানিতে জড়িত করার অভিযোগ আনে, তেমনিভাবে সবার নজর ওয়াশিংটনের দিকেও রয়েছে। প্রশ্ন হলো, দেশটির নতুন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন কি ইউক্রেনের একটি সংঘাতের মধ্যে তার দেশকে টেনে আনবেন - যা ২০১৪ সালের এমন এক সংকট ছিল যেখানে তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার ব্যর্থ হয়েছিলেন?

প্রশ্ন সামনে এসছে, ডনবাস কি রাশিয়ার প্রতি বাইডেন প্রশাসনের নীতির প্রথম পরীক্ষা হবে? ২০১৪ সালে অসহায় অবস্থায় পড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবার কী নতুন কোনো ভূমিকা নিতে পারবে? পুতিন কি 'আমেরিকা ফিরে এসেছে' মর্মে বাইডেনের দাবিকে তাড়া করার চেষ্টা করছে?

'খুনির দাম দিতে হবে' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এখনও উত্তেজনা চলছে, যেহেতু বাইডেন পুতিনকে তার প্রথম বড় সাক্ষাত্কারে 'হত্যাকারী' বলেছেন এবং তাকে 'মূল্য পরিশোধে' বাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি রাশিয়ানদের ফোন কল ধরার অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতি সম্প্রতি, লাভরভ বলেন যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও এর সহযোগীদের সাথে মস্কোর সম্পর্ক 'গরম শেকলের নিচে' পড়েছে।

রাশিয়ানরা বলেছেন যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায়। তারা উল্লেখ করেছে যে মস্কোর পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সামরিক জোট গঠনের জন্য বেইজিংয়ের সাথে অংশীদার হওয়ার কোনো পরিকল্পনা
নেই। পুতিন তবুও বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি, এমনকি ট্রান্স-আটলান্টিক জোটকে শক্তিশালী করার বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করে দেখছেন। ২০১৪ সালের চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন আরো প্রভাবশালী হওয়ার মতো কোনো কিছু আশা করার কারণ নেই।

ওয়াশিংটন একাকী ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে জটিল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এই প্রশাসনের জন্য মুলতুবি থাকা এ বিষয়টি বিশ্বকে জানানোর প্রথম পয়েন্ট হবে যে বর্তমান প্রশাসন নিছক ওবামার তৃতীয় মেয়াদ কিনা। ক্রেমলিনের সাফল্য রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি দু'বার জর্জিয়া (২০০৮) ও ইউক্রেনে (২০১৪) পশ্চিমের সম্প্রসারণ সফলভাবে বন্ধ করেছিলেন এবং তিনি ওইসব দেশকে ন্যাটোতে যোগ দিতে বাধা দিয়েছিলেন। ইউক্রেনের রাশিয়ানপন্থী রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ২০১৪ সালে একটি জনপ্রিয় আন্দোলন, ইউরোমায়ডান দ্বারা পশ্চিমা সমর্থন দিয়ে বিদায় করা হয়েছিল। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

পুতিন রাশিয়ানপন্থী বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ক্রিমিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এই উন্নয়নের প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি ডনবাস অঞ্চলে যারা ডনেটস্ক ও লুহানস্কে স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন গঠন করেছিলেন ওইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীর সমর্থন করেন।

মিনস্ক দ্বিতীয় প্রোটোকল বা পরবর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতেও সেখানে সহিংসতার অবসান ঘটেনি। ওবামা প্রশাসনের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোও ইউক্রেন সম্পর্কে পুতিনের মন পরিবর্তন করেনি।

যদি কিছু হয়ে থাকে সেটি হলো রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ২০১৫ সালে সিরিয়ার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার প্রত্যাহারের ‘শক্তি শূন্যতার’ সুযোগ নেন এবং একইসাথে স্বল্প খরচে লিবিয়ায় একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

এখন বাশার আসাদের সরকারের সাথে একটি চুক্তির আওতায় মস্কো নিঃশব্দে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান করছে।

ইউক্রেনের পরিস্থিতি ইউক্রেন একটি বিভক্ত দেশ, পশ্চিম ও রাশিয়ার সংঘাতে আটকে রয়েছে এটি। মস্কোর সাথে সামরিক সংঘর্ষে দেশটির পিছু হটার সুযোগ নেই। তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউর সর্বাত্মক সামরিক সহায়তার ফলে, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনাকে সম্পূর্ণ নতুন স্তরে নিয়ে যাবে।

পশ্চিমা সরকারগুলোকে সম্পৃক্ত করার একমাত্র বিকল্প হলো কূটনীতি। অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া মিনস্ক দ্বিতীয় চুক্তি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা হতে পারে। পুতিন সম্ভবত বাইডেনকে ফোনে পাওয়ার জন্য একটি খেলা খেলছেন।

তুর্কি দৈনিক সাবাহ থেকে অনুবাদ মাসুম খলিলী


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us