ইউক্রেন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন!

নাহিদা ইয়াসমিন | Apr 18, 2021 07:19 pm
ইউক্রেন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন!

ইউক্রেন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন! - ছবি : সংগৃহীত

 

ইউক্রেনের পূর্ব অংশ ও ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে সংঘাত চলছে। ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে ৮০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। সেইসাথে জড়ো করা হয়েছে অসংখ্য ট্যাংক, সামরিক সরঞ্জাম।

তারপর থেকে, রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে পারে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার এই সামরিক উপস্থিতিতে ব্যাপক উদ্বিগ্ন ইউক্রেন। দুদেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায়, যুদ্ধের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

আসলে, ২০১৪ সালে, রাশিয়া ক্রিমিয়াকে জোর করে তার সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেই থেকে ডনবাসে বিতর্ক চলছে। ইউক্রেন বলেছে যে এই রাশিয়ানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধে ১৪,০০০ মানুষ মারা গেছে। ২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সহিংসতা এখানে থেকেই যায়। একইসময়ে, ২০২১ সালে, ২৪ সেনা প্রাণ হারিয়েছিল এবং এখন রাশিয়া মার্চের শুরু থেকেই সেনা মোতায়েন বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা যুদ্ধের ভয়কে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তির পেছনে রাশিয়ার যুক্তি হলো, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান বংশোদ্ভূত লোক বেশি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব মস্কোর।

রাশিয়ার এই পদক্ষেপে ইউরোপের পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। এই ঘটনাটি রাশিয়া, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকাও রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ইউক্রেন রাশিয়াকে দোষারোপ করছে যে রাশিয়া তার পূর্ব ও উত্তর সীমান্তে বিপুলসংখ্যক সেনা জড়ো করেছে। যদিও মস্কো ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে। এদিকে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে তার সেনা আনার খবরও প্রত্যাখ্যান করেছে।

যদিও ক্রেমলিন বলছে, তারা যুদ্ধ চায় না, তাহলে কেন এসব করা হচ্ছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, ‘কারোরই যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা নেই।’ কিন্তু প্রচ্ছন্ন হুমকি তিনি ঠিকই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘রাশিয়া সব সময়ই বলে আসছে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশ ভাষাভাষীদের ব্যাপারে তারা কখনোই উদাসীন থাকবে না।’

কেন বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে?

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয়, তবে এটি বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, রাশিয়া এবং আমেরিকা একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করে এবং ইউক্রেন আমেরিকার খুব কাছাকাছিতে অবস্থিত হওয়ায় রাশিয়া ইচ্ছে করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। রাশিয়া যদি ইউক্রেনের ক্ষতি করে, তবে ইউক্রেনকে আমেরিকা সমর্থন করবে এবং একইভাবে অন্যান্য দেশও এই লড়াইয়ে যোগ দেবে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক অস্ত্র বোঝাই একটি পণ্যবাহী জাহাজ ইউক্রেনে পৌঁছেছে। যার প্রতি রাশিয়া তীব্র আপত্তি তুলেছিল। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনে অর্থাৎ আমেরিকার খুব কাছে গিয়ে তার আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করছে।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও তুরস্কসহ অনেক দেশ ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত ইউক্রেনের পক্ষে প্রকাশ্যে মত দিয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া এ সমস্ত দেশগুলোর চাপকে প্রত্যাখ্যান করে, ইউক্রেন সীমান্তে অস্ত্র ও সেনা সংখ্যাও বাড়িয়েছে। এ কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা জোরদার হতে শুরু করেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে বিপুলসংখ্যক সেনা,অস্ত্র মোতায়েন করার কারণে ইউরোপজুড়ে উচ্চ সতর্কতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি আলোচনার সময় শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন যে, রাশিয়ার উচিত ইউক্রেনের সীমান্তে মোতায়েন হওয়া সেনা প্রত্যাহার করা। এরপরে পুতিন অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে বলেছিলেন যে পরিস্থিতি আরো খারাপ করার জন্য ইউক্রেন প্রতিকূল পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভোরোনেজ। এটি ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে শহরটিতে বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র রুশ সেনা জড়ো হতে দেখা গেছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমের ক্রাসনদর অঞ্চলে ট্যাংক ও সামরিক রেলগাড়ির বহরের দেখা মিলেছে।

এর বাইরেও স্থানীয় স্তরে ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ারও বিপুল সমর্থন রয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ইউক্রেনের এই অঞ্চলগুলোতে বিদ্রোহকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর রোমানেস্কো বলেছেন, 'ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোতে ছোট আকারের যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মানে এই নয় যে যুদ্ধটি আগামীকালই শুরু হবে। এটার অর্থ হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিস্থিতি তিনি (পুতিন) তৈরি করছেন।'

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us