মহানবী সা.কে ৩টি প্রশ্ন

মুহাম্মদ মিযানুর রহমান | Jun 08, 2021 03:03 pm
মদিনা শরিফ

মদিনা শরিফ - ছবি সংগৃহীত

 


হজরত ইবনে মারদাওয়াইহ র: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা: থেকে বর্ণনা করেছেন- ‘যে ঘরে এই সূরা কোনো রাতে তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘরে সে রাতে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।’
হজরত কাতাদা রা: থেকে বর্ণিত- সূরা কাহফ মক্কায় নাজিল হয়েছে। আর এ সূরা সম্পর্কে নবী করিম সা: ইরশাদ করেছেন- ‘আমি কি সেই সূরা সম্পর্কে তোমাদেরকে বলব না যা নাজিল হওয়ার সময় ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতরণ করেছিলেন? তা হলো সূরা কাহফ।

আরো বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি সূরা কাহফ লিখে একটি বোতলে সংরক্ষণ করে নিজ ঘরে রাখবে, সে কারো মুখাপেক্ষী হবে না এবং ঋণগ্রস্তও হবে না। আর তার পরিবারকে কেউ কষ্ট দিতে পারবে না। (তাফসিরে জালালাইন, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮)

সূরা কাহফের তিলাওয়াত মাধ্যমে অর্জিত হয় ব্যাপক শিক্ষা। সূরা নাজিল হওয়ার শানে নুজুলটাও বেশ দারুণ। এই সূরার বিষয়বস্তু হলো আসহাবে কাহফ, মুসা, খিজির ও জুলকারনাইন সম্পর্কে। কাফেরদের করা প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল নবী করিম সা:-এর নবুয়াত ও রিসালাতকে অস্বীকার করা। তাই এ সূরার শুরুতে পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, পবিত্র কুরআন নবী করিম সা:-এর নবুয়াত ও রিসালাতের সর্বশ্রেষ্ঠ দলিল। এরপর আসহাবে কাহফের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আসহাবে কাহফের ঘটনা দ্বারা মানবজাতির পুনরুত্থানের কথা প্রমাণ করা উদ্দেশ্য ছিল। তাই আসহাবে কাহফের বর্ণনার পর দুনিয়ার অস্তিত্ব এবং আখিরাতের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। আরো রয়েছে বিশেষ তিন ঘটনা।

এক. ওইসব যুবকের ঘটনা, যারা ঈমান আকিদা রক্ষা করার জন্য নিজেদের ওপর কোরবানি করে নিজেদের আবাস ছেড়ে কোনো পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে কাটানোর পর আল্লাহ তায়ালা তাদের আবার জাগ্রত করেন।

দুই. হজরত মুসা ও খিজির আলাইহিস সালামের মাঝে সঙ্ঘটিত ঘটনা।

তিন. বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা যিনি সারা বিশ্বের বাদশাহ ছিলেন এবং সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেন। এ ঘটনাগুলোর জন্য ওই সূরাটি যেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি অনেক ফজিলতপূর্ণ।

হজরত ইবনে জারির ইকরিমা সূত্রে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা:-এর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, কুরাইশ গোত্রের লোকেরা নজর ইবনে হারেস ও ওকবা ইবনে আবু মুঈত নামক দুই ব্যক্তিকে এই নির্দেশ দিয়ে মদিনায় পাঠায় যে, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অবস্থা মদিনার ইহুদি ধর্মযাজকদের কাছে বর্ণনা করো এবং তাদের কাছে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। কারণ তাদের কাছে জ্ঞানের যে ভাণ্ডার রয়েছে আমাদের কাছে তা নেই। আর তারা তাঁর ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দেয় তা আমাদেরকে জানাও। এরপর উভয় দূত যথাসময়ে মদিনায় পৌঁছে ইহুদি ধর্মযাজকদের সাথে সাক্ষাৎ করে নবী সা:-এর অবস্থা তাদের কাছে বর্ণনা করে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তখন ইহুদি ধর্মযাজকরা বলল- তোমরা তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করো। যদি তিনি এ তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি অবশ্যই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আর যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি দিতে না পারেন, তাহলে জেনে রাখো, তিনি সত্য নবী নন।

প্রশ্ন তিনটি নিম্নরূপ-

১. সেই যুবকরা কারা ছিলেন, যারা আগে বিদায় নিয়েছেন এবং যাদের ঘটনা সারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিস্ময়কর? আর সেই ঘটনাগুলো কী?

২. সে ব্যক্তি কে, যিনি সারা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং তাঁর ঘটনাবলি কী?
৩. রুহের তাৎপর্য কী?

কুরাইশদের প্রেরিত দুই ব্যক্তি মক্কায় ফিরে এসে কুরাইশদেরকে তাদের ভ্রমণের ফলাফল জানিয়ে দেয়। এরপর তারা রাসূল সা:কে এই তিনটি প্রশ্ন করে। উত্তরে রাসূল সা: বললেন ‘আমি আগামীকাল বলব’। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লাহ বললেন না। তাই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে ১৫ দিন বিলম্ব হয়। এর মাঝে হজরত জিবরাইল আ: ও আসেননি এবং আল্লাহ তায়ালা কোনো ওহিও পাঠাননি। তখন নবী করিম সা: অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েন। আর এদিকে দুর্বৃত্ত কাফেররা ভিত্তিহীন-বানোয়াট কথাবার্তা ছড়াতে শুরু করে। অবশেষে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল আ: সূরা কাহফ নিয়ে অবতরণ করেন। এই সূরায় প্রথম দু’টি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। রূহ সম্পর্কীয় প্রশ্নের উত্তর সূরা বনি ইসরাইলে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১৬৮)

সূরা কাহফ আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী- নবীজী সা: প্রতি জুমার দিন এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। এর রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন উপকারিতা। হজরত আবু সাইদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তাকে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়টাতে নূর দান করা হবে।’ (সহিহ আল-জামে, হাদিস নং-৬৪৭০)


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us