বাবাভাঙা সম্পর্কে এসব তথ্য জানেন কি?

মীযানুল করীম | Jun 19, 2021 05:21 pm
বাবাভাঙা

বাবাভাঙা - ছবি সংগৃহীত

 

বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য এলাকার রুপিটি নামের জায়গার বাসিন্দা ছিলেন বাবাভাঙা। তার যেসব কথা সত্য হয়নি, তার কিছু উল্লেখ করা হলো। বাবাভাঙা বলেছিলেন, ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনলে যে দুই দেশ খেলবে, তাদের নামের আদ্যাক্ষর হবে ‘বি’, অর্থাৎ নামের প্রথম ধ্বনিটি হবে ‘ব’ বোধক। এ ক্ষেত্রে একটি দেশের নাম ‘ব্রাজিল’ হলেও অন্যটির নামে পয়লা বর্ণ ‘বি’ ছিল না। বরং তাঁর দেশ ‘বুলগেরিয়া’ সেমিফাইনালেই হেরে যায় যদিও এর নামের শুরুতেই ‘ব’ ধ্বনি রয়েছে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্য হয়নি।

একটি পত্রিকা সমালোচনা করে লিখেছে, বলা হয়ে থাকে- বাবাভাঙার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর ৮০ শতাংশই পুরো মিলে গেছে। কিন্তু এ দাবিটির কোনো ভিত্তি নেই। এটি সত্য, তিনি বেশ চমৎকার কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যেগুলো সত্য হয়েছে। তবে এর প্রায় ৮০ শতাংশই মিলে যাওয়ার দাবি ঠিক নয়। এই প্রচারণা পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক ও একপক্ষীয় ব্যাপার। অন্ধ ভক্তরা এ তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন নতুবা বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব তথ্য সত্য বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ বাবাভাঙার যেসব কথা ফলেনি, সেগুলো একদমই মুখে আনা হয় না। সংশ্লিষ্ট অনলাইন ভিডিও বা পোর্টালের বেশির ভাগই একপেশে ও অতিরঞ্জিত।’ বাবাভাঙা ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ কিভাবে করতেন- এ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। তিনি নিজে দাবি করেছেন, ভিন্ন গ্রহের প্রাণী বা এ ধরনের সত্তা ভবিষ্যৎ দেখা কিংবা অতীন্দ্রিয় কিছু বোঝার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করে থাকে। বাস্তবতা হলো তিনি এত বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেন যে, উত্তর ইউরোপের বাল্টিক সাগর তীরবর্তী এলাকাসহ বিশ্বের বহু জায়গার মানুষ তাঁর কাছে আসতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি। বুলগেরিয়ার ‘জার’ কেবল নন, অধুনাবিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়ার পূর্বসূরি) এককালীন প্রধান কমিউনিস্ট শাসক লিওনিদ ব্রেশনেভ পর্যন্ত বাবাভাঙার সাথে দেখা করতে গেছেন। তাঁর প্রভাব কত বেশি ছিল, তার প্রমাণ এটি। স্বদেশের রাজ পরিবারের সাথে বাবাভাঙার সুস্পর্ক ছিল। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ায় ‘সমাজতন্ত্র’ কায়েম করে বস্তুবাদী কমিউনিস্টরা অদৃষ্টবাদী এই রহস্যময় মহিলাকে তাদের পরামর্শদাত্রী বানিয়েছিলেন। বলা হয়, বাবাভাঙার কথিত ক্ষমতা কাজে লাগানোর এ উদ্যোগ ছিল বামপন্থীদের কৌশলগত এবং এ কারণে তার খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। প্রশ্ন জাগে, তিনি কি অলৌকিক শক্তিধর ছিলেন, নাকি কমিউনিস্টদের হাতের পুতুল? যা হোক, আজো বিশ্বের কৌতূহলী মানুষের কাছে তিনি আলোচনার একটি প্রধান বিষয়।

বাবাভাঙা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি তদানীন্তন তুর্কি উসমানীয় (অটোম্যান) সাম্রাজ্যের মেসিডোনিয়ার স্ট্রোমিকা নামক স্থানে। এটি প্রথম বলকান যুদ্ধকালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বুলগেরিয়ার। বাবাভাঙার ‘স্বাস্থ্য জটিলতা’ ছিল শৈশব থেকেই। জানা গেছে, জন্মের পর দীর্ঘ সময় তার কোনো সাড়া ছিল না। তখন প্রথা ছিল, ‘মৃত’ শিশুর নাম রাখা হতো না। যাক, পরে ভেঞ্জেলিয়ার (বাবাভাঙা) কান্না শুনে তাঁর ধাত্রী রাস্তায় এসে (রীতি অনুসারে) অপরিচিত লোককে অনুরোধ জানান এ শিশুর নাম রাখতে। লোকটি নাম রাখেন ‘অ্যান্ড্রোমাহা’। তবে গ্রিক নামের সাথে বেশি মিলে যাওয়ায় তা গৃহীত হয়নি। আরেক অপরিচিত আগন্তুক ভেঞ্জেলিয়া নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এ নামটির গ্রিক নামের সাথে মিলে যায়। তবে ‘বুলগেরীয় ভাব’ থাকায় তা গ্রহণ করা হয়। তার নীল চোখ ও সোনালি চুল ছিল আকর্ষণীয়। মেয়েটির বাবা ছিল মেসিডোনিয়ার বিপ্লবী। তিনি বুলগেরিয়ার সৈন্য ছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধে। ভেঞ্জেলিয়ার মা তার শিশুকালে মারা যাওয়ায় বাবা আবার বিয়ে করেন। তাই সৎ মায়ের কাছেই তাঁকে বড় হতে হয়।

কথিত আছে, ১২ বছর বয়সে এক দিন ভেঞ্জেলিয়া বন্ধুদের নিয়ে খেলার সময়ে প্রচণ্ড ঝড়ে তিনি অনেক দূর উড়ে যান। কয়েক দিন পরে তাকে পাওয়া গেলেও দুই চোখের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। অক্ষিকোটরে ধুলাময়লা ঢুকে শক্ত হয়ে গিয়েছিল। দরিদ্র পরিবার তার চিকিৎসা করাতে না পারায় তিনি অন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হলেন। তখন তার অদ্ভূত ক্ষমতার সূচনা। অন্ধ হওয়ার পর তিনি দাবি করলেন, ঝড় উড়িয়ে নিয়ে তাকে দিব্যদৃষ্টি দিয়ে গেছে; যদিও বাহ্যিকভাবে তিনি দৃষ্টিশক্তিবিহীন। তাঁর নাকি ছিল শুধু স্পর্শের দ্বারা সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা। তিনি বিদ্যালয়ে ৩ বছর ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ গ্রহণ করেন। সেখানে শিক্ষা নেন পিয়ানো বাদন, রান্না, বুনন ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও। তখন তিনি সৎমাকে হারিয়েছিলেন। তিনি ৫০৭৯ সাল পর্যন্ত ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us