ফেসবুকে খবর পোস্ট করে তছনছ ফয়সালের জীবন

ফরিদপুর সংবাদদাতা | Jun 27, 2021 02:11 pm
ফয়সাল হোসেন শাওন

ফয়সাল হোসেন শাওন - ছবি সংগৃহীত

 

চরভদ্রাসনের সাবেক উপজেলা পরিষদের দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেনের জ্যেষ্ঠ সন্তান ফয়সাল হোসেন শাওন নিজেও রাজনীতির সাথে জড়িত। উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তিনি। বাতিল হয়ে যাওয়া চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থীও হয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা একটি আলোচিত মামলার আসামি হওয়ার পর তার স্বাভাবিক জীবনযাপন মাত্র আড়াই মাসেই তছনছ হয়ে গেছে। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য- সবই এখন ধ্বংসের পথে। তার দাবি, যেই ঘটনার সূত্র ধরে দায়েরকৃত মামলায় তিনি আসামি, তার সাথে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা ছিল না তার। তিনি শুধু অনলাইন পত্রিকায় ওই ঘটনার উপর প্রকাশিত একটি খবরের তথ্য বিবরণী সূত্র উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। আর এজন্য সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে এমন একটি আলোচিত ঘটনার একটি মামলার আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় লকডাউনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর জের ধরে থানায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার মধ্যে ৬ নম্বর মামলার ৪৮তম আসামি এই ফয়সাল হোসেন শাওন।

ফয়সাল জানান, ঘটনার রাতে তিনি চরভদ্রাসনের বাড়িতে ছিলেন। ফেসবুকে একটি অনলাইন পত্রিকায় সালথার ওই ঘটনার খবর দেখতে পেয়ে তিনি খবরটি সেখান থেকে কপি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। খবরের সূত্রও সেখানে উল্লেখ করেন।

এরপর ওই রাতেই প্রায় দুটার দিকে সালথার একজন সরকারি কর্মকর্তা তাকে ফেসবুকে ওই পোস্ট দেয়ার ব্যাপারে জানতে চায় এবং তার বিরুদ্ধে ওই সাংবাদিককে এসব তথ্য দেয়ার অভিযোগও আনেন। তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান। ফয়সাল জানান, এতে তিনি ঘাবড়ে যান এবং ফেসবুক হতে পোস্টটি তখনই ডিলিট করে দেন। এর পরের দিন তার পরিচিত আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা তাকে ফোন করে এব্যাপারে জানতে চান। এর দু'দিন পরে সালথা থানার একজন এসআই ফোন করে তাকে জানান যে ওই রাতের ঘটনায় দায়েরকৃত সর্বশেষ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, সালথা উপজেলা ভূমি অফিসের নৈশ প্রহরী সমীর বিশ্বাস ওই রাতে ভূমি অফিসে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৪৮ জনের নামোল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৩/৪ হাজার জনের বিরুদ্ধে যেই মামলাটি করেন তার ৪৮ নং আসামি হিসেবে ফয়সাল হাসান শাওনের নাম রয়েছে।

ফয়সাল বলেন, ওই রাতে যে আমি সালথা নয় বরং চরভদ্রাসনে ছিলাম সেটি আমার ফেসবুক পোস্ট কিংবা মোবাইল লোকেশন পরীক্ষা করলেই বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া মামলায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী এবং সমমনা স্থানীয় বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা নারায়ে তাকবির ও সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়। ফয়সাল বলেন, অথচ তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এমনকি নিজেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

তিনি বলেন, পুলিশের জেলা উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে নিরীহদের হয়রানি করা হবে না কিন্তু পুলিশ তার সন্ধানে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে কয়েক দিন আগেও অভিযান চালিয়েছে। তিনি বাড়িতে থাকতে পারছেন না। নিজেকে আত্মগোপনে রাখায় ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে। এই মামলার মিথ্যা আসামি হওয়ার কারণে তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। তার বয়োবৃদ্ধ পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। এই মুহূর্তে তিনি অসুস্থ পিতার পাশেও থাকতে পারছেন না। চাইলেই কি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁর জীবন শেষ করে দেয়া যায়? তার প্রশ্ন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ। এখনো তদন্ত চলছে। চার্জশিট কবে নাগাদ দিতে পারবো বলতে পারছি না। তবে একটু দেরি হবে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান অবশ্য ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপর এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কারো সন্দেহ হলে এজাহারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে কেউ৷ তবে তিনি আসলেই জড়িত কিনা সেটি তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।

গত ৫ এপ্রিল সন্ধায় একজন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালথার ফুকরা বাজারে লকডাউন কার্যকারের অভিযানে গেলে স্থানীয় জনতার প্রতিরোধে পড়েন। পরে এনিয়ে থানা ও সরকারি অফিসগুলোতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয়। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে দু'জন মারা যান। এসব ঘটনায় কয়েকজনের নামোল্লেখসহ তিন হতে চার হাজার জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১২০ জনেরও বেশি এসব মামলায় গ্রেফতার হন। এদের মধ্যে একজন রিমান্ডে থাকাবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে পুলিশ জানায়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us