সুন্দরী ম্যাডাম

নীলা আহমেদ | Nov 06, 2021 02:46 pm
সুন্দরী ম্যাডাম

সুন্দরী ম্যাডাম - ছবি : অন্য এক দিগন্ত

 

ঢং ঢং করে বেজে ওঠে দেয়াল ঘড়ির ঘণ্টা। ঘড়ির কাঁটায় নির্লিপ্ত শব্দে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে ‘সাবিহা’। ভোর ৫টা বেজে ১০ মিনিট। তাড়াতাড়ি না উঠলে যে নতুন কর্মস্থলে যেতে দেরি হয়ে যাবে। চোখেমুখে যেন ভয় আর আনন্দ একসাথে খেলা করছে। কোলাহলপূর্ণ ছোট একটি শহরে শ্বশুরবাড়িতে থাকে সাবিহা।

বাপের বাড়ি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। সবুজ গাছগাছালি, সোনালি ফসলে ঘেরা পিউর অক্সিজেন আর পাখির গানে মুখর সুবর্ণগ্রাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের আদরের ছোট্ট মেয়ে সাবিহা। গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে ছোট একটি নদী। দলবেঁধে নদীতে সাঁতার কাটা আর বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর মধুর স্মৃতিজুড়ে আছে সাবিহার শৈশবের সুবর্ণগ্রাম। তাড়াতাড়ি রান্না করে দু’মুঠো মুখে পুরে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়ল নতুন জীবনের সন্ধানে।

সবার মতো তার বুকেও বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। হঠাৎ করে বাবার অসুস্থতায় আনাড়ি বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল সাবিহার। তাই জীবনের অপূর্ণ চাওয়াগুলো অপূর্ণই রয়ে গেল। লেখাপড়া চলাকালীন বিয়ে হলো ৫৯ বছর বয়স্ক আসলাম মিয়ার সাথে। দুটো স্ত্রী গত হওয়ায় সাবিহা ছিল তিন নম্বর স্ত্রী। অবস্থাপন্ন ঘর দেখে টানাটানির সংসারে থেকেই বাধ্য হয়ে বিয়ে দিলো বড় ভাই বেকার সিহাব উদ্দিন। পোড়া কপালে বুঝি এবার সুখের ছোঁয়া লাগল। ইন্টারভিউ দিতেই চাকরিতে টিকে গেল সাবিহা। স্বামী আর পরিবারের খুশি ধরে না। বিনে পয়সায় মেধা দিয়ে আর যোগ্যতা দিয়ে কয়জনের চাকরি হয়। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার অদূরে কাঁচা সড়কের পাশেই ছিল সাবিহার নতুন কর্মস্থল তথা প্রাথমিক বিদ্যালয়। শহর থেকে দুটো গাড়ি বদল করে স্থানীয় গ্রাম্য বাজারে নেমে আট কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতে হতো। পথিমধ্যে কোনো যানবাহন ছিল না। যখন বর্ষাকালে মুষলধারে বৃষ্টি হতো ছাতায় বাঁধ মানত না। বৃষ্টিরজল আর চোখের জলে ভিজে একাকার হতো সাবিহার সুন্দর শরীর। সহকর্মীদের বাসা থেকে ড্রেস চেয়ে এনে সেটা আবার আসার সময় পাল্টে বাসায় আসতে হতো।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরত। গৃহস্থালির কাজ আর চাকরি সামলাতে গিয়ে ঘাম মোছার ফুরসত পেত না, স্কুলে আসতে যেতে স্থানীয় বাজারে যেদিন হাট বসত সেদিন সাবিহার কষ্টের সীমা থাকত না। একদিকে গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষা অন্য দিকে হাঁস, মুরগি, কবুতার, ছাগল আর মানুষে ভর্তি থাকত টেম্পোগুলো। পা রাখা আর বাসায় জায়গা খুবই কষ্টকর ছিল। বেশির ভাগ সময়ই অল্পের জন্য টেম্পো মিস হলে অনেক সময় পরের গাড়ি ছাড়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।

সাবিহার অনেক স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের শিক্ষক হওয়ার। ছাত্রছাত্রীরা তার মুখে বিখ্যাত কবি সাহিত্যেকদের জীবনকাহিনী শুনবে ও মহৎ জীবনের অধিকারী হওয়ার নির্দেশনা অর্জন করতে পারবে। হতে পারল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ছিপছিপে গড়নের সুন্দর গড়ন ছিল সাবিহার। কলেজে থাকতে সহপাঠীরা তাকে হিন্দি সিনেমার নায়িকা আখ্যা দিয়েছে। চোখ দুটো মায়ায় ছলছল করত, বাচনভঙ্গি ছিল ভারি মিষ্টি আর কোমল। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাকে ‘ভালো আপা’ বলে ডাকত। এত সুন্দর তরুণী সহকর্মী দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারলেন না হেডটিচার শুকুর আলী। প্রথম যেদিন যোগদান করতে গেল- শুকুর আলী ভাবলেন সাবিহার সাথের লোকটি তার কাকা বা মামা কেউ হবেন। পরে জানতে পারলেন লোকটি তার স্বামী; কিন্তু মানতে কষ্ট হলো।

সাবিহা খুব বুদ্ধিমতী ছিল। সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব পালনে তৎপর ছিল। ইন্টারভিউর রেজাল্ট আউট হওয়ায় পর সাবিহা এ চাকরিতে আসতে চায়নি কিন্তু স্বামীর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বাধ্য হয়েই চাকরিতে যোগদান করে। তাছাড়া চাকরির বেতন থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে পড়াশোনার খরচ ও চালাতে পারবে ভেবে নিজের দায়িত্বগুলো সচেতনতার সাথে পালন করে। সবার আগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে স্কুলে চলে আসে, পতাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজগুলো ও কমপ্লিট করে। হেডটিচার সাবিহাকে ইয়াং এনার্জেটিক ম্যাডাম বলে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি ক্লাসগুলো করাতেন। লাইব্রেরিতে এলে তার সাথে খোশগল্প জুড়ে দিতেন। এভাবেই কেটে গেল কয়ক মাস। এভাবেই বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে সাবিহার জীবনের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য উদঘাটন করতে সমর্থ্য হলেন। সাবিহা প্রতিনিয়ত স্বামী সংসারে কিভাবে মানসিক টর্চারের শিকার হচ্ছে সে খবরও জানলেন শুকুর আলী। খুব আফসোস ও অনুশোচনা প্রকাশ করলেন। সাবিহার প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি দিনে দিনে গাঢ় হতে লাগল।

একদিন ক্লাসের ফাঁকে বাচ্চাদের আনন্দ দেবার জন্য ছড়া গান শোনাচ্ছেন সাবিহা। সুরেলা কণ্ঠের মূর্ছনায় পেছন থেকে হাততালি দিতে দিতে ক্লাসে ঢুকলেন হেডস্যার। সাবিহা লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। স্যার তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বললেন- এমন কোকিলা কণ্ঠী গায়িকা কোনো দিন দেখিনি। কী সৌভাগ্য আমার ! আপনার তো আরো আগেই আমার স্কুলে আসা উচিত ছিল। এমন ভালোমানুষের মুখোশ পরেছিলেন শুকুর আলী। সাবিহা কেন কোনো নারীর পক্ষেই তা বোঝা অসম্ভব ছিল। হেড মাস্টার ছিল খুব ধুরন্ধার লোক, ভয়ঙ্কর অভিনেতা হিসেবেও খ্যাতি ছিল তার। উপজেলার বিভিন্ন সুন্দরী তরুণীদের চাকরির নাম করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত, বোনাস হিসেবে লুটে নিত তাদের মূল্যবান যৌবন।

আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের অন্তরের মানুষে পরিণত হতো। যেন তিনি ছাড়া ওই মেয়ের জীবনে আর কারো কোনো মূল্য নেই। মেয়েদের অভিনয় করে প্রেমের ফাঁদে আটকে ফেলত। স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দিত। সরল মেয়েদের এমনভাবে ব্লাকমেইল করত যে তারা ভয়ে কিছুই বলতে পারত না। কত মেয়ের সংসার ভেঙেছে তার হিসাব নেই। চাকরি হলে তো ভালোই- না হলে আম ছালা দু-ই চলে যেত।
প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে কন্ট্রোল করে উপবৃত্তির নাম করে অভিভাবকদের ঘাম ঝরানো টাকা আত্মসাৎ করত। নতুন চাকরি বলে সাবিহা এসবের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝত না। কিন্তু খারাপ লাগত তার কাছে। সাবিহার অফিসিয়াল সব কাজ করে দিতেন তিনি। বলতেন- ম্যাডাম, ফাইল নিয়ে অফিসের বারান্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে দিন আমিই সব করে দেবো। স্কুলের অন্য সহকর্মীদের চেয়ে সাবিহাকে ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন দক্ষ ও দায়িত্বশীল শিক্ষক বলে। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সবসময়। সাবিহা তাকে অগাধ বিশ্বাস করত। সহকর্মীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে সাবিহার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকে। সে প্রাণ খুলে মিশতে চাইলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিত। তাই বাধ্য হয়েই ক্লাস বিরতিতে হেডস্যারের মিথ্যে গল্পগুলো শুনতে হতো। এক দিন দুপুর বেলা সাবিহা লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে ক্লাসে যেতে উদ্যত হলে একা পেয়ে হেডস্যার তার হাত ধরে ফেলে। লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ‘এমন ফুটন্ত গোলাপ অযত্নে ঝরে পড়ছে’ আহ্ ! বড্ড আফসোস হয়, বুকে ব্যথা লাগে। এমন সুন্দর সোনার জীবন অঙ্গার হয়ে গেল আইবুড়ো লোকের হাতে পড়ে।

সাবিহা তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে চলে গেল ক্লাসে। ভয়ে তার সারা শরীর কাঁপছে। এ কী যমদূত আসল তার জীবনে! যেন তার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগল। এই ভয়ঙ্কর লোকটাকে এতদিন সে ফেরেশতার মতো বিশ্বাস করে মনের সুখ দুঃখের দু’চারটা কথা শেয়ার করেছে? আজ তার রূপ? নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে সে। কর্মক্লান্ত দিন শেষে নারীঘরে ফেরে একটু প্রচ্ছন্ন শান্তির আশায়। সেখানেও কাজকর্ম আর টাকা পয়সা নিয়ে নিরন্তর অশান্তি লেগেই আছে। সারা দিন না খেয়ে পড়ে থাকলেও জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই, বেতন আর সব ব্যালেন্স ঢোকে স্বামীর পকেটে। যাতায়াতে খরচটাও ভিখারির মতো চেয়ে নিতে হয়। সাধ থাকলেও বাচ্চার জন্য ভালো পোশাক আর খেলনা কেনার টাকা তার থাকে না। মনে তার পুঞ্জীভূত বেদনা, সেলফে সাজানো বইয়েরা ডুকরে কাঁদে। সারা দিনের ব্যস্ততায় তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয় না। মাঝে মধ্যে দু’একটা বইয়ে মনোযোগ দিলেও কখন যে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ে খবর থাকে না। স্কুলে যাওয়ার আগ্রহটা কেমন যেন নষ্ট হতে থাকে। চাকরির প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা জাগে।

সাবিহা এখন আর লাইব্রেরিতে তেমন থাকে না। সারা দিন শিশুদের নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চায়। শুকুর আলী বিচক্ষণ লোক, বুঝতে পারে সাবিহা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সে ওঁৎ পেতে থাকে। এক দিন সহকর্মীদের দুজন ছুটিতে আর বাকিরা ক্লাসে। সাবিহা হাজিরা খাতা আনতে লাইব্রেরিতে ঢুকতেই একা পেয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুকুর আলী, সাথে সাথে হাতের সবশক্তি দিয়ে পাঁচটা আঙ্গুল বসিয়ে দেয় হেডমাস্টারের গালে। শুকুর আলী যেন চোখে সর্ষেফুল দেখে।

সে সাবিহার কঠিন শক্রতে পরিণত হয়। বানিয়ে বানিয়ে এলাকার লোকজনের কাছে সাবিহার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটায়। প্রতিদিন যে কোনো মিথ্যে অজুহাতে সবার সামনে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করে। সহকর্মীদের সামনে অযোগ্য শিক্ষক বলে ধিক্কার দেয়। অফিসিয়াল কাজের বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেয়। সাবিহা প্রতিবাদ করতে চাইলে এসিআর (বার্ষিক চারিত্রিক রিপোর্ট) না দেয়ার হুমকি দেয়। ছুটির দরখাস্ত লিখলে তা অনুমোদন না করে সাবিহাকে অনেকবার বিপদে ফেলে টাকা উসিল করে নেয়।

সাবিহা তার স্বামীকে অনেক বোঝায় তাকে অন্য স্কুলে বদলির জন্য। কিন্তু কেউ তার কথায় কর্ণপাত করে না। উল্টো বলে যে আমাদের যে টাকা দাও তাতে চলে না। তোমার এসব গুজব শোনার সময় আমার নেই। সাবিহা গোপনে বদলির জন্য শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ চান। সাবিহা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এক দিকে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকার লড়াই, অন্য দিকে এত টাকা? ইচ্ছে করছে চাকরি রিজাইন দিতে কিন্তু সমাজ আর পরিবারের কাছে কী জবাব দেবে? সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। শুকুর আলী হাল ছাড়ে না, দিনের পর দিন হুমকি দিতে থাকে যে সাবিহার সংস্পর্শ না পেতে তার হাত থেকে নিস্তার নেই।

সাবিহা ভাবে- এই যদি প্রতিষ্ঠান প্রধানের চরিত্র হয়, তবে সহকর্মীরা কী অসহায় হয়ে দিন কাটাবে? কবে সমাজের কর্মজীবী নারীরা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারবে? বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে অনেক আগেই। কিন্তু নারী সমাজের স্বাধীনতা এখনো অর্জিত হয়নি। কবে সমাজের কর্মজীবী নারীরা শুকুর আলীর মতো নৃশংস নরপশুর হাত থেকে রেহাই পাবে? কে তাদের অপ্রত্যাশিত ইভটিজিং থেকে নিরাপত্তা দেবে? হাজার প্রশ্নের ভিড়েও একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখে সাবিহার মতো অসহায় নারীরা।

একটি সুন্দর আর আদর্শবান প্রতিষ্ঠান প্রধান পাওয়া তাদের নৈতিক অধিকার। যে ভাই-বোন কিংবা বন্ধুর মতো কর্মজীবনে নীতি ও আদর্শের সঠিক মাইলস্টোন তৈরি করতে সহায়তা করবে। শেখাবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মহৎ আদর্শে উজ্জীবিত করে কিভাবে একটি সুন্দর জাতি গঠন করতে হয়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us