কৃষক বিদ্রোহে মোদির দর্পচূর্ণ

সমৃদ্ধ দত্ত | Nov 20, 2021 07:17 am
কৃষক বিদ্রোহে মোদির দর্পচূর্ণ

কৃষক বিদ্রোহে মোদির দর্পচূর্ণ - ছবি : সংগৃহীত

 

শুধুই পরাজয় নয়। দর্পচূর্ণ। তীব্রতম কৃষক আন্দোলন। আর তার জেরে সরকারের এমন পরাজয় স্বাধীনতার পর দেখেনি ভারত। দেশের ইতিহাসে তার চরমতম ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনেই হার স্বীকার করতে হলো নরেন্দ্র মোদিকে। এই মোদিকেই না তার দল, সরকার এবং অনুগামীরা ৭৫ বছরে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রীর তকমা দিয়ে থাকে! কিন্তু বছরখানেকের কৃষক বিদ্রোহই তথাকথিত শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রীকে পিছু হটতে বাধ্য করল। কৃষকদের সাথে স্নায়ুর লড়াইয়ে পরাভূত হলেন নরেন্দ্র মোদি। তিন কৃষি আইনকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে প্রেস্টিজের লড়াইয়ে পরিণত করেছিলেন তিনি। আর ওই তিনটি আইনই বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন মোদি নিজে।

শুক্রবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে, রীতিমতো নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চাইলেন। ঘোষণা করলেন, তিনটি কৃষি আইনই বাতিল করছে তার সরকার। কারণ, কৃষকদের জন্য ভালো কাজ করতে চেয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিন কৃষি আইন যে কৃষকদের স্বার্থই সুরক্ষিত করবে, এটা কৃষকদের একাংশকে তিনি বোঝাতে পারেননি। তাই বাতিলের সিদ্ধান্ত। এটাই গুরুপরবে তার উপহার।

কৃষকরা কিন্তু একে সাফাই হিসেবেই দেখছেন। তাদের বক্তব্য, এই জয় কারো উপহার নয়, সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করা। মোদি বলেছেন, ‘সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ওই তিন আইন বাতিল হবে। আজ এই শুভক্ষণে আন্দোলনরত কৃষকরা বাড়ি ফিরে যান।’ বিশ্বাস করেননি কৃষকরা। আর তাই, তাদের আন্দোলন মোদির এই টিভির ঘোষণার পরই বন্ধ হয়ে যায়নি। কৃষক সংগঠনের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, ‘সংসদে আগে আইন বাতিল হোক। তারপর সিদ্ধান্ত। শুধু মোদির মুখের কথায় ভরসা নেই। তিন কৃষি আইন নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ তো আছেই। উপরন্তু আইন করে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিতে হবে। আর একইভাবে বিদ্যুৎ বিল বাতিল করতে হবে। সেইসব ঘোষণার কী হলো?’ সুতরাং কৃষকরা এখনই জয়ের আনন্দে নরম হচ্ছেন না। বরং মোদি সরকারের গলার ফাঁস আরও শক্ত হচ্ছে।

এক বছর ধরে ঘর সংসার, পরিবার, জীবিকা, চাষবাস পিছনে ফেলে দিল্লি সীমানায় জমায়েত হয়েছেন কৃষকরা। বিদ্রোহ করেছেন তিন কালা কানুনের বিরুদ্ধে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ঝড়বৃষ্টি, শীত, গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে সরকারের চরম চাপ, পুলিসের লাঠি, মিথ্যা মামলা, বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মাঝেমধ্যেই কৃষকদের ওপর হামলা চালানোর প্রতিবন্ধকতা সহ্য করেছেন এই কৃষকরা। কিন্তু পিছু হটেননি। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জি প্রথম থেকে বার্তা দিয়েছেন পাশে থাকার। রাহুল গান্ধী থেকে তাবৎ বিরোধী- সকলেই কৃষকদের সুরে তিন কৃষি আইনের বাতিলের দাবি তুলেছেন। সংসদ থেকে সড়ক, উত্তাল হয়েছে রাজনীতি। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া‌ই এই আন্দোলন শেষদিন পর্যন্ত টিকে থেকেছে... সম্পূর্ণ কৃষক আন্দোলন হিসেবেই। কৃষক সংগঠনের দাবি, ৬৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এই এক বছরে। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে বিক্ষোভরত কৃষকদের জিপের চাকায় পিষে দেয়া হয়েছে। তবু দমানো যায়নি কৃষকদের। অবশেষে দল ও সরকারকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছেন মোদি।

কিন্তু হঠাৎ এত দিন পর কেন মোদির কেন মনে হলো কৃষকদের আন্দোলনকে সম্মান দিয়ে কৃষি আইন বাতিল করাই উচিত? এই প্রশ্ন নিয়ে ভারতজুড়ে জোরদার জল্পনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য কারণ একটাই- সেই আদি অকৃত্রিম ভোটের স্বার্থ। আগামী বছর সাত রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব নিয়ে বাড়তি চিন্তায় বিজেপি। কারণ, এই তিন রাজ্যের কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি যুক্ত আন্দোলনে। তিন রাজ্যেই কৃষক ইস্যুতে বিজেপি যে ব্যাকফুটে, সেই প্রমাণ বারংবার পাওয়া যাচ্ছে। কখনো স্থানীয় নির্বাচনে, কখনো জনমত সমীক্ষায়। সুতরাং ভোটে পরাজয় ঠেকাতে মোদি মরিয়া হয়ে অবশেষে কৃষকদের সামনে নত হলেন বলেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান।

প্রবল আন্দোলন ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর এনআরসি এখন ঠান্ডাঘরে। সিএএ আইন হয়ে গেলেও দু’বছর অতিক্রান্ত, রুলই তৈরি হয়নি। সুতরাং, সেই আইনও বিশ বাঁও পানিতে। এবার কৃষি আইন বাতিল। নির্যাস একটাই- প্রতিবাদের শক্তির সামনে পিছু হটে মোদি সরকার! শুক্রবার রাহুল গান্ধী একটি বাক্যে যেন নিখুঁতভাবে বোঝালেন এই পর্বকে- সত্যাগ্রহের কাছে পরাজয় অহঙ্কারের!

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us