আমেরিকা ও চীনের খুনসুটি

মীযানুল করীম | Dec 25, 2021 02:22 pm
আমেরিকা ও চীনের খুনসুটি

আমেরিকা ও চীনের খুনসুটি - ছবি : সংগ্রহ

 

বর্তমান দুনিয়ার দু’সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তি আমেরিকা ও চীন। অতীতে ছিল আমেরিকা ও রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যা ছিল চীনের মতো সমাজতান্ত্রিক)। এখনকার চীন শিগগিরই অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যেই চীন সামরিক ও অর্থনৈতিকসহ সার্বিকভাবে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। এর জের ধরে তাদের মাঝে দীর্ঘদিন চলছে বাণিজ্য-যুদ্ধ। দু’মহাশক্তির প্রতিযোগিতা এখন নানাভাবেই চরমে। তাদের দৃশ্যমান সহযোগিতার মধ্যেও থাকে একপ্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এবার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে দু’দেশের শীর্ষনেতার বাহ্যিক মতিগতি দেখে এবং তাদের কিছু কথা শুনে বিশ্ববাসী বিভ্রান্ত হতে পারে বৈকি। তবে আমেরিকা তার সামগ্রিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে আর মহাচীন বিশ্বে এক নম্বর স্থান দখলে মরিয়া বিভিন্নভাবে।
আমেরিকা-রাশিয়ার অতীত আমলে ছিল ঠাণ্ডা লড়াই বা স্নায়ুযুদ্ধ। ছিল আঁতাত বা ফধঃবহঃব যা বোঝাতো পারস্পরিক। সামরিক আক্রমণের অনুপস্থিতি। এটা আরেক বিশ্বযুদ্ধকে নিঃসন্দেহে বিলম্বিত করেছে।

এবার আমেরিকার নেতা জোসেফ বাইডেন এবং চৈনিক নেতা শি জিন পিংয়ের ভার্চুয়াল বৈঠক ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ১২ নভেম্বর মিডিয়ার খবর, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেন যুক্তরাষ্ট্র আর স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিভেদ সৃষ্টি না করে। অতীতে চীনের ক্ষুদ্র অংশ ছিল যে ফরমোজা দ্বীপ, সে তাইওয়ানকে আজো বেইজিং নিজের বলে দাবি করে থাকে। তা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে চীন এ সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছে আমেরিকার প্রতি। ১১ নভেম্বর শি জিন পিং আরো বলেন, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে একত্রে ভূমিকা রাখতে হবে মহামারী থেকে বাণিজ্য, সর্বত্র। কারণ এগুলো তাদের জন্য অভিন্ন চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্মেলন উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের ভার্চুয়াল সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলো স্নায়ুযুদ্ধকালীন সঙ্ঘাত-বিভাজনে ফিরতে পারে না এবং তা করা অনুচিত। চীন-আমেরিকা এবার গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্বের বায়ুতে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দুটি দেশ হিসেবে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় অভাবনীয় চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পরপরই প্রধান চীনা নেতা এ বক্তব্য দেন। তিনি সে চুক্তির উল্লেখ ছাড়াই বললেন, সবাই একসাথে টেকসই উন্নয়ন ও সবুজের দিকে যেতে পারি। সবাই মিলে সবুজ ভবিষ্যতের সূচনা করা যায়।

বাইডেনের মার্কিন প্রশাসন জলবায়ুকে চীনের সাথে সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্র বানাতে চায়। তখন কিন্তু চীনের এ অঞ্চলে তাইওয়ান নিয়ে উভয়ের উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ান দ্বীপের আশপাশে চীন এখন সামরিকভাবে তাই অত্যন্ত তৎপর। তাইওয়ান স্বশাসিত গণতান্ত্রিক হিসেবে অভিহিত। গত মাসে তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্ত করার এলাকায় চীনের এত বিমান দেখা গেছে এবার প্রথম। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রশাসন তাইওয়ানকে সামরিক সমর্থন দিয়েছে। তবে আমেরিকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ২৬ নভেম্বর নিউ ইয়র্কে তার দেশের সমঝোতা প্রকাশ করেছেন।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকর প্রেক্ষাপটেই বৈঠকে মিলিত হন জো বাইডেন আর শি জিনপিং। সেখানে শি বলেন, বাইডেন আমার পুরনো বন্ধু। তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাতীয় স্বার্থই মুখ্য- এ কথাটা সবারই সর্বদা মনে রাখতে হবে। শি জিনপিং বলেছেন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ, তা উত্তরণে পরস্পর যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে হোয়াইট হাউজ থেকে হাসিমুখে বাইডেন বলেছেন, মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক গোটা বিশ্বেই প্রভাব ফেলে। দোভাষীর মাধ্যমে শি বলেন, সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এবং জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আমাদের দু’রাষ্ট্রেরই আরো বাড়াতে হবে সহযোগিতা ও যোগাযোগ।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য, মানবাধিকার ও দক্ষিণচীন সাগর নিয়ে উভয়ের বিরোধ ও উত্তেজনার মাঝে এ শীর্ষ বৈঠকের ওপর নজর রেখেছে পুরো দুনিয়া। বাইডেন আমলে এটাই সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক দু’দেশের। ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় এ বৈঠকের শুরুর কিছুটা হোয়াইট হাউজে অল্প কয়েকজন সাংবাদিক দেখার সুযোগ পেলেও পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তাঁরা আর ছিলেন না। সেখানে শুধু শীর্ষ উপদেষ্টাগণের উপস্থিতি ছিল উভয়পক্ষে।

চীনের সরকারি বার্তাসংস্থা সিনহুয়া বলেছে, চীনা নেতা বৈঠকে দু’দেশের প্রাণবন্ত ও স্থিতিপূর্ণ সম্পর্কের ওপর জোর দেন। শি বলেন, পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সবার জন্য ফলপ্রসূ। সহযোগিতা এবং ঘরের সমস্যা থাকলেও আন্তর্জাতিক কর্তব্য আমাদের একত্রে সমাধা করা উচিত। তবে তিনি প্রতিপক্ষ আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাইওয়ানের কথিত স্বাধীনতা উসকে দেয়া মানে, আগুন নিয়ে খেলা। তাঁর ভাষায়, কিছু মার্কিনি চীনকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তাইওয়ানকে ব্যবহার করতে চায়। এটা বিপজ্জনক। আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়ে যায়।”

বিবিসি বলেছে, দু’দেশের প্রতিযোগিতাকে সঙ্ঘাত না বানাতে সাধারণ বিবেচনা থেকেই সীমানা থাকা দরকার বলে বাইডেন মনে করেন। ‘সব দেশকেই এ পথে একই নিয়ম মানতে হয়। আমি চীনের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক মর্যাদা যেন একতরফাভাবে বদলানো না হয়।” বৈঠকের পর হোয়াইট হাউজ বলেছে, বৈঠকে বাউডেন জিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকং-এ চীনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। তিনি তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিকে জোর সমর্থন জানান। অন্যদিকে, দু’নেতার কেউ আশা করেননি যে, এই বৈঠকে বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট চুক্তি করা হবে। তবে চীন পিছিয়ে রয়েছে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us