আবার ককেশাস উত্তপ্ত?

মীযানুল করীম | Dec 25, 2021 02:25 pm
আবার ককেশাস উত্তপ্ত?

আবার ককেশাস উত্তপ্ত? - ছবি : সংগ্রহ

 

এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের সীমানায় ককেশাস অঞ্চল। এখানে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান অবস্থিত। তারা সাধারণত ‘পাশ্চাত্যের অংশ’ বলে গণ্য। গত বছর এ দু’দেশের দেড়মাসব্যাপী যুদ্ধ শেষ হয়েছিল রুশ-তুর্কি মধ্যস্থতায় এবং ইরানের সমর্থনে। এরপর আবার তাদের সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

খ্রিষ্টান অধ্যুষিত আর্মেনিয়া রাষ্ট্রের দাবি, শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত আজারবাইজানি সৈন্যদের হামলায় তাদের কমপক্ষে ১৫ জন সেনার এবার মৃত্যু ঘটেছে। পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আর্মেনিয়ায় পূর্ব সীমানা বরাবর সংঘটিত এই সঙ্ঘাত আপাতত থামে। তারপর পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ থাকার খবর এলেও আর্মেনীয় ও আজেরি উভয় পক্ষই ‘উসকানিমূলক’ আক্রমণের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে। উল্লেখ্য ইরানের একটি প্রদেশের নাম পূর্ব আজারবাইজান (রাজধানী তাব্রিজ) এবং উভয়েই শিয়া মতাদর্শের অনুসারী হলেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক তেমন ঘনিষ্ঠ নয়। অপরদিকে, আর্মেনিয়া ও আজার বাইজান দু’রাষ্ট্রই গত নব্বই দশকের প্রথম পর্যন্ত বর্তমান রাশিয়ার পূর্বসূরি সমাজতন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত দু’টি কথিত রাজ্য ছিল, আসলে যাদের মর্যাদা সাধারণ প্রদেশের চেয়ে অধিক ছিল না। আজেরি নেতা গেইদার (হায়দার) আলিয়েভ সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতা ছিলেন। তবে তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী ইলথাম স্বাধীন আজারবাইজানের নেতা হলেও কমিউনিস্ট নন বরং ভিন্ন মতাবলম্বী।

প্রধানমন্ত্রী পালিনিয়ান শাসিত আর্মেনীয় সরকার বলেছে, মস্কোর মধ্যস্থতায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে (১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার) আজারবাইজানের সাথে সংঘর্ষ থেমেছে। আর্মেনিয়ার বহু সৈন্য মারা যাওয়ার দাবি করা হলেও আর্মেনিয়া সরকারের ওয়েব সাইটে কেবল একজন সেনার নিহত হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত করা হয়।
অপরদিকে, আর্মেনিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে অভিযুক্ত আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু ফোনে আজেরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জাকির হাসানকে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, আর্মেনিয়া কর্তৃক দীর্ঘকাল দখলে রাখা নাগরনো কারাবাখ ছিটমহল নিয়ে আজারবাইজানের সাথে তার বিরোধ। ছিটমহলটিকে আজেরিরা তাদের বলে দাবি করলেও এলাকাটি ‘বিরোধপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত। ছিটমহলের লোকজন সাধারণত খ্রিষ্টান হলেও এটা সোভিয়েত আমলে আজারবাইজানেরই অংশ ছিল। তবে স্বাধীন হয়ে আর্মেনীয়রা তা দখল করে নেয়। এ অবস্থা দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে চলে। তবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ছিটমহল নিয়ে আরেক সোভিয়েত ‘প্রজাতন্ত্র’ দ্বয় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। আজারবাইজান নাগরনো কারাবাখ পুনর্দখলে প্রয়াসী হলে আর্মেনিয়া ‘বিনাযুদ্ধে নাহিদের সূচ্যগ্রমেদিনী’ ধনুর্ভঙ্গপণ করে বাধা দেয়। তখন তুরস্ক আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে সামরিকসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আজারবাইজানকে। অপরদিকে, ইরান- আর্মেনিয়া ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে তেহরান দৃশ্যত নিরপেক্ষ থাকলেও তার বিরুদ্ধে আজেরিদের ক্ষোভ রয়েছে। গত বছর দীর্ঘসময়ের সামরিক সঙ্ঘাতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ যায়। শেষ পর্যন্ত মস্কোর মধ্যস্থতায়, আংকারার উৎসাহে এবং তেহরানের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে দখলকৃত উপত্যকা আজার বাইজানকে ছেড়ে দেয় আর্মেনিয়া। এ ছাড়া তার উপায়ও ছিল না। কারণ ইয়েরেভান বাকুর মোকাবেলায় সক্ষম হওয়াও কঠিন। তদুপরি আংকারার সার্বিক সাহায্য বাকুর জন্য থাকলে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষুদ্র আর্মেনিয়ার চেয়ে আজারবাইজান বৃহৎ এবং তার জনসংখ্যা ও সামরিক শক্তিও বেশি। তাই খ্রিষ্টজগতের চেয়ে পরাজয় দেখা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না বলেই প্রতীয়মান।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি টুইটার মারফত জানান, ‘আর্মেনীয় ও আজেরি যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আসার কথা হয়েছে এবারকার যুদ্ধবিরতি নিয়ে। দু’জনই তা মেনে চলার আশ্বাস দিয়েছেন।’ অবশ্য এহেন আশ্বাসে কতটা বিশ্বাস করা যায়, তা দেখার বিষয়। কারণ রাজনৈতিক নেতারা যেখানে ওয়াদা লঙ্ঘনে দ্বিধা করেন না, সেখানে আশ্বাসে বিশ্বাস কী?

মস্কো জানিয়েছে, ১৬ নভেম্বর রুশ সরকার উপর্যুক্ত দু’দেশের সরকারের সাথে কথা বলেছে। নতুন করে যেন তারা যুদ্ধ না জড়ায়, ‘সে ব্যবস্থা করা হয়েছে’ বলে রাশিয়ার দাবি।

স্মর্তব্য গত বছরের যুদ্ধবিরতির পর একদিকে আর্মেনীয় জনগণ তাদের সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের কেউ কেউ পদত্যাগ করেন। অন্যদিকে আজারবাইজানের বিজয় উৎসবে তাদের মদদগার তুরস্ক প্রকাশ্যে অংশ নেয়। বাকুতে উৎফুল্ল মানুষজন আজারবাইজান ও তুরস্কের পতাকা বহন করে। আজেরি মানুষের সাথে তুর্কিদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিল রয়েছে। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান আজেরিদের ‘আপনজন’ মনে করেন। যা হোক, আলোচ্য যুদ্ধ বিরতি চুক্তি মোতাবেক, রাশিয়া ও তুরস্ক যৌথ টহলের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি নিশ্চিত করার কথা যা মূলত আজারবাইজানের জন্য অনুকূল পদক্ষেপ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us