ইউক্রেন কি দখল করতে পারবে রাশিয়া!

মাসুম খলিলী | Jan 25, 2022 04:12 pm
ইউক্রেন কি দখল করতে পারবে রাশিয়া!

ইউক্রেন কি দখল করতে পারবে রাশিয়া! - ছবি : সংগ্রহ

 

ইউক্রেন নিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। আশঙ্কা রয়েছে রাশিয়া দখল করে নিতে পারে দেশটি। এই আশঙ্কা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।

রাশিয়ান সাফল্যের সম্ভাবনা
যান্ত্রিক আক্রমণ সবসময় আক্রমণকারীদের আশার মতো দ্রুত হয় না। ইতিহাসে সাঁজোয়া বাহিনীর দু’টি দ্রুততম গতিবিধি- আর্ডেনেসের মধ্য দিয়ে জার্মান জেনারেল হেইঞ্জ গুদেরিয়ানের আক্রমণ এবং ১৯৪০ সালের মে মাসে ডানকার্ক দখল এবং ২০০৩ সালে কুয়েত সীমান্ত থেকে বাগদাদের দিকে মার্কিন ও জোটের অগ্রগতি- প্রতিটি গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মাইল। সীমিত দিবালোক ও শীতকালীন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান আগের সেই হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

ক্রেমলিন তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জন না করা পর্যন্ত সামরিক বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা সিরিয়ায় সম্মিলিত অগ্রাভিযান চালনার ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আর বর্তমান ময়দান আক্রমণাত্মক যান্ত্রিক যুদ্ধের জন্য অনুকূল। যাই হোক, সামরিক সামর্থ্যরে হিসাব সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরেই নেয়া যেতে পারে।

কমান্ড ও কন্ট্রোল : ইউক্রেন আক্রমণের ক্ষেত্রে, রাশিয়া ১৯৪৫ সালে বার্লিনের যুদ্ধের পর থেকে তার বৃহত্তম সম্মিলিত অস্ত্র অভিযান পরিচালনা করবে। ২০০৮ রুশো-জর্জিয়ান যুদ্ধ মাত্র পাঁচ দিন স্থায়ী হয়েছিল এবং ৭০ হাজার রুশ সৈন্য এতে নিয়োজিত হয়েছিল। সিরিয়ায়, প্রাথমিক ম্যানুভার বাহিনীতে সিরিয়ার স্থল ইউনিট অন্তর্ভুক্ত ছিল, লেবানিজ হিজবুল্লাহর সহায়তায়, ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর মিলিশিয়া বাহিনী, ওয়াগনার গ্রুপের মতো ব্যক্তিগত সামরিক কোম্পানি এবং ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস-কুদস বাহিনী। কিন্তু রাশিয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রচলিত বাহিনী মোতায়েন করেনি। প্রায় এক লাখ ২০ হাজার রুশ সৈন্য ইউক্রেনের কাছে জড়ো করা হয়েছে, আরো কয়েক হাজার যুদ্ধে মোতায়েন করার জন্য প্রস্তুত। সঠিক মার্চ শৃঙ্খলার সাথে এসব বাহিনীকে প্রথমে তাদের আক্রমণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া রাশিয়ান কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হবে।
লজিস্টিকস : প্রাথমিক আক্রমণ সম্ভবত আর্টিলারি এবং বিমান হামলার সমর্থনে শুরু হবে। রাশিয়ান সামরিক শক্তির আসল পরীক্ষা শুরু হবে- শত শত মাইল অঞ্চলে একটি বিশাল যান্ত্রিক শক্তির অগ্রগতি বজায় রাখার মধ্যে। কিয়েভ এবং ডনেপ্র নদী ক্রসিংগুলো রাশিয়ান সীমান্ত থেকে কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ মাইল দূরে রয়েছে এবং এর সেনাবাহিনীকে সেখানে পৌঁছানোর জন্য কমপক্ষে কয়েক দিনের লড়াই করতে হবে।

মনোবল : মনোবলের দু’টি স্তর রয়েছে : প্রত্যেক সৈনিকের মনোবল এবং গোটা দেশ ও এর জনগণের মনোবল। ব্যক্তিগত স্তরে, একজন ইউক্রেনীয় সৈনিক বিশ্বাস করে যে, সে তার স্বদেশ রক্ষার জন্য লড়াই করছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যত বেশি সময় ধরে রুশদের প্রতিরোধ করবে, তার আত্মবিশ্বাস তত বাড়বে। সেইসাথে কিভাবে এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে তার অভিজ্ঞতাও বাড়বে। উপরন্তু, যুদ্ধ বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে, আন্তর্জাতিক সমর্থনের মাত্রাও বেশি হতে পারে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য অস্ত্র হস্তান্তরের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।

রাশিয়ার জন্য, যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে এবং হতাহতের সংখ্যা তত বেশি হবে। প্রতিটি ক্রেমলিন শাসক জানেন যে একটি রুশ রাজবংশ বা শাসনের অবসানের দ্রুততর উপায়গুলোর একটি হলো যুদ্ধে পরাজিত হওয়া। আফগানিস্তানে যুদ্ধের প্রাথমিক সোভিয়েত মূল্যায়ন যদিও আশাব্যঞ্জক ছিল, শেষ পর্যন্ত তারা অন্ধকারে পড়ে যায়।

রাশিয়ান পরিবারগুলো নিশ্চিত, তাদের সৈন্যদের কামানের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজকের বিশ্বে সেলফোন ক্যামেরা ও ভিডিওচিত্রের সর্বত্রগামিতা সৈন্যদের অভিযোগকে তাদের বাহিনীর বাইরে ছড়িয়ে দেবে। অতএব, ক্রেমলিনের জন্য সমস্যা হবে : যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে ততই হতাহত এবং অর্থনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিক্রিয়া তীব্র হবে।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us