১. কোনো ব্যাপারে ভয় পেলে সেই কাজটাই আগে করুন। ভয়ের উৎস থেকে পালিয়ে গিয়ে লাভ নেই। তার সাথে মোকাবিলা করুন। তাহলেই মস্তিষ্ক বুঝবে ভয়ের উৎস আসলে ততখানি ভীতিপ্রদ নয়। পরবর্তীকালে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও বাড়বে।

২. মুখে সবসময় হাসি ধরে রাখুন। জোর করেও মাঝে মধ্যে হাসুন। হাসি এন্ডোর্ফিন নামে হর্মোন ক্ষরণ করায়। ফলে মুখে সবসময় হাসি ধরে রাখলে আর একান্তে মাঝে মধ্যে বিনা কারণেই হো হো করে হাসলে মস্তিষ্কও বুঝতে পারে না কোনটা মেকি হাসি আর কোনও স্বতঃস্ফূর্ত হাসি। ফলে এন্ডোর্ফিন ক্ষরণ হয় দেহে যা মেজাজ ভালো রাখার জন্য দারুণ জরুরি। আর হ্যাঁ, হাসিমুখের লোকেদের সবাই খুব পছন্দ করে। হাসি যেকোনো লোকের ব্যক্তিত্ব করে তোলে আকর্ষণীয়।

৩. প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে? মনে হচ্ছে সবকিছু তছনছ করে ফেলবেন? এহেন রাগ হতে পারে কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কিংবা কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে। খেয়াল রাখবেন, রাগের বহিঃপ্রকাশে কিন্তু অনেককিছুই গণ্ডগোল হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে সম্পর্ক, কাজ। পরে তার জন্য আফসোস করতেও হতে পারে। তাই ভয়ঙ্কর রাগ হলে কটু কথা বলবেন না। ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অন্য জায়গায় চলে যান কিছুক্ষণের জন্য। দেখবেন মাথা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। সিদ্ধান্তগ্রহণে সুবিধা হচ্ছে।

৪. অনেকে ভাবেন বড় মানুষের কাঁদা উচিত নয়। অথচ সত্যিটা হলো, কান্না কিন্তু অনেক আবেগের প্রকাশ করতে সাহায্য করে। খুব আবেগতাড়িত হয়ে কিছুক্ষণ একান্তে কাঁদলে তা দুর্বলতার চিহ্ন নয়। বরং কাঁদতে অনেকখানি মানসিক জোর লাগে।

৫. কোনো বিষয়ে প্রবল উদ্বেগে ভুগছেন? চিন্তার চোটে হাত পা কাঁপছে? ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে? সম্ভব হলে একটা খোলা জায়গায় গিয়ে পায়চারি করতে পারেন। সাথে ধীরে ধীরে আর লম্বা লম্বা শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ুন আরো ধীরে। দেখবেন ম্যাজিকের মতো দুশ্চিন্তা চলে গিয়েছে। পরিষ্কার করে ভাবনাচিন্তা করা যাচ্ছে।

৬. ঘুম খুব জরুরি বিষয়। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম কর্মে দক্ষতা বৃদ্ধি করে। ঘুম আসছে না বলে মোবাইল ঘাঁটবেন না। তাতে ঘুম আরও ঘেঁটে যাবে। ঘুমের ঘাটতি সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা তৈরি করে।

৭. শরীর আর মন আলাদা নয়। তাই মন ভালো রাখতে গিয়ে শরীরকে অবহেলা করা যাবে না। মন ভালো রাখতে গেলে নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার। এক্সারসাইজ মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ এক্সারসাইজ করলে শরীরে এন্ডোর্ফিন নামে হর্মোন ক্ষরিত হয় যা মন ভালো রাখে।

৮. খুঁতখুঁতে হওয়া ভালো। তবে সব বিষয়েও খুঁতখুত করা মোটেও ভালো নয়। জায়গার জিনিস জায়গা রাখা নিয়ে, পরিপাটি করে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রাখার মতো বিষয়গুলো নিয়ে পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের ওপর চোটপাট করলে তা মোটেই উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার নয়। বরং একটু অগোছালো জিনিসপত্র মাঝেমধ্যে সৌন্দর্যও তৈরি করে। তবে আপনি পান থেকে সামান্য চুন খসা পছন্দ করেন না? তাহলে কিন্তু এমন খুঁতখুঁতানি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের দিকে ইঙ্গিত করে।

৯. যখন যে কাজই করুন না কেন সেই দিকেই মনোনিবেশ করতে সচেষ্ট হন। অবশ্য আমাদের ব্রেন সেভাবে তৈরি নয়। মন বড় অস্থির। বারবার ফোকাস থেকে সরে যেতেই যেন মন সর্বক্ষণ তৈরি। তাই একাগ্র হওয়ার জন্য করুন মাইন্ডফুলনেস ব্যায়াম। সহজ টিপস দেওয়া যাক- খাওয়ার সময় সচেতনভাবে দেখুন প্লেটের রং। খেয়াল করুন খাবারের উপাদান। মশলার স্বাদ। আলাদা আলাদা করে প্রতিটি রান্না ও তার স্বাদের প্রতি নজর দিন। এই ধরনের ব্যায়ামে দেখবেন কাজ কিংবা পড়াশোনাতেও বাড়ছে মনোযোগ। আসছে সাফল্য।

লেখক : ডা. দেবাঞ্জন পান পরামর্শে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

সূত্র : বর্তমান