আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন

নাজমুল হুদা মাহী | Feb 12, 2022 01:12 pm
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন

আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন - ছবি : সংগ্রহ

 

মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ইসলামের একটি মৌলিক লক্ষ্য। এ মহান লক্ষ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদি যুগ থেকে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পাঠানো হয়েছে মানবতার উৎকর্ষের পূর্ণতা দিতে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা প্রদানের জন্য।’ (সহিহ মুসলিম ও তিরমিজি)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআ'লা কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা- ক্বলম, আয়াত : ৪)।

চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ধৈর্যের আরবি হলো ‘সবর’। সহিষ্ণুতার আরবি হলো ‘হিলম’। ‘সবর’ ও ‘হিলম’ শব্দ দুটির মাঝে কিঞ্চিৎ পার্থক্য রয়েছে। হিলম মানে হল— শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। এ অর্থে হিলম সবর অপেক্ষা উন্নততর। আবার উভয় শব্দ কখনো অভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আল্লাহ তাআ'লা বলেন, ‘আল্লাহ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।’ (সুরা- হজ্জ, আয়াত : ৫৯)

সবর অর্থাৎ ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআ'লা বলেন, ‘আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সুরা- ছোয়াদ, আয়াত : ৪৪)
‘নিশ্চয় ইহাতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।’ (সুরা-ইব্রাহিম, আয়াত: ৫)

ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয় যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা- আসর, আয়াত : ১-৩)।

অন্যত্র আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করো এবং সহিষ্ণু ও সুপ্রতিষ্ঠিত হও; এবং আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা সুফল প্রাপ্ত হও। (সুরা-আল ইমরান, আয়াত : ২০০)।

ধৈর্য ধারণকারীদের সাফল্য সুনিশ্চিত। কারণ মহান রব ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাঁর সঙ্গে থাকবেন তাঁর সফলতা অবধারিত।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক হজরত আইয়ুব (আ:) ১৮ বছর পর্যন্ত সবরের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে পরম সাফল্য লাভ করেছিলেন। নবী হযরত ইউনুস (আ:)-কে সামান্য অধৈর্য হওয়ার কারণে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ (এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে) রাতের আঁধারে মৎস্য উদরে যেতে হয়েছিল। আল্লাহ তাআ'লা এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দেশে বলেন, ‘অতঃএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মৎস্য-সহচর (ইউনুস আ.)-এর ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদগ্রস্ত অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল।’ (সুরা- ক্বলম, আয়াত : ৪৮)

তাফসিরে বায়যাবির বর্ণনায় ধৈর্য তিন প্রকার :
এক— ‘সবর আনিল মা'সিয়াত’ অর্থাৎ অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত থাকা।
দুই— ‘সবর আলাত তো'আত’ অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা।
তিন— ‘সবর আলাল মুসিবাত’ অর্থাৎ বিপদে অধীর না হওয়া।

উপরোক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করলে মানবজীবনে সফলতা ও পূর্ণতা অনস্বীকার্য। কারণ, প্রথমত যাবতীয় অন্যায় অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সকল প্রকার অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।
দ্বিতীয়ত ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান।

তৃতীয়ত প্রতিকূল অবস্থায় দৃঢ়পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং ‘সবরে কামিল’ বা পরিপূর্ণ ধৈর্য এবং ‘সবরে জামিল’ বা উত্তম ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে।

সর্বাবস্থায় যেকোনো অযাচিত পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে গেলেই আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়া যাবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us