স্মার্টফোনে এত সোনা থাকে!

অন্য এক দিগন্ত | Apr 18, 2022 06:00 pm
স্মার্টফোনে এত সোনা থাকে!

স্মার্টফোনে এত সোনা থাকে! - প্রতীকী ছবি

 

স্মার্টফোন পুরনো হয়ে গেলে আমরা খুব সহজেই তা বাতিল করে নতুন স্মার্টফোন কেনার ফিকিরে থাকি। যে ফোন এক দিন মনে খুশির জোয়ার এনে দিয়েছিল, তারই জায়গা হয় বাড়ির এক কোণায়। পকেটে জায়গা করে নেয় নতুন ঝাঁ চকচকে স্মার্টফোন।

কিন্তু আপনি কি জানেন, একটি স্মার্টফোন সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু থাকে? কিন্তু তা না জেনেই পুরনো স্মার্টফোনগুলোকে আমরা খরচের খাতায় ফেলে দিই।

না জেনে অনেক সময়ই সামান্য মূল্যের বিনিময়ে বিক্রিও করে দিই পুরনো স্মার্ট ফোন।

ব্রিটেনে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ তাদের পুরনো ফোন ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ফলস্বরূপ এই স্মার্টফোনগুলো থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক বেরিয়ে তা পরিবেশকে দূষিত করে।

এই বিষাক্ত রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাটারির পারদ, ডিসপ্লে এবং সার্কিট বোর্ড, সীসা, বেরিলিয়াম এবং কম্পিউটার চিপে ব্যবহৃত আর্সেনিক এবং সিলিকা।

তবে এখন বেশ কিছু সংস্থা পুরনো ফোনগুলো নতুন করে পুনর্ব্যবহার করার জন্য তাদের সংস্থার কাছে পাঠানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে।

একটি স্মার্টফোনের প্লাস্টিকের কভারের নীচে প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার রয়েছে। সোনা-রুপা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিরল মৌলও থাকে স্মার্টফোনের কভারের নিচে ।

একটি সাধারণ আইফোনে প্রায় ০.০৩৪ গ্রাম উচ্চমানের সোনা, ০.৩৪ গ্রাম রুপো, ০.০১৫ গ্রাম প্যালাডিয়াম এবং খুব সামান্য পরিমাণে প্লাটিনাম থাকে।

অর্থাৎ এক টন আইফোনে, এক টন স্বর্ণ আকরিকের থেকে ৩০০ গুণ বেশি সোনা পাওয়া যায়। একই সাথে এক টন রৌপ্য আকরিকের থেকে এক টন আইফোনে ৬.৫ গুণ বেশি রুপা থাকে।

আইফোনে থাকা বিরল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইট্রিয়াম, ল্যান্থানাম, টার্বিয়াম, নিওডিয়ামিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম এবং প্রাসিওডায়মিয়ামের মতো মৌল।

আইফোনের পর্দাতে ইট্রিয়াম এবং গ্যাডোলিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। স্পিকার এবং হেডফোনগুলোতে নিওডিয়ামিয়াম এবং প্রাসিওডায়মিয়াম থাকে। এবং ল্যানথানাম ক্যামেরার ক্ষুদ্র লেন্সকে আরো স্পষ্ট করে ছবি তুলতে সাহায্য করে।

এই উপাদানগুলোর বেশির ভাগই চীনে পাওয়া যায়। সেই কারণেই হয়তো বিশ্বব্যাপী মোট বার্ষিক আইফোনের ৪২ শতাংশ উৎপাদনই চিন করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গ্যাডোলিনিয়ামের প্রধান উৎস হলো চীনের অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলীয় খনি। পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ লিথিয়াম (স্মার্টফোনের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়), অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া গেলেও এই ধাতুর বেশিরভাগটাই পরিশোধিত হয় চীনে।

একটি সাধারণ স্মার্টফোনেও প্রায় ২৫ গ্রাম অ্যালুমিনিয়াম এবং ১৫ গ্রাম তামাও থাকে।

১০ লাখ মোবাইল ফোন প্রায় ১৬ টন তামার তার ও ১৫ কেজি প্যালাডিয়াম (যা ফোনের বৈদ্যুতিক সার্কিটে ব্যবহৃত হয়) ধাতুর জোগান দিতে পারে।

এ ছাড়াও স্মার্ট মোবাইল ফোনগুলোতে যে পরিমাণ পৃথিবীর বিরল মৌল থাকে, তা-ও নেহাত কম নয়।

‘ওয়াটার ক্যালকুলেটর’ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একটি স্মার্টফোন তৈরিতে আনুমানিক ৩,১৯০ গ্যালন পানিও ব্যবহার করা হয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী ব্রিটেনের দশটি পরিবারের মধ্যে ছয়জনের বাড়িতে কমপক্ষে এক থেকে তিনটি অব্যবহৃত স্মার্টফোন রয়েছে। বাকি দেশগুলোতেও অব্যবহৃত স্মার্টফোনের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

স্মার্টফোনগুলো থেকে যদি এই বিপুল পরিমাণ মূল্যবান ধাতু উদ্ধার করা যায়, তা হলে প্রতি বছর প্রাকৃতিক আকরিক খননের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমবে বলেও বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।

এ ছাড়াও এই বাতিল স্মার্টফোনগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুললে প্রচুর পরিমাণ খনিজ আকরিক এবং পানির অপব্যবহার কমবে। এর ফলে প্রকৃতির ভালোই হবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us