বিজেপিকে ত্যাগ না করলে ভারতই ডুববে ভারত মহাসাগরে

সাইফুল খান | Jun 09, 2022 09:14 am
জিন্দাল ও নুপুর, ইনসেটে নরেন্দ্র মোদি

জিন্দাল ও নুপুর, ইনসেটে নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

বিজেপির ধর্মতাত্ত্বিক পাটাতন শুধুমাত্র ব্রাক্ষ্মণ্যবাদের জন্য নির্মিত। সেখানে বাকি সাধারণ হিন্দুদের কোনো জায়গা নেই। আর মুসলমান মাত্রই বিদেশী, তাতে সে যদি ব্রাক্ষ্মণ থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমানও হয়। ঘৃনা সৃষ্টি করে ভয় দেখিয়ে ফ্যাসিবাদি রাজনীতির চর্চা শুধু ভারতকে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে বিপথগামী করবে। বৃহৎ আয়তন, বিশাল অর্থনীতি,বিপুল জনগোষ্ঠী, বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মিশেলই ভারতের সৌন্দর্য। উদার গণতান্ত্রিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা ভারতের আত্মা। ওই ভারত যদি কোনো একক মত ও পথকে চরমপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা দশকের পর দশক ধরে চালায়, তাহলে বহুজনতার ভারত বিভাজনের দিকেই ধাবিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে।

আজকের ভারত ছিল বহু স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত। নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ আর অবিশ্বাসকে পুঁজি করে সেই বিভাজন আর শত্রুতা টিকে থাকত। আজকের অখণ্ড ভারতের নির্মাণ এসেছে মুসলমানদের হাত ধরে। মুসলমানেরা সাড়ে আট শ' বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ হিন্দুস্তানের নির্মাণ করেছে। যা ব্রিটিশরা হিংসাত্মক বিভাজনে বিভাজিত করে দিয়ে গেছে। বিজেপি হিন্দুত্ববাদী ভারতের স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণদের উস্কে দিচ্ছে। জনসম্মুখে মুসলমান হত্যাকে ভারত বৈধতা দেয়ার প্রাথমিক কয়েক ধাপ পার করে চলে এসেছে। সেই আত্মবিশ্বাস আজকে নুপুর আর জিন্দালের মতো হাজার হাজার অপাংক্তেয় ব্যক্তির জন্ম দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভারতের পরাশক্তি হওয়ার লালিত স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

সাম্প্রতিককালে বিজেপির দুই উর্ধ্বতন ব্যক্তি নুপুর শর্মা ও নন্দ কুমার জিন্দাল সর্বশেষ নবী সা. তাঁর পবিত্র স্ত্রী আম্মাজান আয়েশা রা. সম্পর্কে যে আপত্তিকর কথা বলেছেন সেটা তাদের স্কুল অব থটের বহিঃপ্রকাশ। তাদের চিন্তা ও চেতনার নির্মাণ কুশিক্ষা আর ঘৃণার পাটাতনের উপর ভর করে আছে এটা আবারো প্রমাণ করলেন। বিজেপি তাদের একজনকে বহিষ্কার আরেকজন পদচ্যুত করেছে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপে। তাদের নমনীয়তা নৈতিক কারণে নয়। বরং বিনা বাধায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম দমনের ধারাবাহিকতার ফলাফল এই বিতর্কিত মন্তব্য।

মুসলমানদের মধ্যে বহু মাজহাব, তরিকা এমনকি সাংস্কৃতিক বিভাজনের পথ ধরে বহুধাবিভক্তি আছে। তবে কখনোই আল্লাহ এবং রাসুল সা.-এর প্রতি ঈমানের ব্যাপারে কারো কোনো আপস নেই। একজন মুসলিম তার জীবন ও পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসে আল্লাহ ও রাসুল সা.-কে। এটা মুসলমানিত্বের দাবি। কোনোভাবেই কেয়ামত পর্যন্ত এই নির্দিষ্ট পয়েন্টে মুসলমানদের বিভক্ত করা যাবে না, সম্ভবও না। এই সাধারণ শিক্ষাটুকু যাদের মধ্যে নেই তারাই প্রায় ৩৫ কোটি নিজ দেশের মুসলমানসহ সারা দুনিয়ার শত কোটি মুসলমানদের উস্কে দিয়ে নিরাপদে থাকার স্বপ্ন কিভাবে দেখতে পারে! বোকার স্বর্গে বসবাস করা লোকেরও এই কাজ শোভা পায় না।

ভারতের প্রধানতম আয়ের উৎস প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও উৎপাদিত পণ্য রফতানি। যার বেশিরভাগ বাণিজ্য হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে। মধ্যপ্রাচ্য এই ইস্যুতে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে তা কার্যকর করছে। প্রতিদিন কোটি কোটি ডলারের পণ্যের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্রয়কৃত পণ্য সুপার শপ থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। কিছু কিছু কোম্পানি ভারতীয় নাগরিকদের চাকরিচ্যুত করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারত বৈশ্বিক ভারত বিরোধিতার এত ভয়ঙ্করদর্শন এর আগে কখনো দেখেনি। বিজেপির বিভ্রান্ত রাষ্ট্রচিন্তা আজ ভারতকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ডোবাতে বসেছে। খোদ ভারতের ভেতরেই বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করছেন বিরোধীদলের নেতাকর্মী, সমাজকর্মী,দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা। বিজেপি সরকারকে পরিষ্কারভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ। বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারতের যে কৃত্রিমতার মুখোশে ঢাকা মহান ভারত দেখানো হয়, ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে সেই মুখোশ খুলে পড়বে। বিজেপি ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে ইতিমধ্যে মাটিতে নামিয়ে ফেলেছে।

করোনা-পরবর্তীকালে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কিনে বিশাল লাভের অঙ্ক ঘরে আসার আগেই উগ্রতার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে পড়ল । মুসলিম জাহানের তোপের মুখে ভারত একঘরে হয়ে গেছে। এই ইস্যুতে ভারত আমেরিকাকে পাশে তো পাবেই না। বরং রাশিয়ার বিপক্ষে ভেটো না দিয়ে উল্টা অপরিশোধিত তেল কেনার যে ক্ষোভ আমেরিকা বুকে পাথর চেপে রেখেছিল ওই রাগ উগ্রে দেয়ার মোক্ষম সময় তাদের হাতে এসেছে।

চীনের বিরুদ্ধে বাইডেনের দরকার অনুগত ভারত। ভারত মোটামুটি অনুগতই ছিল। যেহেতু সোভিয়েত জমানা থেকে ভারতের সামরিক অস্ত্রশস্ত্র সেখান থেকে কেনা হয় এবং সেই ধারা অব্যাহত থাকায় ভারতীয় মিলিটারির পক্ষে রাশিয়াকে ছেড়ে দেয়া সম্ভব না। তাহলে সাত দশক ধরে কেনা মজুদ অস্ত্র গোলা বারুদ আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভাঙারি লোহা লক্করে পরিণত হবে। তাছাড়া তুলনামূলক সস্তায় তেল কেনার অফার পেয়ে রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনে তেলের রিজার্ভকে মহাসাগর বানিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। একই সাথে ফরাসি রাফায়েল, মার্কিন এফ-৩৫, রুশ এস -৪০০ কিনে গ্লোবাল গ্রুপিংকে ঠিক রেখে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ভারত বেশ ভালো চলছিল। ভারত জানে আমেরিকার দুর্বলতা । ভারতকে তারা ছাড়তে পারবে না। এত বড় ভারতকে বাগে পাওয়া আমেরিকার জন্য মুশকিল।

আরব দেশগুলোর ভারতীয় পণ্য বয়কটের পরোক্ষ অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে এখন বিজেপির আমেরিকাকে দরকার হবেই। যদিও আরবের সাধারণ জনতার ভারত বিরোধিতার ইস্যুকে বাইডেন প্রশমিত করতে পারবেন না। তবে এই বিরোধিতা যদি এক মাস চলে তবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক সরকারগুলো আর যাহোক এই ইস্যুতে জনগণের সেন্টিমেন্টের মর্যাদা অবশ্যই দেবে। ভারতীয় জনগণ যদি এই উগ্র অতি নিকৃষ্ট বিজেপিকে ছুড়ে না ফেলে তাহলে আগামীর ভারত, ভারত মহাসাগরে ডুবে যাবে। পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us