চুপ থাকলে চলবে না
বাইডেন ও পুতিন - ছবি : সংগ্রহ
দুই হাজার বিশ সাল নিয়ে নানাজনে নানা কথা বলেছে। প্যান্ডামিকের কারণে ভয়ভীতি এমনভাবে মানবজাতির মধ্যে ঢুকেছিল যে কারো দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। সবাই স্রষ্টার ক্ষমতার কথা ভাবতে শুরু করেছিল। বছর ঘুরতেই ভ্যাকসিনের আভাস পাওয়া গেল, মানুষজাতি অন্ধকার থেকে নতুন করে আলোর সন্ধান পেতে শুরু করল। ঠিক তেমন একটি সময় পুতিন একতা এবং বিশ্বস্ততা ভেঙ্গে ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু করতেই বিশ্ব নানা জোট তৈরি করলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর ভার্সোভা প্যাক্টের অবসান ঘটেছে। তা সত্ত্বেও আমেরিকা ন্যাটো জোটকে জোরালো করতে ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদেরকে ন্যাটো জোটে ঢুকিয়ে রাশিয়াকে বিধ্বস্ত করতে উঠেপড়ে লেগে গেল।
ফলস্বরূপ কী দাঁড়াল? গোটা বিশ্বে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষ বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। জানমালের ক্ষতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মূলত কিছু সংখ্যক মানুষ নামের দানবেরা যার শেষ কোথায় জানা মুস্কিল। তবে, মানবজাতির সামনে এক ভয়াবহ সময় আসতে শুরু করেছে- সে বিষয় কম বেশি অনেকেই অবগত। রাশিয়ার হিংসাত্মক ব্যবহার নিঃসন্দেহে ঘৃণাজনক। অন্যদিকে আমেরিকার কু-কূটনৈতিক রাজনৈতিক চাল বর্তমানের ইউরোপকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে জেনেও কোথাও কেউ কিছু করছে না বা বলছে না। সবাই কেন যেন নিঃস্তব্ধ নীরব! রাশিয়াকে একঘরে করা মানে গোটা বিশ্বকে শাস্তি দেয়া এই অপ্রিয় সত্য কথাটিই অনেকে এখনো বুঝতে পারছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে হতভম্ব, মর্মাহত, নিপীড়িত, নির্যাতিত হতভাগা যার উপর পড়েছে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক চাপ, জানিনে সে চাপ কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা!
রাশিয়াকে একঘরে করে ভেবেছিল পরাজিত করবে। কিন্তু হিতে সবকিছু বিপরীত হয়েছে। এখন নিজেরাই গভীর পানিতে হাবুডুবু খেয়ে মরছে। বলতে গেলে পুরো ইউরোপ (রাশিয়া ছাড়া) অচল জ্বালানি তৈল এবং বিদ্যুৎ ছাড়া, কিভাবে সেই ইউরোপ এতবড় একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো? একবারও ভাবল না কী হবে অভাগা জাতির! রক্ত ছাড়া শরীর আর জ্বালানি তৈল এবং বিদ্যুৎ ছাড়া ইউরোপ ভাবা যায়? হয়ত, এশিয়া, আফ্রিকা বলবে আজীবন গোটা বিশ্ব লুটপাট করে ইউরোপ তার নিজের অস্তিত্ব, নিজের সাম্রাজ্যের কথা ভেবেছে- এখন সুদে-মূলে সেসব ঋণ শোধ দেবার পালা। কিন্তু ইউরোপ তো এখন শুধু সাম্রাজ্যবাদীদের নয়, ইউরোপ তথা গোটা বিশ্ব এখন আমাদের সকলের। আমরা না চাইলেও বা আমাদের কেউ স্বীকার না করতে চাইলেও আমরা এখন একই সংগঠনে জড়িত। প্রযুক্তির যুগে বিশ্বায়নে কেউ আর এখন একা নই। সামান্য একটি কাঠপেন্সিল তৈরির পেছনে কমপক্ষে পাঁচটি কন্টিনেন্ট জড়িত এবং তার ব্যবহারিক দিকটা গোটা বিশ্ব, সেখানে কি মানায় এযুগে জুলুম করে একনায়কতন্ত্র চালু করা!
হাঁটতে পারে না শিশু না খেয়ে আছাড়, বা না কানলে মা তার নিজ সন্তানকেও বুকের দুধ দেয় না। তাহলে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে কি? বিশ্বে যার যা খুশি করছে, করবে আর আমরা বসে বসে বুড়ো আঙ্গুল চুষব, তা তো হতে পারে না! পৃথিবী বদলে গেছে, পৃথিবী আগের মতো নেই। ভাবুন এই বাংলাদেশে কাপড় তৈরী হয় আর সেই কাপড় ব্যবহার করে গোটা বিশ্বের মানুষ। তাহলে আমাদের দায়ভার কি সীমাবদ্ধ? আমাদের বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমার কথায় ধরুন, প্রায় ৪০ বছর ধরে নিজের ভরণপোষণ জোগাড় করা থেকে শুরু করে পরিবার দেশ তথা গোটা বিশ্বের মানুষের উপকারে নিজেকে শতভাগ নিযুক্ত করে রেখেছি অথচ যার যা খুশি করবে কিছু বলব না, তা তো হতে পারে না? নিজের শরীরে যখন রোগ আক্রমণ করে, আমরা কি চুপচাপ বসে থাকি? না, তার প্রতিরোধ করতে ডাক্তারের সাহায্য নিই রোগমুক্ত হই, ঠিক সমাজ, দেশ তথা বিশ্বে যদি মহামারী দেখা দেয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে বা কেউ হঠাৎ অন্য কেউকে আক্রমণ করে তখন প্রতিবাদ করতে হবে, এটা তো অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। আমরা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব আমাদের পরিচয় মহানুভবতার মধ্য দিয়ে হবে। বাইডেন বা পুতিনের উপর দোষ চাপিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। উচ্চস্বরে বলতে হবে- এটা অন্যায়, আমরা মানি না, মানব না। প্রতিবাদ করতে হবে একসাথে। এ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের একটিই পরিচয়- সেটা হলো আমরা মানুষ, আমরা দানব নই।
লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com