বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন : কী হচ্ছে নাগাল্যান্ডে

মোস্তাফিজুর রহমান | Oct 23, 2019 04:59 pm
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন : কী হচ্ছে নাগাল্যান্ডে

বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন : কী হচ্ছে নাগাল্যান্ডে - ছবি : সংগ্রহ

 

জম্মু-কাশ্মির নিয়ে যখন উত্তেজনা চরমে, ঠিক তখনই ভারতের আরেকটি রাজ্য চিন্তার মধ্যে ফেলে দিলো ভারতকে। ১৪ আগস্ট ওই রাজ্যজুড়ে উড়তে দেখা যায় নাগা জাতীয় পতাকা। বিশেষ করে নজর কেড়েছে রাজ্যের সেনাপতি জেলা। সেখানে গোটা দেশ থেকে কয়েক হাজার নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষ একত্রিত হয়ে ‘নাগা স্বাধীনতা দিবস’ পালন করে। 

অন্যদিকে, অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে নাগাল্যান্ডের জন্য পৃথক পতাকা ও সংবিধানের দাবিতে সরব হয় প্রধান বিরোধী দল এনপিএফও। বিরোধী দলের নেতা এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াংয়ের নেতৃত্বে এনপিএফ প্রতিনিধিরা রাজ্যপাল তথা ভারত-নাগা আলোচনার মধ্যস্থতাকারী আর এন রবির সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাদের দাবি, নাগাল্যান্ডের পৃথক পতাকা ও সংবিধানের দাবি ন্যায্য। কেন্দ্র জোড়াতালি দেয়া শান্তিচুক্তির পরিকল্পনা না করে নাগাদের দাবি মেনে সমাধানসূত্র বের করুক।

ভারত সরকার এবং এনএসসিএনের (আইএম) শান্তি আলোচনা ওই পৃথক পতাকা ও সংবিধানের জটেই থমকে গেছে। বাকি দাবি মানা হলেও নাগাল্যান্ডের পৃথক পতাকা ও সংবিধান থাকার ব্যাপারে কেন্দ্র রাজি নয়। এনএসসিএনের (আইএম) প্রধান আইজ্যাক মুইভাও জানিয়েছেন, স্বাধীন নাগালিমের দাবিতে এত দশকের আন্দোলন ও রক্ত ঝরানোর পর সংবিধান ও পতাকার দাবি ছেড়ে দেয়া যায় না।

কেন্দ্র শান্তি আলোচনায় অন্য সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোয় আপত্তি জানিয়েছে এনএসসিএন (আইএম)। কিন্তু এনপিএফের মতে, সার্বিক শান্তির উদ্দেশ্যে সব কটি সশস্ত্র সংগঠনের সাথেই আলোচনা করা দরকার। সেই সাথে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকেও এক টেবিলে এনে স্থায়ী সমাধানসূত্র বের করা হোক।
নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, আসাম ও মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নাগা স্বাধীনভূমি বা ‘নাগালিম’ গড়ার ডাক বহু দিনের পুরনো। এই দাবিতে অনেক দিন ধরেই সহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন (আইএম)।

তবে সংগঠনটি দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার পর মুইভা গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা চালাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া আপাতত শান্ত নাগাল্যান্ড। কিন্তু এই দুই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। ফের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারার জন্য বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত জম্মু-কাশ্মির। একইভাবে নাগাল্যান্ডসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাকি রাজ্যগুলো ৩৭১ ধারার ফলে বিশেষ কিছু সুবিধা পায়। তাই ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে সেখানকার মানুষের মধ্যেও। ফলে নাগা জাতীয় পতাকা উত্তোলন এক প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। কিংবা নাগা পতাকা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার অর্থই হচ্ছে তারা স্বাধীনতাকামী মানুষ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হলেও ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ইতিহাসের দিকে তাকালেই পাওয়া যায় বিদ্রোহ আর সহিংসতার চিত্র। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে ভারতীয় রাষ্ট্র থেকে আলাদা হওয়ার দাবিতে বিদ্রোহ করে আসছিল নাগা অঞ্চলের মানুষ। সেই বিদ্রোহ সহিংসতায় রূপ নিলে ভারত সরকার অনেকটা বাধ্য হয়েই নাগাল্যান্ডকে একটি স্বশাসিত রাজ্য গঠনে সম্মতি দেয়। এরপরও রাজ্যটিতে কোনো স্থিতিশীলতা না এলে কেন্দ্রীয় প্রশাসন শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নেয়। এতে নাগাদের মনে উন্মোচিত হয় শান্তি ও সম্ভাবনার দ্বার।

সারি সারি পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আধার ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট রাজ্য নাগাল্যান্ড। সাড়ে ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই রাজ্যের জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ হলেও ১৬টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বাস এ রাজ্যে। রয়েছে ৩৬ রকমের ভাষা ও উপভাষা। তবে এ রাজ্যের ইতিহাসজুড়ে রয়েছে সংগ্রাম, বিদ্রোহ ও সহিংসতার চিত্র।

বিদ্রোহের শুরু ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পরপরই। সে সময় নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল এনএনসির নেতৃত্বে নাগা উপজাতীয়রা ভারত থেকে আলাদা হওয়ার এবং নিজেদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে তা মেনে নেয়নি ভারত সরকার। ১৯৫১ সালে এনএনসির উদ্যোগে নাগা জনপদে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হলে সেখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। গণদাবি এবং কিছু সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬০ সালে সরকার ভারতীয় শাসনের অধীনে নাগাল্যান্ডকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দিতে রাজি হয়।

এরপরও নাগাল্যান্ডে আসেনি শান্তি ও স্থিতিশীলতা। দুই দশক ধরে ভারত সরকারের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কয়েক দফা আলোচনা হলেও তার কোনোটাই পাকাপোক্ত সমাধান আনতে পারেনি।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us