সিটি নির্বাচন : বিএনপির পরিকল্পনা

শফিকুল ইসলাম | Jan 08, 2020 06:54 am
সিটি নির্বাচন : বিএনপির পরিকল্পনা

সিটি নির্বাচন : বিএনপির পরিকল্পনা - ছবি : অন্য দিগন্ত

 

নানা আশঙ্কার মধ্যেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই এখন বেশি মনোযোগী বিএনপি। দলের হাইকমান্ড সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায়। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে কষছেন নানা ছক, নতুন কৌশলে তৈরি করছেন পরিকল্পনা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণ্য করলেও সিটি নির্বাচন বিএনপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে প্রার্থীও দেয়া হয়েছে তরুণ এবং উচ্চশিক্ষিত।

নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনাসহ ইতোমধ্যে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলছে ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ। দলের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে এই দুই কমিটি গঠন করা হবে। স্থানীয় নেতারা কেন্দ্র পাহারাসহ ভোটের সার্বিক বিষয় দেখভাল করবেন। প্রচার-প্রচারণার কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি চলছে ইশতেহার প্রণয়ন এবং গোপনীয়তা রেখে পোলিং এজেন্ট নিয়োগের কাজ। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় গ্রেফতার এড়িয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়ায় বিএনপির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ দিকে প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও পেশাজীবী নেতাদেরও মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ইতোমধ্যে বিএনপি মনোনীত তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে সমর্থন দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের দুই প্রার্থীই জানালেন তারা নির্বাচনী প্রচারণা কৌশল ও এজেন্ডা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন। এ নিয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারাও কাজ করছেন। গত কয়েক দিন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। নেতাকর্মীদের পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি দিকনির্দেশনাও দেন দুই তরুণ নেতা। পরামর্শ নেন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের। এ দিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দলটি। এ ছাড়া গ্রেফতার আতঙ্কসহ নির্বিঘেœ প্রচার চালানো ও ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি নাÑ তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন তারা। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হবে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানান, গ্রেফতার আতঙ্কসহ বিরূপ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সেটা তারা আবারো প্রমাণ করবেন। তবে এই নির্বাচনকে জনগণের কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ হিসেবেও নিচ্ছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সরকারের দুর্নীতির নানা অনিয়মের কথা ঢাকাবাসীর কাছে তুলে ধরতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।

একাধিক কমিটি গঠন : ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দক্ষিণ সিটির নির্বাচন পরিচালনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং উত্তর সিটিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে দু’টি পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। দক্ষিণে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমন্বয়কারী হিসেবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং সদস্য সচিব হিসেবে থাকছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। সদস্য হিসেবে রয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারি নির্যাতন, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দিকে উত্তরের কমিটিতে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক থাকছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আর সমন্বয়ক হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং সদস্য সচিব হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান থাকছেন। এ ছাড়া সাতজনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

নির্বাচনে সাংস্কৃতিক প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছেন চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও অভিনেতা আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল। টেলিভিশনের টকশোতে যেসব দলীয় নেতা অংশ নিচ্ছেনÑ তাদের সমন্বয়ের জন্য নজরুল ইসলাম খান ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি কাজ করবে। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দুই মেয়র প্রার্থী তাদের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বাসযোগ্য নগরী গড়তে ১০০ বছরের ভিন্ন ভিন্ন মাস্টারপ্ল্যান থাকবে ইশরাক হোসেনের ইশতেহারে। ‘বাসযোগ্য ঢাকা-ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকীকরণের পথে’ এ সেøাগানে মাঠে নামবেন তিনি। অন্য দিকে তাবিথ আউয়াল ‘নতুন প্রজন্ম-নতুন ঢাকা’-এ সেøাগান সামনে রেখে প্রচার চালাবেন। গণসংযোগে এবার প্রাধান্য পাবে ডিজিটাল প্রচারণা। তরুণ ভোটারদের টানতে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্নরূপে নিজেদের উপস্থাপন করবেন প্রার্থীরা। নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, মোবাইল ফোনে চালানো হবে ডিজিটাল প্রচারণা। শুধু লেখা বার্তা নয়, ভিডিওচিত্রের মাধ্যমেও ভোট চাওয়া হবে। বেসরকারি টেলিভিশনে ধানের শীষে ভোট চেয়ে দুই সিটির জন্য ভিন্ন টিভি (বিজ্ঞাপন) প্রচারেরও পরিকল্পনা রয়েছে। দলের অফিসিয়াল পেজে নগরের বিভিন্ন সমস্যা এবং ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় মেয়রদের ব্যর্থতার চিত্র নিয়ে ডকুমেন্টরি প্রচার করা হবে। প্রচারণায় ভিন্ন মাত্রা আনতে তৈরি করা হয়েছে একটি ‘ক্লিপ সং’।

জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, অতীতে ভোটের অনিয়ম, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতিসহ সরকারের ব্যর্থতার ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রচারে নামবে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামবেন। গণসংযোগের লক্ষ্যে জোটের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখনো প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। তার আগেই প্রার্থীদের চাপ দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তা হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? নির্বাচন অর্থবহ ও সুষ্ঠু করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। আমরা নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মকৌশল নিয়ে অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। আজকেও আমরা বসে কর্মকৌশল চূাড়ন্ত করব। সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব কিছু সময়মতো আপনারা জানবেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us