পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মোড়!
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন কর্মকর্তা অ্যালিস ওয়েলস রোববার চার দিনের সফরে পাকিস্তানে এসেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান তালেবানের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির আগের এই সফরটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক প্রধান উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস নয়া দিল্লি থেকে ইসলামাবাদ আসেন। তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের মতে, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন ওয়েলস। তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করবেন। ইসলামাবাদে তার সম্পৃক্ততার প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে যে তার হাতে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক উত্তেজনাসহ অনেক ইস্যু রয়েছে।
তবে তার মূল বিষয় হবে আফগান তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আসন্ন শান্তিচুক্তি। তালেবান সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সহিংসতার মাত্রা হ্রাস করবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তালেবানের সাথে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়টি প্রথমে প্রকাশ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি, ওয়াশিংটন সফরকালে। তিনি সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সাথেও ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন।
চলতি মাসের শেষ দিকে চুক্তিটি সই হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চ পর্যায়ের সফর হতে পারে পাকিস্তানে। আর তা হতে পারে শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। ওয়েলস এ বিষয়টি নিয়েও পাকিস্তানে আলোচনা করবেন।
ওয়েলসের সফরকালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হবে। তা হলো ইসলামাবাদ ও দিল্লির মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা ও ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মিরের পরিস্থিতি।
দিল্লি থেকেই ইসলামাবাদ আসার কারণে তিনি এ ব্যাপারে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে সুনির্দিষ্টভাবেই আলোচনা করতে পারবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
তিনি সম্প্রতি কাশ্মিরে রাজনীতিবিদদের আটক ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত আফগান শান্তি চুক্তির ব্যবস্থা করার কাজটি সহজ করতে ভূমিকা পালন করছে পাকিসতআন। এর বিনিময়ে ভারত যাতে অধিকৃত-কাশ্মিরে নির্যাতন থেকে বিরত থাকে, সেজন্য ভারতকে রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়েলসের পাকিস্তানে অবতরণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে ভারত যদি সীমান্তরেখা জুড়ে যুদ্ধবিরতি অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করতে থাকে, তবে পাকিস্তানি নিস্ক্রিয় দর্শক হয়ে থাকবে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে ভারত ‘ফলস ফ্লাগ অপারেশন’ চালাতে পারে।
এই বিবৃতির সময়ে মনে হয় যে তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ সম্পর্কে বার্তা দিতে চাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রাথমিক মধ্যস্ততার প্রস্তাবের পর যুক্তরাষ্ট্র মোটামুটিভাবে এই অবস্থানে থাকে যে কাশ্মির হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বিষয়। ট্রাম্প আগামী মাসে ভারতে প্রথমবারের মতো সফর করার প্রস্তুতি নিতে থাকার প্রেক্ষাপটে এই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিপক্ষীয় ফ্রন্টে পাকিস্তান সম্ভবত এফএটিএফ গ্রে তালিকা থেকে তার নাম অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইবে। আগামী মঙ্গলবার বেইজিংয়ে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেশি বলেছেন যে এফএটিএফ তালিকা থেকে পাকিস্তানের নাম বাদ দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করতে হবে। কারণ এই বিশ্ব সংস্থার শর্তগুলো পূরণ করতে পাকিস্তান অনেক কিছু করেছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন