যে জীবাণু রোগ সারায়

মুনীর তৌসিফ | May 04, 2020 09:21 am
যে জীবাণু রোগ সারায়

যে জীবাণু রোগ সারায় - সংগৃহীত

 

 শত শত কোটি রোগবীজের বসবাস আপনার শরীরে। এগুলোকে শত্রু ভাবি। কিন্তু অনেক রোগবীজ তথা রোগজীবাণু আছে আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সে জন্য আমাদের উচিত এসব রোগজীবাণুর বসত ভেঙে দেয়া।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের প্রতিটি দেহকোষ রয়েছে মোটামুটি ১০টি এক কোষী মাইক্রব তথা রোগবীজবাহী। আমাদের শরীরের নানা জায়গা রয়েছে ১৮০ ট্রিলিয়নের (১ ট্রিলিয়ন=দশ লাখের ত্রিঘাত, ১০০০০০০৩; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দশ হাজারের ত্রিঘাত, ১০০০০৩) মতে ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও প্রটোজোয়া (এক কোষী আদিপ্রাণী)। এগুলো আমাদের দেশেই বসবাস করে খায়দায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়, বংশবিস্তার করে, মারা যায়।

হ্যান্ড সেনিটাইজার কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রাংথের মাউথ সম্পর্কে আতঙ্কিত হওয়ার আগে একটি বিষয় জেনে রাখুন : গত পাঁচ বছরে পরিচালিত প্রচুর সংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের আপনা আপনি মাইক্রোবাইয়েল হিচহিকারগুলোকে সম্মিলিতভাবে বলা হয় হিউম্যান মাইক্রোবায়োটা। এটি আমাদের শরীরের ওজনের ১-২ শতাংশের ওজনের সমান। এই হিউম্যান মাইক্রোবায়োটা আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর আমরা এগুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে নিজেদের ধ্বংসই ডেকে আনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইয়ের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ উইনস্টক বলেছেন ‘আমাদের শরীরে যেসব মাইক্রো অর্গানিজম তথা অতি ুদ্রপ্রাণ অণুজীব বহন করি সেগুলো না বুঝে মানুষের স্বাস্থ্য ও রোগবালাই সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। এ জন্য ব্যাপকভাবে জানা দরকার পুরো মাইক্রো অর্গানিজম কমিউনিটিকে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের দেহে বসবাস করে কোন মাইক্রোব তা জানতে পারলে এবং এ মাইক্রোব সম্পর্কে ভালো করে জানতে পারলে আমরা জানতে পারব মাইক্রোব ও রোগের মধ্যে সম্পর্ক কী। যেমন আমরা জেনেছি মোটা হয়ে যাওয়া ও কোহুনের মধ্যেকার সম্পর্ক।’

আমাদের দেহের মাইক্রোব, বিশেষ করে ১০ হাজারের মতো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি অবশ্যই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেমন ক্রোহন ক্ষতি করে মুটিয়ে যাওয়া, হাঁপানি ও হৃদরোগীদের। সম্ভবত এটি মানুষকে মনমরা করেও তোলে। আমাদের ুধার পরিমাণ কত বেশি কিংবা কত হবে, এর ওপরও এসব ব্যাকটেরিয়ার একটা প্রভাব আছে। কোন খাবারের প্রতি আমরা আগ্রহী হবো, সেখানে এসব ব্যাকটেরিয়ার খবরদারি রয়েছে। এগুলো ভিটামিনকে বিশ্লেষণ করে। কত দ্রুত ওষুধের বিপাক চলবে, যেমন প্যারাসিটামল কতক্ষণে বিপাক হবে, এর ওপরও প্রভাব আছে এসব ব্যাকটেরিয়ার। ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে এসব নানা তথ্য জানার পর বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, মাইক্রোবায়োটা উত্তেজিত হলে কিংবা উত্তেজিত কমানো হলে এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যকে অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পাবে, এমনকি শরীরে জন্ম দিতে পারে কোনো রোগের।

ভালো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবেন না
ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠী আমাদের শরীরে কতটুকু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা সঠিকভাবে জানার কাজটি এখনো চলমান গবেষণার বিষয়। কিন্তু একটি বিষয় এরই মধ্যে স্পষ্ট : দশকের পর দশক ধরে আমরা জানি বা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, তা ভয়াবহভাবে ভুল পথে চলছে। রোগ সৃষ্টিকর মাইক্রোবগুলোকে বিলুপ্ত করে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে আমরা কার্পেট বম্বিং করে চলেছি মাইক্রোবায়োটার ওপর। আমরা ঠাণ্ডা দমনে অ্যান্টিবায়োটিক নেই, যদিও অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট ভাইরাসের বিরুদ্ধে একদম অকেজো। ঠাণ্ডা দমাতে আমরা খাই অ্যান্টিবায়োটিক ট্রিটেও গোশত। এ ক্ষেত্রে হ্যান্ড-স্যানিটাইজারের ব্যবহার দেখবেন সব জায়গায়। এই যে জীবাণুবিরোধী যুদ্ধ, এর ফলে কিন্তু আমাদের উপকারী জীবাণুগুলো ধ্বংস করে ফেলছি আমরা।

একটি উদাহরণ : ব্যাকটেরিয়াম ‘হেলিকোব্যাকটর পাইলরি’ আলসারের জন্ম দেয়। পাকস্থলীর ক্যান্সার সৃষ্টিতে এর ভূমিকা আছে। ২০১১ সায়েন্স সাময়িকী এক খবরে জানিয়েছে এক সময় প্রায় সবার অন্ত্রে এই ব্যাকটেরিয়র উপস্থিতি ছিল। এখন মাত্র ৬ শতাংশ শিশুর মধ্যে এ ব্যাকটেলিযা পাওয়া যায়। সম্ভবত এর কারণ ব্যাপক হবে অ্যান্টিবায়োটিক ও আন্টিমাইক্রোবাইয়েল ব্যবহারের ফলে এমনটি ঘটেছে। এ কারণেই হয়তো এখন আগের চেয়ে আলসার রোগীর সংখ্যা কমেছে। আলোর ঝলকানির নিচেও থাকে অন্ধকারের ছোঁয়া। ‘এইচ পাইলরি’ প্রতিহত করতে পারে হাঁপানি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গন মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, যাদের শরীরের এই এইচ পাইলরি নেই, তারা শৈশবেই শিকার হতে পারে হাঁপানির। আর যাদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া তাদের এ সম্ভাবনা কম। ২০১১ সালে সুইস বিজ্ঞানী একদল ইঁদুরের অর্ধেকের দেহে ব্যাকটেরিয়াম সংক্রমণ ঘটান। বাকিগুলোকে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় রাখেন। তারা সব ইঁদুরের ওপর ছড়িয়ে দেন ধুলা ও অন্যান্য এলার্জেন তথা এলার্জি সৃষ্টিকর কিছু। যেসব ইঁদুরের দেহে এইচ পাইলরি ছিল সেগুলোই সুস্থ থেকে যায়। বাকি ইঁদুরগুলো ব্যাপক হাঁপানি ও জ্বালাযন্ত্রণার শিকার হয়। এইচ পাইলরি ঠিক কিভাবে হাঁপানি প্রতিহত করে, তা এখনো রহস্যঘেরা। কিন্তু গবেষকেরা মাইক্রোবায়োটা ও অন্যান্য রোগের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের গবেষণায় বেশ এগিয়ে গেছেন।

আপনার ব্যাকটেরিয়াকে খাবার দিন
কয়েক বছর আগে ড. জেফরি গর্ডনের নেতৃত্বে সেন্ট লুইয়ের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, গোটা ইঁদুর ও চর্মসার ইঁদুরের অন্ত্রের সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের মাইক্রোব রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাকটেরিয়া কি মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে? সে বিষয়টি জানার জন্য তিনি মোটা ইঁদুরের অন্ত্রে থাকা ‘কার্মিকিউটস’ ব্যাকটেরিয়াকে ড. গর্ডন হালকা-পাতলা ইঁদুরের অস্ত্রে স্থানান্তর করেন। আর এই হালকাদেহী ইঁদুরকে আগের স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে বেশি খাবারও দেয়া হয়নি। কিন্তু দেখা গেল এই হালকাদেহী ইঁদুরগুলোর ওজন বাড়তে শুরু করেছে। কামিকিউটস ব্যাকটেরিয়া খাবার থেকে কিলোজেল মুক্ত করে অন্ত্রের সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ব্যাকটেরোই ডাইটের তুলনায় আরো ভালো করে। আপনার অন্ত্রের কামিকিউটস ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করিয়ে নিজেকে মোটা করে তুলতে পারেন। আমরা কতটুকু কার্যকরভাবে খাবারের বিপাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারি, তাতে পরিবর্তন আনতে পারে কিছু মাইক্রোব। এই অভিমত কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী রব নাইটের। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন মাইক্রোবাইয়াম নামের মাইক্রোবানোটার জেনেটিকসের ওপর।

এ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে কী করে আপনার বন্ধ কিলোজৌল কমিয়ে স্লিম থাকতে পারেন। যখন আপনি ব্যাকরিতে যান আনপার ওজন বাড়িয়ে তুলতে। মুটিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুধু কিলোজৌলের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে মাইক্রোবায়মের ওপর। বললেন সিকাগো ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের ড. ইয়াং ঝিন ফু। ইঁদুরের মতো ভারী লোক তো হালকা লোকদের চেয়ে ব্যাকটেরিয়াই ডেটের তুলনা কার্মিকিউটস ব্যাকটেরিয়া বেশি পেতে চান।

আরেকটি উদাহরণ : অন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া পিওয়াই ওয়ারি নামের একটি যোগ উৎপাদন করে, যা আপনাকে পূর্ণতা অনুভব করতে দেয় এবং আপনার খাবার কমিয়ে দেয়। এসব ব্যাকটেরিয়ার অনুপস্থিতিতে আপনার মগজ স্টবা ইটিং সিগন্যাল পায় না। আলমার সৃষ্টির বিখ্যাত ব্যাকটেরিয়া পাইলরি পাকস্থলীর ঘ্রোলিন উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলার একটি হরমোন। বেশ কয়েকটি ল্যাবরেটরি দেখতে পেয়েছে, যেসব লোকের অন্ত্রে ঘ্রোলিনের চেয়ে এইচ পাইললি গমা হয়, তাদের কম ুধা পায়। উল্টো দিকে এইচ পাইলরির পরিমাণের চেয়ে ঘ্রোলিনের পরিমাণ বেশি থাকে তারা খায় পরিমাণে বেশি।

এ প্রেক্ষাপটে সবার প্রশ্ন ‘কী করে আমরা হালকাদেহী বন্ধুর অন্ত্রে জমা মাইক্রোব পেতে পারি?’ বিজ্ঞানীরা এখনো তা জানেন না। তবে তারা এ ব্যাপারে কিছু ধারণাসূত্র পেয়েছেন। স্লিম থাকার সফল সংশ্লিষ্ট ব্যাকটেরোইডেট ধ্বংসবিস্তার করে ফ্রাকটান, শতমূলীর যৌগ, পেঁয়াজ ও রসুনের উপস্থিতিতে এ অভিমত জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট অ্যানড্রু গেউইটজের। অপর দিকে ব্যাকটেরোইডেট বেশি থাকলে মানসিক পীড়া কমে। এ শোক মনে হয়, মানসিক পীড়নও মুটিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা সবেমাত্র উদঘাটন করতে শুরু করেছেন, কী করে অন্ত্রে থাকা স্লিমিং ব্যাকটেরিয়ার বেড়ে চলা বাড়ানো যায় প্রোবায়েটিক সাপ্লিমেন্ট ও খাবার ব্যবহার করে। এসব ধারণা এখন তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে। অতএব এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খোঁজে এখনই ফার্মেসিতে যাবেন না কেউ।

অ্যান্টিবায়োটিক কি আমাদের মোটা করে?
অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যাওয়ার সুপরিচিত সমস্যাকে ছাপিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আমাদের ঝোঁকের একটি নিম্নমুখী প্রবণতাও আছে। যুক্তরাজ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় ১১ হাজার ৫৩২ জন শিশুকে সাধারণ অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে দেয়া হয়। যেমন কানের সংক্রমণে। পাঁচ মাস পর দেখা গেল তাদের উচ্চতাদৃষ্টে অন্য শিশুদের তুলনায় ওজন বেড়ে গেছে, ৩৮ মাসে তাদের ওজন আরো ২২ শতাংশ বেড়ে গেছে। তারা পরবর্তী সময়ে মুটিয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা আছে। সেজন্য আমাদের উচিত অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করা।

বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং মোটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া একটি কোইন্সিডেন্স বা যুগপৎ সঙ্ঘটনা শিশু বয়সে অ্যান্টিবায়োটিকে বেশি ব্যবহার ওই শিশুকে বড় হলে মোটা হওয়ার সমস্যায় ফেলতে পারে। এ কারণেই কোনো কোনো দেশের কৃষকেরা পশুর খাবারে অ্যান্টিবায়োটিক মেশায়। এই ওষুধ পশুর পেটের ভেতরে ব্যাকটেরিয়াকে পাল্টে দেয়, যা পশুর খাবার থেকে আরো ভালোভাবে কিলোজৌল বের করে আনতে পারে। এর ফলে এসব পশু মোটাতাজা হয়ে ওঠে।

ভালো জীবাণুর শুরু হয় কোথায়
ব্যাকটেরিয়ার সূচনা ঘটে মানুষের জন্মের সাথে। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব আপনার দেহে আসে আপনার মায়ের চামড়া থেকে (যদি আপনার জন্ম হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে) অথবা মায়ের যৌন পথ বা বার্থ ক্যানেল থেকে। প্রথমে আপনার সারাদেহে যে মাইক্রোবায়োটা থাকে তা আপনার মায়েরটির সদৃশ। আমরা জানি না, কত দ্রুত চামড়া, অন্ত্র ও নাকে থাকা মাইক্রোবের পরিবর্তন ঘটে। তবে দুই বা তিন বছরে এগুলোর পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে তারা পূর্ণবয়স্ক হয়ে ওঠে। এগুলোর পরিবর্তন ঘটে বায়ু, পানি, পোশাক ও খাবার থেকে মাইক্রোব নিয়ে।
শেষাংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যা খাই তা আমাদের অন্ত্রের বা পেটের ভেতরের মাইক্রোবগুলো আকার দেয়। ২০১০ সালে পরিচালিত জাপানিদের মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জাপানিদের মধ্যে এমন ব্যাকটেরিয়া আছে যা সমুদ্রের এক ধরনের আগাছা নূরি হজম করে ফেলে। পাশ্চাত্যের লোকদের মধ্যে এ ব্যাকটেরিয়া নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? জাপানিরা প্রচুর পরিমাণে সমুদ্রের আগাছা খায়, যাতে থাকে ম্যারিন ব্যাকটেরিয়া, যা নূরি হজম করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানকেডি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অণুজীব বিজ্ঞানী জাস্টিন সোনেনবাস বলেছেন আপনি কি খাবার খান, তাই আপনার অন্ত্রের বা উদরের ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্ণয়ক।

উদর সুস্থ রাখুন
কেউ যদি সুস্থ মাইক্রোবায়োটার ব্যাপারে আগ্রহী হন, তবে তাকে কোথায় ছাড়তে হবে, সে ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে একটি বাধা হচ্ছে- কেউ জানে না একটি আদর্শ হিউম্যান মাইক্রোবায়োম কী? বললেন অ্যানথ্রপোলজিস্ট জেফ লিচ। ২০১২ সালে তিনি চালু করেন, ‘অ্যামেরিকান গাট’, যার বাংলায় নাম দেয়া যায় আমেরিকান অন্ত্র বা উদর। এটি একটি রিসার্চ প্রজেক্ট। এতে আমেরিকানদের আহ্বান জানানো হয় একটি কিট কেনার জন্য, যা মূলত একটি সুপার লং কিউ-টিপ, যা ব্যবহার করা হয় ব্যবহৃত টয়লেট পেপারে থাকা বস্তু শুষে নিয়ে তা বিশ্লেষণের জন্য পাঠাতে। একটি প্রশ্নমালার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অভ্যাস ও জীবণের ধরন সম্পর্কে নানা তথ্য চাওয়া হয়, তাদের পোষা প্রাণী কী, সর্বশেষ কখন তিনি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছেন, বিগত কয়েক দিন কী কী খাবার খেয়েছেন এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন। এর বিনিময়ে তারা পান তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবের তালিকা এবং জানতে পারেন কী করে তা অন্য লোকদের সাথে তুলনা করা যায়।

যদ্দিন না বিজ্ঞানীরা সুস্থ মাইক্রোবায়োটার রিসার্প দিতে সক্ষম হবেন, তদ্দিন তাদের পরামর্শ থাকবে একান্ত বাধ্য না হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। কফ কিংবা সর্দি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না।
পশুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কথা ভাবুন। জেফ লিচ বলেন- উভয় ক্ষেত্রে--- প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা বয়ে আনতে পারে ক্ষতিকর পরিণতি।

আপন উদর রক্ষার ৩ অ্যাকশন
শিশুরোগ চিকিৎসক ড. জিম সিয়ার্স বলেন, রোগীদের উচিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব কবলে চিকিৎসককে প্রবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। ভালো ব্যাকটেরিয়া অন্ত্র বা উদর রক্ষা করে এবং ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধ করে। যেমন ডাইরিয়া প্রতিরোধ করে। সবচেয়ে ভালো হয়, অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক পরিহার করতে পারলে। জানালেন সিয়ার্স।

নজর রাখুন অপেক্ষা করুন : আমেরিকান অ্যাকগেম অব পেড্রিয়াট্রিকসের হালনাগাজ নির্দেশিকায় সুপারিশ করা হয়েছে নাক ও কানের কম সংক্রমণের রোগীদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার শুরুর আগে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কোর্স হলো কানের ড্রপ ব্যবহার করে কয়েক দিন অপেক্ষা করা। বললেন ড. জিম সিয়ার্স।

এটি গলাকে জীবাণুরোধী করে না : ভাইরাসের কারণে গলায় সংক্রমণ হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। আপনার যদি কফ হয়, গলা খুশখুশ করে, কিন্তু টনসিলে কোনো সমস্যা না থাকে ও জ্বর না হয়, তবে এটি ভাইরাসের একটি সাধারণ প্রভাব। তা সেরে যাবে কোনো ওষুধ সেবন না করেই।


প্রশ্ন করুন বুদ্ধিমত্তার সাথে : অনেক রোগী আসেন অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা নিয়ে। এর ফলে চিকিৎসকেরাও চাপে থাকেন অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার ব্যাপারে। এর বদলে চেষ্টা করুন, আমি আমার ঠাণ্ডা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এটি নাকে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপনি যদি সত্যি সত্যিই আমাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া নিতান্তই প্রয়োজন বোধ করেন, শুধু তখনই আমাকে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ দেবেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us