করোনার মহামারিতে কেমন আছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকেরা!

দেবশ্রী দাসগুপ্তা | May 05, 2020 06:37 am
পেনাঙের একটি নির্মাণকাজ এলাকায় বিদেশী নির্মাণশ্রমিকেরা

পেনাঙের একটি নির্মাণকাজ এলাকায় বিদেশী নির্মাণশ্রমিকেরা - সংগৃহীত

 

আয়েশা (তার আসল নাম নয়), নারায়ণগঞ্জ জেলার ৩৫ বছর বয়স্কা নারী। এখন তিনি বেশির ভাগ সময় নামাজ পড়েই কাটান। এই কঠিন সময়ে নামাজই তাকে আশাবাদী রাখে।

তার স্বামী মালয়েশিয়ার একটি নির্মাণশিল্পে অবৈধ শ্রমিক। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবে ভাগ্য ভালো, গত সপ্তাহে, কোভিড-১৯ পরীক্ষা নেভেটিভ এসেছে।

তিনি প্রতি মাসে তার পরিবারকে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে পাঠান। কিন্তু বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি কাজ করতে পারছেন না। তাছাড়া ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তিনি চার মাস ধরে টাকাও পাঠাতে পারছেন না।
এখন আরো আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছৈ, তাকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করতে পারে।
আয়েশা ফোনে স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, তার স্বামী ঠিকমতো খেতে পারে না, আর নিজের অবস্থা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার কারণে তার ও আমাদের জন্য অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়েছে।

সাত সদস্যবিশিষ্ট পরিবারটির এখন একমাত্র ভরসা তার ১৮ বছরের ছেলের মাসে চার হাজার টাকা আয়। ছেলেটি তার এক স্বজনের সাথে মাছের ব্যবসা করে। আয়েশা বলেন, আল্লাহই কোনোভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এক কোটিরও বেশি কায়িক শ্রমের দেশ বাংলাদেশে আয়েশার মতো পরিবারগুলো কোভিড-১৯ বিপর্যয়ে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশী শ্রমিকেরা দেশে ২৫.৪৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী আয় বেশ কমে গেছে। ফলে তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
ঢাকার কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রগ্রাম ২০ মার্চ থেকে তাদের হেলপলাইনের মাধ্যমে অভিবাসী পরিবারগুলোর কাছ থেকে প্রায় ১৬ শ’ ফোন পেয়েছে। ফোন এখনো তারা পেয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, বেশির ভাগ ফোনের বিষয়বস্তু হলো, স্বামী বা ছেলে টাকা পাঠাতে না পারায় পরিবারগুলো মারাত্মক খাবার সঙ্কটে আছে।

তিনি বলেন, এসব পরিবারের জন্য নতুন সমস্যা হলো, তারা তুলনামূলক স্বচ্ছল সামাজিক মর্যাদায় থাকায় সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করে এবং নিম্ন আয়ের গ্রুপভুক্ত না হওয়ায় তারা সরকারি সহায়তা পাওয়ার অধিকারীও হয় না।
স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য অনেক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। এর একটি হলো ফিরে আসা শ্রমিকদের সহায়তার জন্য দুই বিলিয়ন টাকার একটি তহবিল গঠন। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের খাদ্য প্রদানের জন্য বিদেশী মিশনগুলোতে ৮০ মিলিয়ন টাকা প্রদান।
আরো ঘোষণা করা হয়েছৈ যে অবৈধ বা বৈধ কোনো শ্রমিক যদি করোনাভাইরাসে মারা যায়, তবে তার পরিবার তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।
তবে এসব পদক্ষেপ অপর্যাপ্ত বিবেচিত হচ্ছে। হতভাগ্যের শিকার অভিবাসী ও তাদের পরিবারগুলো আরো তহবিল ও বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা বলছেন।

নাসিম আখতারের স্বামী থাকেন সিঙ্গাপুরে। চার সদস্যবিশিষ্ট তার পরিবারটি থাকে মুন্সীগঞ্জে। তারাও সমস্যায় পড়েছেন। তার স্বামী জুয়েল এসকেলেটর ম্যাকানিক হিসেবে কাজ করেন। গত মাসে তিনি বেতন পেলেও চলমান সার্কিট ব্রেকারের জন্য দেশে টাকা পাঠাতে পারেননি।

তিনি অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে ভাড়া করা বাসায় থাকেন এবং খাবারের জন্য তাকে ব্যয় করতে হয়। তিনি বলেন, সামনে অনিশ্চয়তার সময় থাকায় তাকে হাতে টাকা রাখতে হচ্ছে। তিনি হয়তো সার্কিট ব্রেক ওঠে গেলে ২০০ ডলার (স্বাভাবিক সময়ের এক-তৃতীয়াংশ) পাঠাতে পারবেন।
আখতার স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, আমরা কোনোমতে তিন বেলার খাবার সংস্থান করতে পারছি।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এখন তা না পাওয়ায় কঠিন অবস্থায় পড়ে গেছি। আমরা যে সমস্যায় পড়েছি, তা লোকজন বিশ্বাস করতে চায় না।
আর সিঙ্গাপুরে জুয়েল আশা করছেন, সার্কিট ব্রেকার সময় তিনি তার ন্যূনতম বেতন পাবেন বলে আশা করছেন। আর তাতে করে তিনি তার পরিবারকে চালিয়ে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারকে আশ্বস্ত করে যাচ্ছি যে শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

স্ট্র্যাইটস টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us