কেন হিন্দু ধর্ম ছেড়েছিলেন আম্বেদকর?

অদ্রিজা রায়চৌধুরী | May 07, 2020 02:05 pm
৩ লাখ ৬৫ হাজার অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন আম্বেদকর

৩ লাখ ৬৫ হাজার অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন আম্বেদকর - সংগৃহীত

 

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩ লাখ ৬৫ হাজার দলিত অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দুত্ব ছেড়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণ ভারতের দলিত আন্দোলনে নতুন সাড়া জাগায় এবং হিন্দুত্বের চতুর্বর্ণ প্রথার শৃঙ্খল থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে দলিতদের নিজস্ব স্বর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আম্বেদকর দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দুত্বের সমালোচক ছিলেন এবং ভারতীয় সমাজের পক্ষে একে ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে বোধ করতেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলছি, মানুষ ধর্মের জন্য, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। মানুষের মত ব্যবহার পেতে চাইলে ধর্মান্তরিত হোন”।

এরপর ২০ বছর ধরে তিনি কোন ধর্ম তার পক্ষে সবচেয়ে ভালো, তা স্থির করেন। তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে ধর্মেই তিনি যান না কেন, তা হত হবে ভারতের মাটির ধর্ম। শেষ পর্যন্ত তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে বেছে নেন এবং বৌদ্ধ ধম্মের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করেন, ধর্মের কিছু অংশ বদলে নেন, যেগুলি তার বিশ্বাসমতে বৌদ্ধধর্মের সার্বিকতার পরিপন্থী।

আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গবেষকরা প্রচুর কাজ করেছেন। কেউ মনে করেন, এ ছিল আম্বেদকরের রাজনৈতিক পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলিতদের আলাদা নির্বাচকমণ্ডলীর দাবি করে আসছিলেন, কিন্তু তাতে কৃতকার্য হননি। গেইল ওমভেটের মতো সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, তার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ ছিল এ সম্পর্কিত রাজনৈতিক প্রতিবাদ।

দ্বিতীয়ত, আরেকটা মতামত রয়েছে, যে তার এই ধর্মান্তরণ ছিল হিন্দুত্ব সম্পর্কে তার সারা জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বও আম্বেদকরের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল- যাঁদের মধ্যে ছিলেন মৌর্য্য সম্রাট অশোক এবং দ্বাদশ শতাব্দীর দক্ষিণ ভারতের দলিত শহিদ নন্দনর, যিনি হিন্দুত্বের মতবাদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, আম্বেদকর সত্যিই বিশ্বাস করতেন বৌদ্ধধর্ম যুক্তি ও আধুনিকতার স্পিরিট বহন করে। আম্বেদকরের যুক্তি, নৈতিকতা ও ন্যায়ের জটিল চাহিদাগুলি তার বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণের মধ্যে দিয়ে পূরিত হয়েছিল বলেই মনে করা হয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার তথ্য

ডক্টর ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৪ এপ্রিল ১৮৯১ - ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যবহারশাস্ত্রজ্ঞ (জ্যুরিস্ট), রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, বাগ্মী, বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, পণ্ডিত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিপ্লবী ও বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী। তিনি বাবাসাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইনি ভারতের সংবিধানের মুখ্য স্থাপক। ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি. ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটের দ্বারা তিনি "শ্রেষ্ঠ ভারতীয়"ও নির্বাচিত হন।

পরিচিতি
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ভারতের গরিব “মহর” পরিবারে (তখন অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে গণ্য হতো) জন্ম গ্রহণ করেন। আম্বেদকর সারাটা জীবন সামাজিক বৈষম্যতার (Social Discrimination), “চতুর্বর্ণ পদ্ধতি”-হিন্দু সমাজের চারটি বর্ণ এবং ভারতবর্ষের অস্পৃশ্য (Untouchables or Untouchables community) প্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং হাজারো অস্পৃশ্যদের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম (Theravada Buddhism) স্ফুলিঙ্গের মতো রূপান্তরিত করে সম্মানিত হয়েছিলেন। আম্বেদকরকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর (Posthumous) “ভারতরত্ন” - ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় উপাধি'তে ভূষিত করা হয়। বহু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, ভারতের মহাবিদ্যালয় শিক্ষা অর্জনে আম্বেদকর প্রথম “সমাজচ্যুত ব্যক্তি” (Outcast) হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন।

অবশেষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় (লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স) থেকে আইনে ডিগ্রি (বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উপাধি) লাভ করার পর, আম্বেদকর বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং কিছু বছর তিনি আইন চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, পরে তিনি ভারতের অস্পৃশ্যদের সামাজিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতার উপর ওকালতির সময় সমসাময়িক সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। কিছু ভারতীয় বৌদ্ধালম্বীদের দ্বারা তিনি “বোধিসত্ত্ব” (গৌতম বুদ্ধের পূর্ব জন্ম) উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন, যদিও তিনি নিজেকে “বোধিসত্ত্ব” হিসেবে কখনো দাবি করেননি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us