কিভাবে হানা দেয় পঙ্গপাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 30, 2020 10:48 am
পঙ্গপাল

পঙ্গপাল - সংগৃহীত

 

খরিফ শস্যের ফলনের সময়ে পঙ্গপাল বংশবিস্তার করলে কেনিয়া, ইথিয়োপিয়া ও সোমালিয়ার চাষিরা মার্চ-এপ্রিলে যে অবস্থায় পড়েছিলেন, তেমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে ভারতকে।

মাঠে ফসল না থাকায় এরা যেকোনো সবুজে হানা দিচ্ছে, এমনকী ভারতের জয়পুরের পার্কে এবং নাগপুরে কমলা বাগিচাতেও
মরুভূমির পঙ্গপাল উর্বর জমিতে কী করছে?

এই ধরনের পঙ্গপাল ঘাসফড়িং শ্রেণিভুক্ত, যারা মরু অঞ্চলে বাঁচে ও বংশবিস্তার করে। ডিম পাড়ার জন্য এদের প্রয়োজন খালি জমি, যা বিস্তীর্ণ সবুজ অঞ্চলে মেলে না। ফলে এরার রাজস্থানে বংশবিস্তার করতে পারলেও গাঙ্গেয় সমভূমি বা গোদাবরী ও কাবেরী বদ্বীপ অঞ্চলে ডিম পাড়তে পারে না। কিন্তু এদের বেড়ে ওঠার জন্য সবুজ এলাকা প্রয়োজন।

একাকী অথবা ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে পঙ্গপাল খুব একটা ভয়ংকর নয়। কিন্তু যখন তারা বড় আকার নেয়, সে সময়ে তাদের প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে, তারা ঝাঁকে পরিণত হয়। একটি ঝাঁকেই এক বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৪০-৮০ মিলিয়ন পঙ্গপাল থাকে, যারা দিনে ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে।

এরা আদত যেখানকার বাসিন্দা, সেই মরুভূমি বা আধা শুষ্ক জায়গা পেলে এরা বড় আকারে বংশবিস্তার করতে পারে। ভাল বৃষ্টিপাতের ফলে যে সবুজের জন্ম হয়, তাও এদের ডিম পাড়া ও বেড়ে ওঠার পক্ষে অনুকূল হতে পারে। এ বছর তেমনটাই হয়েছে।

পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রস্তুতি
এই পঙ্গপালেরা সাধারণতা ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, এরিটেরার মত আফ্রিকার পূর্ব উপকীলের শুষ্ক এলাকায় বংশবিস্তার করে। এ ছাড়া ইয়েমেন, ওমমান, দক্ষিণ ইরান, পাকিস্তানের বালোচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মতো এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও এরা বংশবিস্তার করে ওঠে। এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় মার্চ-এপ্রিলে ভাল বৃষ্টি হয় এবং যার ফলে এরা বংশবিস্তার করে ও বেড়ে উঠতে পারে।এবার রাজস্থানে এরা এসে পৌঁছতে শুরু করেছে এপ্রিলের প্রথম পনের দিনে, যা সাধারণ আগমন সময় জুলাই-অক্টোবরের অনেক আগে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থা তা লক্ষ্য করে এবং রাজস্থানের জয়শলমির ও সুরাটগড়ে, ও পাকিস্তান সংলগ্ন পাঞ্জাবের ফাজিলকায় এদের উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করে। এর পরেই নিজেদের বংশবিস্তারী এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি ঝাঁক এসে পৌঁছয়।

স্বাভাবিক সময় যদি জুলাই-অক্টোবর হয়, তাহলে এরা এত আগে এসে কী করছে?

২০১৮ সালে আরবসাগরে অপ্রত্যাশিত সাইক্লোন ওমান ও ইয়েমেনে আছড়ে পড়েছিল। বিশাল মরু অঞ্চল, যেখানে পঙ্গপালের ডিম পাড়ত, সে জায়গা পরিণত হয়েছিল বিশাল হ্রদে।

পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থার বিজ্ঞানীরা এমন একটা আশঙ্কা করেছিলেন যথন রাজস্থান, গুজরাট ও পাঞ্জাবের কিছু অংশে ২০১৯-২০-তে রবি শস্যের সময়ে অস্বাভাবিক ভাবে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা যায়। কিন্তু তার পর সারা পৃথিবীতে লকডাউনের ফলে এবং পঙ্গপালেরা ইয়েমনে, ওমান, সিন্ধ ও বালোচিস্তানে সক্রিয় থাকার জন্য তেমন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্তমানে যে ঝাঁক দেখা যাচ্ছে এরা তাদেরই উত্তরসূরী এবং এরা ভারতে আসছে খাদ্যের খোঁজে।

কিন্তু এরা আরও পূর্বদিকে যাচ্ছে কেন?

এই ঝাঁকে অপূর্ণ পঙ্গপাল রয়েছে। এরা যে কোনও ফসল দ্রুত খেয়ে ফেলে। প্রায় নিজের সমান ওজনের খাদ্য এরা প্রতিদিন খেতে পারে, যতক্ষণ না পরবর্তী মিলনের জন্য তারা প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু রাজস্থানে এরা পরিমাণমত খাদ্য পাচ্ছে না।

মাঠে ফসল না থাকায় এরা যেকোনো সবুজে হানা দিচ্ছে, এমনকী জয়পুরের পার্কে এবং নাগপুরে কমলা বাগিচাতেও।

একবার বংশবিস্তার শুরু করলে এই ঝাঁকের গতিবিধি হয় বন্ধ হয়ে যাবে, নয়ত ধীর হয়ে যাবে। এরা মূলত রাজস্থানেই বংশবিস্তার করে থাকে।

খাদ্যের সন্ধান ছাড়াও এদের গতিবিধি পশ্চিমি বাতাসের ফলে সাহায্য পাচ্ছে এবং এবার বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত আমফানের জন্য নিম্নচাপের উদয় হওয়ার জন্য তারা সুবিধে পাচ্ছে। পঙ্গপালেরা সাধারণত বাতাস অনুসরণ করে চলে। কিন্তু খুব বেশি ঝঞ্ঝায় তারা ওড়ে না।

ভারতে ফের পঙ্গপালের হানা, মনে করাচ্ছে আতঙ্কের ইতিহাস

এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ তেমন নয়, কারণ রবিশস্য কাটা হয়ে গিয়েছে, এবং খরিফ চাষ শুরু হয়নি। রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা অবশ্য বলেছে, জুলাই পর্যন্ত বেশ কিছু পরপর স্রোত রাজস্থানে পূর্বমুখী হবে এবং তা বিহার ও ওড়িশা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। কিন্তু জুলাইয়ের শেষে পশ্চিমি বাতাসের জেরে এই ঝাঁক রাজস্থানে ফিরে যাবে। বিপদ শুরু হবে তারা বংশবিস্তার শুরু করলে।

৯০ দিনের জীবনচক্রে একটি স্ত্রী পঙ্গপাল ৬০-৮০টি করে ডিম তিনবার পাড়ে। খরিফ শস্যের ফলনের সময়ে পঙ্গপাল বংশবিস্তার করলে কেনিয়া, ইথিয়োপিয়া ও সোমালিয়ার চাষিরা মার্চ-এপ্রিলে যে অবস্থায় পড়েছিলেন, আমাদের তেমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।

এই কীট নিয়ন্ত্রণ করা যায় কীভাবে?

পঙ্গপালের রাতে বিশ্রামের স্থানে অরগানো-ফসফেট কীটনাশক স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ২৬ মে লখনউয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিট্যুট অফ সুগারকেন রিসার্চ কৃষকদের বেশ কিছু কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়। তবে এর মধ্যে দু-তিনটি কীটনাশকের ব্যবহার কেন্দ্র আগেই নিষিদ্ধ করেছে।

রাসায়নিক স্প্রে করার জন্য বিশেষ বন্দুক ব্যবহার করে এই কীট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভারতের এরকম ৫০টি বন্দুক রয়েছে, ব্রিটেন থেকে আরও ৬০টি বন্দুক এসে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us