করোনার যুগে হারিয়ে যাবে লিপস্টিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 30, 2020 03:00 pm
করোনার যুগে হারিয়ে যাবে লিপস্টিক!

করোনার যুগে হারিয়ে যাবে লিপস্টিক! - সংগৃহীত

 

খণ্ড খণ্ড লকডাউন। বাড়িতে অখণ্ড অবসর। মেগা ইভেন্ট নেই। বাণিজ্যিক কনক্লেভ নেই। সেমিনার নেই। অফিস নেই। আউটডোর প্ল্যান নেই। জন্মদিনের পার্টি নেই। বিয়ের অনুষ্ঠান নেই। সর্বপরি, মাস্ক ছাড়া মুখ দর্শনেও না।

অতএব, ‘নেই রাজ্যে’ সাজগোজের বালাইও নেই। সেই কবে খালি হয়েছে ড্রেসিং-ড্রয়ার। হাত পড়েনি সাত রঙের লিপস্টিক বক্সে। আলট্রা ভায়োলেট, ইনফ্রা রেডের কী হলো কে জানে! আদিখ্যেতার আন্তর্জাতিক প্রেমিক রংও বুঝি শুকিয়ে কাঠ! পিঙ্কের কথাই বলছি। আজ কত দিন হলো সাজঘরে দেখা হয়নি তার সঙ্গে। গাঢ়ত্ব হারিয়েছে বোধহয় মেরুনও! আসলে, ঘরণীদের সাজঘরে যাওয়াই যে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯। কদাচিৎ বাড়ির বাইরে পা পড়লেও মুখ ‘সিল’। মানে মাস্কে মুখ ঢাকা। চিবুক থেকে নাসিকার মাঝ বরাবর। অদৃশ্য ঠোঁটের সৌন্দর্য্য। অতপর, সাজঘরে গিয়ে লাভ নেই। ঘরণী, তরুণী মায় কর্মরতাদের এই লাভ-ক্ষতির অঙ্কে এখন ব্যবসা বিপর্যয়ের প্রমাদ গুনছে কসমেটিক্স শিল্প।

লিপস্টিক। প্রসাধনী বাণিজ্যের মূল আধার। ব্যবসার বিপুল ভাণ্ডারে বড় অংশীদার। অর্থনীতির মন্দাতেও মলিন হয়নি তার মহিমা। আয়ের হিসেবে ‘লিপস্টিক ইনডেক্স’ ছিল ঊর্দ্ধমুখী। সেই লিপস্টিকই এখন মাস্কের আড়ালে তার শ্রী ঢেকেছে। অঙ্গ হারিয়ে খোঁড়াতে শুরু করেছে কসমেটিক্স শিল্প। সোজা হয়ে দাঁড়াতে এবার চোখে চোখ রাখছেন উৎপাদনকারীরা। জোর দিচ্ছেন কাজল, আইলাইনার, মাসকারা, কিংবা আইস্যাডোজ তৈরির উপর।

উপমহাদেশে এমনিতেই প্রসাধনী ব্যবসার বহর বৃদ্ধিতে খানিক এগিয়ে চোখ। ঠোঁটের কয়েক ধাপ উপরে। তবে বাজার দখলে চোখ-ঠোঁটের লড়াই চলছিল বেশ সেয়ানে সেয়ানে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের তথ্য বলছে, সাজ-পণ্যের বিকিকিনির হাটে ৩৬ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে আই মেকআপের যাবতীয় আইটেম। সেক্ষেত্রে লিপস্টিকের বাজার এতদিন দাঁড়িয়েছিল ৩২ শতাংশে। এবার আর কোভিড, লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে পারছে না সে। বাজারে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে লিপস্টিক। সঙ্গত কারণেই ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আই মেকআপ পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কসমেটিক্স শিল্প। অকপটে তা স্বীকারও করে নিচ্ছেন নামাজাদা ব্র্যাণ্ডের কর্মকর্তারা।

লোরিয়েল ইন্ডিয়ার ক্রেতা সংক্রান্ত বিভাগের ডিরেক্টর কবিতা অ্যাংরে বলেছেন, ‘লকডাউনে বাড়ির বাইরে কেউ বেরোচ্ছেন না। সামাজিক সব অনুষ্ঠানই এখন নিষিদ্ধ। ফলে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে রূপচর্চার রুচি, রেওয়াজ। মহিলাদের কাছে কদর হারিয়ে ফেলছে লিপস্টিক। চাহিদাও কমছে। আমরাও এখন ঝুঁকে পড়ছি আই মেকআপ পণ্যের ব্যবসার উপর।’

প্রথম সারির প্রসাধনী সামগ্রী বিপণনকারী সংস্থা ‘নায়িকা’র মুখপাত্রের কথায়, ‘ভারতে বরাবরই আই মেকআপ পণ্যের বাজার বড়। এখন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা হলেও লিপস্টিক নিয়ে গেল গেল রব তোলার এখনো সময় আসেনি।’

হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘লকডাউনের জেরে লিপস্টিকের চাহিদা কমেছে ঠিকই। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে গ্রাহকরা তাদের পুরোনো অভ্যাসেই ফিরবেন। লিপস্টিকও ফিরে পাবে তার কদর। সেক্ষেত্রে একটু সময় তো লাগবেই।’

কিন্তু কবে আসবে সেই সময়? হলফ করে বলতে পারছেন কেউই। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এখন অপ্রতিরোধ্য। মাস্ক এখন মুখের ভূষণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলে দিয়েছেন, মাস্কই জীবনের অঙ্গ। তাই যদি হয়, ঢাকা মুখে লিপস্টিকের কী বা প্রয়োজন। তা হলেও লোহা আবিষ্কারের আগে নাগালে আসা এই রূপচর্চার পণ্যকে হারাতে চায় না প্রসাধনী শিল্প।

ইতিহাস বলছে, সম্ভবত পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন সুমেরিয়ানরাই ঠোঁটের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কৌশল আয়ত্ব করে। ক্রমে ক্রমে প্রাচীন মিসর, গ্রিস ঘুরে আধুনিক সভ্যতায় রূপচর্চার অন্যতম স্নেহবস্তু হয়ে ওঠে আজকের লিপস্টিক।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us