ইন্না লিল্লাহর মানে কী, কেন পড়ি?

জামান শামস | Jun 16, 2020 06:43 am
ইন্না লিল্লাহর মানে কী, কেন পড়ি?

ইন্না লিল্লাহর মানে কী, কেন পড়ি? - প্রতীকী ছবি

 

 

কারো মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে আমরা ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ি। কিন্তু এই কথাটার মানে কী এবং এটা কেন পড়ি? এটা কি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া?

রেডিও কিংবা টিভিতে খবরের পাঠক ও মৃত্যু সংবাদ পড়ার সাথে সাথেই ইন্না লিল্লাহ পড়েন। এটাতো আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এমনকি মসজিদে যখন কোনো শোক সংবাদ ঘোষণা করা হয় তখন মৃত ব্যক্তির নামের পর ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলা হয়। আবার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তো কখনো কখনো যানবাহনে মাইকিং করে এই কালাম পড়ে জানাজার ঘোষণা দেয়া হয়।

যেহেতু আরবি আমাদের ভাষা নয়, তাই স্বভাবতই ভেবে নেই এই দোয়া শুধু মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়তে হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এবার আমরা জানার চেষ্টা করি আসলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ মানে কী।

এটি সূরা বাকারার ১৫৬ নাম্বার আয়াত যার সরল অর্থ : ‘ইন্না লিল্লাহ’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য। আর ‘ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- এবং নিশ্চিতই আমাদের তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যেতে হবে।

আয়াতের অর্থটি জানার পর আপনার কি মনে হচ্ছে যে, এই দোয়া পড়লে, তার প্রভাব মৃত ব্যক্তির রূহের ওপর পড়বে এবং মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে। এই দোয়ার সাথে মৃত ব্যক্তির দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ এই দোয়াটি মৃত ব্যক্তির জন্য নয় বরং নিজের জন্যই পড়া হয়।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তবে কেন আমরা এই দোয়াটি পড়ি। উত্তর সহজÑ এই দোয়া পড়ার উদ্দেশ্য হলো, আমরা যেন আমাদের নিজেদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করি। যখন কারো মৃত্যু সংবাদ শুনব, তখন আমরা যেন চিন্তা করে নিতে পারি যে, এভাবে আমরাও হঠাৎ করে, যেকোনো এক মুহূর্তে মারা যেতে পারি। তাই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে বলি- ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো।’ সূরা বাকারা : ১৫৬।
সূরা বাকারার ১৫৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীল মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করে বলেন, ‘তারা কোনো মুসিবতে আক্রান্ত হলে বলে, আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো।’

সুতরাং এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, একজন মুমিন যেকোনো ধরনের বিপদ মুসিবত সামনে এলেই এই আয়াতটি বলবে এবং আল্লাহর ফয়সালা সমর্পিতচিত্তে মেনে নেবে।

বোঝা গেল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়া মানে মৃত মানুষের জন্য দোয়া নয়। নিজেও মারা গিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবোÑ এমন ঘোষণাই এর মাধ্যমে দিচ্ছি। না বোঝার কারণে, হররোজ পড়তে থাকা এরকম সত্য ঘোষণার আয়াত আমাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না।
আমি আমার মতোই আছি। আগে চোর-ডাকাত ছিলাম, এখনো আছি। আগে সুদখোর-ঘুষখোর ছিলাম, এখনো আছি। আগে ওজনে কম দিতাম, ভেজাল মিশাতাম, দরকারি পণ্যের মজুদ করতাম-অভ্যাস এখনো আছে। আগে মিথ্যা বলতাম, গীবত, চোগলখোরি করতামÑ এখনো করি। আগে যেই নাফরমান, জালিম ছিলাম- এখনো আছি। আগে মিথ্যা বক্তব্য, বিবৃতি ও সাক্ষ্য দিতামÑ এখনো দিচ্ছি।

আগে যেসব ঈমানবিরোধী আদর্শ-নীতিকে একমাত্র অনুকরণীয় বলে রাস্তায় শোরগোল করতাম, এখনো করছি। অনলাইন-অফলাইন কোথাও থামিনি। আগের মতোই আছি।

মৃত্যু সংবাদ বা বিপদের কথা শুনে আমিই তো বলি : নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকে আমাকে ফিরতেই হবে। এর ভিন্নতা বা ব্যত্যয় না পূর্বের কারো জন্য ঘটেছে, না পরে কারো জন্য ঘটবে।
এ কথার কোনো প্রভাব আমাদের বাস্তব জীবনে আছে কি? কখনো কি আমি নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করেছি: একদিন এরকম লাশের খাটিয়ায় চড়ে আমার গন্তব্যও তো কবরে হবে। আমারও জানাজা পড়ার জন্য লোকেরা আসবে, কাঁধে তুলে কবরে নিবে, আত্মীয়স্বজন পরমপ্রিয় স্ত্রী সন্তানরা কেউ কবরে হাশরে সাথী হবে না। আমি কি প্রস্তুতি নিয়েছি আল্লাহর সম্মুখে হাজিরা দেয়ার। অন্য মুসলমান ভাই বা বোনের মৃত্যুতে এ কারণেই আমরা ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ি।

লেখক : ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us