রাসূল সা:-এর কষ্টসহিষ্ণুতা

মুহাম্মদ আবদুল গফ্ফার | Jun 17, 2020 06:58 am
রাসূল সা:-এর কষ্টসহিষ্ণুতা

রাসূল সা:-এর কষ্টসহিষ্ণুতা - প্রতীকী ছবি

 

 

হজরত সালমা রা: বর্ণনা করেছেন যে- একদিন হজরত হাসান বিন আলী রা:, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: এবং হজরত জাফর রা:-এর পুত্র এক সাথে তার কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন যে, রাসূলুল্লাহ সা: যে খাবার পছন্দ করতেন, আগ্রহের সাথে যা আহার করতেন, সেরূপ খাবার রান্না করে আজ আমাদেরকে আহার করান। হজরত সালমা রা: তাদেরকে বললেন, প্রিয় বৎসগণ! এখন আর সেই খাবার তোমাদের পছন্দ হবে না। তখন তারা বললেন, অবশ্যই পছন্দ হবে। আপনি রান্না করুন।

তখন সালমা রা: (রাসূলুল্লাহ সা:-এর খাদিমাহ্ ছিলেন) উঠলেন এবং কিছু যব পিষে আটা তৈরি করলেন। তারপর পাতিল চড়িয়ে তাতে আটা, সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া, জিরা এবং অন্যান্য মসলার কিছু গুঁড়া দিয়ে রান্না করে তাদের সামনে দিলেন এবং বললেন, এই ছিল প্রিয়নবী সা:-এর পছন্দনীয় খাবার, যা তিনি আগ্রহের সাথে খেতেন। তথ্যসূত্র : শামায়িলে তিরমিজি-১৭৯/২৭

হজরত আবু হুরাইরা রা: বর্ণনা করেছেন। একবার দিপ্রহরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমি মসজিদের দরজার কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে যাতায়াতকারী সবাইকে জোরে জোরে সালাম দিচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল আমার ক্ষুধার্ত অবস্থা দেখে কেউ আমাকে মেহমান বানাবে। এ অবস্থায় আমার সামনে দিয়ে ওমর এবং আবুবকর রা: বেরিয়ে গেলেন। কেউ আমাকে নিলেন না। আমি যখন আশাহত তখন রাসূলুল্লাহ সা: এলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি আমার অবস্থা বুঝলেন কিন্তু কাপড় সরিয়ে আমাকে তাঁর পেট দেখালেন।

আল্লাহর কসম! আমি তাঁর পেটে ক্ষুধার তাড়নায় পাথর বাঁধা দেখলাম। আমার নিজের ক্ষুধার কথা ভুলে গেলাম। তারপর তিনি আমাকে সাথে নিয়ে বাইরে বের হলেন। আমাদের সঙ্গী হলেন আবুবকর এবং ওমর রা:সহ সম্ভবত আরো দু-একজন। চলার পথে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, চলো আমরা আবুল হাইসাম রা:-এর বাড়ির দিকে যাই। সম্ভবত আল্লাহ সেখানে আমাদের মেহমানদারি করাবেন।
আমরা যখন আবুল হাইসাম রা:-এর বাড়ির কাছে গেলাম, রাসূলুল্লাহ সা: বাইরে থেকে সালাম দিলেন। কোনো উত্তর শোনা গেল না। আমরা বুঝতে পারছিলাম ভিতরে তারা অবস্থান করছেন। নবীজী তিনবার সালাম পেশ করলেন কিন্তু উত্তর শোনা গেল না। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করলেন।

ওমর রা: ক্ষেপে গিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ। আমি ঘরের মধ্যে তার আওয়াজ শুনেছি। সে আপনার সালামের জবাব দেয়নি। সম্ভবত সে মুনাফিক হয়ে গেছে। আমাকে অনুমতি দিন আমি তার বিহিত করে দিই!
এরই মাঝে হজরত আবুল হাইসাম রা: ছুটে এসে সালাম পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন আমি কি তোমাকে তিনবার সালাম দিইনি? তুমি জবাব দাওনি কেন?

আবুল হাইসাম রা: বললেন, আল্লাহর কসম আমি যদি বুঝতাম আপনি ফিরে যাবেন তাহলে এমনটি করতাম না। আপনার প্রতিটি সালামের আমি জবাব দিয়েছি তবে আস্তে আস্তে। আমি চাচ্ছিলাম যদি আপনি আরো বেশি সালাম বলেন তাহলে আমি আরো বেশি দোয়া এবং বরকত হাসিল করতে থাকব। এখন আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার বাড়িতে তাশরিফ আনুন।

রাসূলুল্লাহ সা: মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের ব্যাপারে সু-ধারণা রাখবে।
তারপর আমরা তার বাগানে বসলাম। তিনি কাঁচা, আধাপাকা এবং পাকা খেজুর আনলেন। আরজ করলেন হে আল্লাহর নবী! আমি চাই সব ধরনের খেজুর থেকে আপনি একটু করে গ্রহণ করবেন। যাতে আপনার ছোঁয়ার বরকতে আল্লাহ আমার বাগানের সব খেজুরে বরকত দান করেন। এরপর আমাদেরকে রুটি, গোশত এবং সুপেয় পানি দিয়ে মেহমানদারি করালেন।
খাওয়া শেষে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আমরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ছিলাম। এই কাঁচাপাকা খেজুর, রুটি, গোশত, সুপেয় পানি। আল্লাহ আমাদের ক্ষুধামুক্ত করলেন, পরিতৃপ্ত করলেন।

তারপর বললেন (আল্লাহর বাণী),‘অতঃপর অবশ্যই তোমরা প্রতিটি নিয়ামতের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (তথ্যসূত্র : আসহাবে রাসূলের জীবন কথা)
এখনো ক্ষুধা কিংবা না পাওয়ার বেদনা আপনাকে কষ্ট দেবে। আসুন কষ্টসহিষ্ণু হতে শিখি। হালাল উপার্জন সেটা যতটুকুই হোক তাতে তুষ্ট থাকি। কোনোভাবেই পরনির্ভরশীল না হই। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি। নিশ্চয়ই তিনি উত্তম ফায়সালা দানকারী। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

লেখক : ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us