কী দেখানো হচ্ছে ওয়েব সিরিজে?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jun 27, 2020 09:32 pm
কী দেখানো হচ্ছে ওয়েব সিরিজে?

কী দেখানো হচ্ছে ওয়েব সিরিজে? - ছবি : সংগৃহীত

 

কেউ বলছেন, ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে অশ্লীলতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে? কেউ বলছেন, নির্মাতাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে? এই বিতর্কে দেশের শিল্পী ও নির্মাতারা ভাগ হয়ে গেছেন৷

বাংলাদেশে আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’ -এর নির্মাতা শিহাব শাহীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২১৭ মিনিটের সিরিজটাতে শুধুমাত্র একটি চরিত্রের (পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে) কিছু ডায়লগ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন৷ অথচ যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো আগেও বহু সিরিয়ালে ব্যবহৃত হয়েছে৷ এগুলো নতুন কোন শব্দ না৷’’ তাহলে কেন বিতর্ক হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমিও বুঝতে পারছি না৷ দেশের বাইরের ওয়েব সিরিজ নিয়ে তো এতদিন কথা হয়নি? এখন যখন দেশে এগুলো নির্মাণ শুরু হয়েছে, তখনই কেউ কেউ এর সমালোচনা করছেন৷ কেউ অশ্লীল বলছেন? আসলে অশ্লীলতার সংজ্ঞা কী?’’

তবে ওয়েব সিরিজ নিয়ে বিতর্ক যে সহসাই শেষ হচ্ছে না সেটা মোটামুটি পরিস্কার৷ গত বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবিকে শোকজ করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এই ওয়েব সিরিজ আপলোড করা হয়েছে৷ আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে৷

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘আপনার প্ল্যাটফর্ম এবং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্প্রতি ওয়েব সিরিজের নামে সেন্সরবিহীন নগ্ন, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য, কাহিনী ও সংলাপ সংবলিত ভিডিও কন্টেন্ট ওয়েবে আপলোড করে প্রচার করা হয়েছে, বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে৷ দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে এটা প্রচার করেছে এবং সমাজে এর ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷ এ ধরনের ভিডিও কন্টেন্ট আপনার প্ল্যাটফর্ম এবং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ওয়েবে আপলোড এবং প্রচার করার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স আছে কি-না? থাকলে তা কি, তা সরকারের জানা প্রয়োজন৷’’

মোবাইল অপারেটর রবির হেড অব করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোন চিঠি পাইনি৷ তবে মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা বিষয়টা জানতে পেরেছি৷ আসলে দেখেন, আমরা তাদের ইন্টারনেট সাপোর্ট দিয়েছি৷ এখানে যে কনটেন্ট তৈরি হয়েছে সেটা আমরা দেখি না৷ আর আমরা তো সেন্সরবোর্ড না, যে তাদের এগুলো সেন্সর করে আপলোড করবো৷ এখন শালীনতা-অশ্লীলতা এগুলো তো একেক জনের কাছে একেক রকম৷ কারো কাছে যেটা শালীন, অনেকের কাছেই সেটা অশ্লীল৷ এখন যে কনটেন্টগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে সেগুলোর দায় যে মিডিয়া হাউজ তৈরি করেছে তাদের৷ এখন সরকার যদি আমাদের বলে সেন্সর না হওয়া পর্যন্ত এগুলো আপলোড করা যাবে না, আমরা করব না৷’’

তবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বিদ্যমান আইন অনুযায়ি অপারেটরদেরও দায় রয়েছে৷ আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু তারা আপলোড করতে পারেন না৷ আমাদের টেলিভিশনগুলোতে যে বিদেশি সিরিয়াল চালানো হয়, এতদিন এগুলো কেউ দেখত না৷ আমি মন্ত্রী হওয়ার পর একটা কমিটি করেছি, কোন টিভি চ্যানেল যদি বিদেশি কোন সিরিয়াল চালাতে চায় তাহলে ওই কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে৷ একইভাবে ওয়েব সিরিজের ধারণাটা নতুন৷ এখানে কোন ধরনের সেন্সর ছাড়াই আপলোড করা হচ্ছে৷ সেটা আমাদের সমাজ সংস্কৃতির সঙ্গে কতটা মানানসই সেটা দেখতে হবে৷ এই কারণেই আমরা দু’টি মোবাইল অপারেটরকে শোকজ করেছি, তারা জবাব দিক৷ এরপর আমরা নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করব৷’’

বিশ্বের নানা দেশের মতো বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়েব সিরিজ৷ এতদিন বিদেশি সিরিজ দেখানো হলেও সম্প্রতি দেশেই কিছু ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে৷ ‘বিঞ্জ’ প্লাটফর্মে প্রকাশিত ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং', ‘আগস্ট ১৪' ও ‘সদরঘাটের টাইগার' সামনে আসার পর অনেকেই শালীনতা-অশ্লীলতার প্রশ্ন তুলছেন৷ সম্প্রতি এসব ওয়েব সিরিজের কনটেন্ট নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে শিল্পী ও নির্মাতারাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন৷ একপক্ষ ওয়েব সিরিজের পক্ষে বিবৃতি দেন৷ অন্যপক্ষ বলছে, এটা আমাদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধ৷

গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পরিচালক মালেক আফসারী, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, অভিনেতা আহসানুল হক মিনু, গাজী রাকায়েতসহ ৯১ জন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী বলছেন, তারা ওয়েব কনটেন্টের পক্ষে, কিন্তু অশ্লীলতার বিপক্ষে৷ এর আগে গত ১৯ জুন ওয়েব সিরিজের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি দেন মোরশেদুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অনিমেষ আইচসহ তরুণ প্রজন্মের ১১৭ জন নির্মাতা৷ সৈয়দ হাসান ইমাম, মামুনুর রশীদ, আফজাল হোসেন, আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, মাসুম রেজাসহ ৮০ ব্যক্তিত্ব ওয়েব প্লাটফর্মে ‘কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট' পরিবেশনের অভিযোগ করে বিবৃতিও দিয়েছেন৷

নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নিয়ে কেন এত বিতর্ক হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না৷ কী নির্মাণ করবেন সেটা নির্মাতার স্বাধীনতা৷ আমার ভালো না লাগলে আমি বলতে পারি, ভালো হয়নি৷ কিন্তু এটা নিয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো দুই ভাগ হয়ে যাওয়াকে আমি কোনোভাবে সমর্থন করি না৷ আমরাতো অনেকদিন ধরেই সেন্সরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি৷ আপনি তো বিধিনিষেধ দিয়ে এই ধরনের কাজকে আটকাতে পারেন না৷ কারো কাজ যদি ভালো না হয়, তাহলে দর্শকরা সেটা দেখবে না৷''

তবে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর মতো এভাবে বিষয়টি দেখতে রাজি নন অভিনেতা গাজী রাকায়েত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দারুণ একটা সংস্কৃতি আছে৷ এটাকে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না৷ ওয়েব সিরিজে এখন বাইরের জগতে অনেক কিছুই হচ্ছে৷ সেটা যদি আপনার ঘরের মধ্যে চলে আসে তাহলে তো বিপদ৷ তাই আমি মনে করি, আমাদের এমন কিছু নির্মাণ করা ঠিক হবে না, যেটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না৷ এখন অনেক নির্মাণে প্রয়োজন না হলেও বেডরুমের একটা দৃশ্য ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ আসলে বেডরুমে স্বামী-স্ত্রী কী করছেন? ওই দৃশ্য হয়তো সেখানে প্রয়োজনই নেই৷ এমনভাবে অনেক কাজ হচ্ছে, যা নিয়ে আমার মনে হয় চিন্তা করার সময় এসেছে৷’’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us