মূল্য দিতে হবে ইসরাইলকে

মাসুম খলিলী | Jul 03, 2020 06:49 pm
নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত

 

মার্চ মাসে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারে দখলীকরণ ছিল ইশতেহারের একটি মূল অঙ্গীকার। এটি তাকে সর্বাধিক নেসেট আসনগুলোতে জয়লাভ
করতে সহায়তা করেছিল, তবে প্রধানমন্ত্রী গ্যান্টজের সাথে তার চুক্তির দরজা খোলার পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে কম আসন পেয়েছেন। তবে এমনকি ইসরাইলিদের মধ্যে যারা দখলীকরণকে সমর্থন করেন তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। একটি অংশ ইসরাইলি বসতি বাদ দিয়ে পশ্চিম তীর নিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণা সমর্থন করেন। অতি-জাতীয়তাবাদীরা ভূমধ্যসাগর এবং জর্দান নদীর মধ্যবর্তী সব জমিকে বৃহত্তর ইসরাইল হিসেবে দেখেন।

ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে?
ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব এবং জনগণ ক্রোধের সাথে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) মে মাসে বলেন যে, এটি ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে সব চুক্তি এবং বোঝাপড়ার অবসান ঘটিয়েছে। যদিও নিরাপত্তা সমন্বয় বহুলাংশে এখনো বজায় রাখা হয়েছে, অন্যান্য আমলাতান্ত্রিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। এর মারাত্মক একটি ফলাফল রয়েছে বলে মনে করা হয়। অবরোধ করা গাজা উপত্যকা ও ইসরাইলের মধ্যে চিকিৎসা স্থানান্তর এর মধ্যে অচল হয়ে পড়েছে এবং এই মাসের শুরুতে দু’জন গুরুতর অসুস্থ শিশু মারা গেছে। পিএ এটাও বলেছে যে তারা অসলো চুক্তি ছিন্ন করবে এবং কোনো সংযুক্তি ঘটলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যে দেশগুলো সাধারণত নির্বিঘ্নে ইসরাইলকে সমর্থন করে তাদের কেউই এই ইস্যুতে তেল আবিবকে সমর্থন করছে না। সর্বশেষ উন্নয়নে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সম্পর্কিত ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার কার্যকর কোনো ভূমিকা যে ছিল না তাতে সন্দেহ নেই। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা এমন একটি দলের মতো আচরণ করেছিল যেন ইসরাইলের মুখপত্র হিসেবে তারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনে ইসরাইল কেবল ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গঠিত ইহুদি বন্দোবস্ত ইউনিটগুলোর দখল করেছে।

ইসরাইল যে অঞ্চলগুলোতে দখল প্রতিষ্ঠা করেছে তার মধ্যে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের আশপাশে দেয়ালও তৈরি করছে। তারা সব সময় ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব অবৈধ বসতি অঞ্চলগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। এ ধরনের প্রাচীর বসতি অঞ্চলগুলোর আশপাশে নয় বরং প্রতিবেশী ফিলিস্তিনিদের চার পাশে নির্মাণ করা হয়েছে যার ফলে ফিলিস্তিন অঞ্চলটি তাদের জন্য বন্দিশিবিরে পরিণত হয়েছে।

ইসরাইল সব সময় দেশটির নিরাপত্তার দোহাই দেয়। আসলে নিরাপত্তা হলো বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার অন্যতম কপট ধারণা। বিভিন্ন ধরনের বেআইনি অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদি আজ কোনো নিরাপত্তা হুমকি থাকে তবে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলিদের প্রতি সে হুমকি সৃষ্টি করেছে, এর বিপরীতটি একেবারেই অসত্য। ইসরাইল ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মানচিত্র কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমরা দেখি যে ফিলিস্তিনের অন্তর্গত এই ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অংশটি কিভাবে এই সময়সীমার মধ্যে ধীরে ধীরে এবং পুরোপুরি ইসরাইলের রঙ ধারণ করেছে।

ইসরাইল কেবল ফিলিস্তিনিদেরই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই কার্যত হুমকি। আরব ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের সাথে গোলান হাইটস ইসরাইলের সাথে সংযুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে এর নেতৃত্ব। ইসরাইলের দখলে থাকা কোনো অঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন এবং নীরবতাকেই দেশটি যথেষ্ট বিবেচনা করছে।
করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে বিশ্ব যখন ব্যস্ত, তখনো ইসরাইল ব্যস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অধিগ্রহণের জন্য। তবে, এই মুহূর্তে যে পদক্ষেপ ইসরাইল নিচ্ছে তা পুরো বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট। একসময় এ জন্য মূল্য দিতে হবে ইসরাইলকে।

mrkmmb@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us