সিন্ধু ডলফিন : হারিয়ে যাচ্ছে ভারতে, বাড়ছে পাকিস্তানে

বিবেক গুপ্ত | Jul 28, 2020 06:21 pm
সিন্ধু ডলফিন

সিন্ধু ডলফিন - ছবি : সংগৃহীত

 

আপনি কি আপনার এলাকায় ডলফিন দেখেছেন?
‘মানে ওই ভুলান মাচ্চি [লম্বা ঠোঁটওয়ালা মাছ]’ জবাব দিলেন ২২ বছর বয়স্ক বাঘা। তিনি পাঞ্জাবের তারান তারান (চন্ডিগড় থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে) জেলার বিয়স্তা নদীতে নৌকায় করে লোকজন পারাপার করেন।
বাঘা তাড়াতাড়ি সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও শেয়ার করলেন। বিখ্যাত হরিক জলাভূমিতে একটি শাবকসহ ডলফিনটি দেখেছিলেন তিনি।
তিনি হেসে বলেন, অনেক সময় আমার নৌকার পিছু পিছু আসে তারা।
তবে এই বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণীটি দেখার সৌভাগ্য বেশি লোকের হয় না। বিয়স্তা নদীর এসব ডলফিন নিয়ে গবেষণা করছেন পরিবেশবিদ গিলিয়ান টি ভ্রাউলিক।

সিন্ধু ডলফিন বা প্লাতানিস্তা গ্যাঙ্গেতিকা মাইনর স্থানীয়ভাবে ভুলান নামেপরিচিত। পৃথিবীতে এখনৈা যে আটটি মিঠা পানির ডলফিন আছে, সেগুলোর একটি হরো এই ভুলান।
পাকিস্তানে সিন্ধু ডলফিনের পরিবার দেখা যায় বেশ ভালোভাবেই, কিন্তু ভারতে কমে এখন এক অঙ্কে নেমে এসেছে।
গিরিয়ানের ভাষায়, ২০১২ সালের গবেষণা অনুযায়ী, এই ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র ছিল উপকূল থেকে সিন্ধু ও এর পাঁচটি শাখা নদী- ঝিলাম, চেনাব, বিয়স্তা, শতদ্রু ও রাভিতে। তবে তা ১৯৪৭ পর্যন্ত
ভারত ভাগ হওয়ার আগে পর্যন্ত নদীগুলো ছিল বাধাহীন ও দূষণমুক্ত। সেচের জন্য কোনো বাধ বা ড্যাম ছিল না। এখন অনেক বাধ হয়েছে, শিল্প ও অন্যান্য বর্জ্য মিশছে পানিতে। ফলে মিঠা পানির এই প্রাণীটি হুমকির মুখে পড়ে গেছে।

উপমহাদেশের নদীর ডলফিনগুলোর মধ্যে সিন্ধু ডলফিন ও গঙ্গা ডলফিন সবচেয়ে জনপ্রিয়। অবশ্য ডব্লিউডব্লিউএফ সমীক্ষা অনুযায়ী, এই দুই প্রজাতির ডলফিন জেনেটিকভাবে আলাদা।
সীমান্তের ওপাড়ে
অবশ্য ভারতের মতো পাকিস্তানে সিন্ধু ডলফিন বিরল নয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ডব্লিউডব্লিউএফের পাকিস্তান শাখা সেখানে ১,৮১৬টি সিন্ধু ডলফিন গণনা করেছিল। সংখ্যাটি ২০০১ সালের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি। বর্তমানে দেশটিতে ১,৯৮৭টি ডলফিন আছে বলে ডব্লিউডব্লিউএফের পাকিস্তান পরিচালক উজমা খান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ডলফিনগুলো সিন্ধু নদীর উজানেই সীমাবদ্ধ। তবে সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের গাদ্ধু ও সুক্কর ব্যারেজের মধ্যবর্তী এলাকায় তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সিন্ধু রিভার ডলফিন রিজার্ভ হিসেবে সিন্ধু ওয়াল্ডলাইফ আইনে এসব প্রাণী সংরক্ষিত।
আর ভারতে প্রাণীটির সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৭ সালের জরিপে দেখা যায়, ভারতীয় নদীতে এই ডলফিন আছে মাত্র ৫টি। আর ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, এর সংখ্যা ৫ থেকে ১১টি।
ভারতে সিন্ধু ডলফিন কমে যাওয়া নিয়ে পরিবেশবিদেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই হ্রাসের অন্যতম কারণ শিল্প দূষণ। তবে এখন তারান তারান এলাকাই এই ডলফিনের ভারতীয় অংশের হটস্পট।
এর কারণ হলো, এখানে তাদের পর্যাপ্ত খাবার আছে, এখানে সাঁতার কাটার মতো গভীর পানি আছে, দূষণও অনেক কম।
পাঞ্জাব পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বিয়স্তায় দূষণের মাত্রা এখন অনেক কম।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্যসচিব ক্রুনেশ গার্গ বলেন, তারা বিয়স্তা নদীকে বি শ্রেণীভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ এখানে মোটামুটি দূষিত।

সরকারিভাবে আবিষ্কার
ভারতে সরকারিভাবে এই ডলফিন আবিষ্কার ঘটে ২০০৭ সালে।ওইসময় একে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
তবে বিয়স্তা নদীর পাড়ে বসবাসকারী লোকজনের কাছে এসব ডলফিন অপরিচিত ছিল না। ৬০ বছর বয়স্ক দিলবাগ মোহাম্মদ তারান তারান জেলার কারমুওয়ালায় থঅকেন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা এই ডলফিন দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেই শৈশব থেকে এগুলো দেখে আসছেন।

পাঞ্জাবের প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা আগে কেন ডলফিনগুলো দেখেননি, তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, সম্ভবত বন্যপ্রাণী ও স্থানীয়দের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ হয়নি।
তবে পাকিস্তানে এই ডলফিন সংরক্ষণের কাজ চলছে দীর্ঘ সময় ধরে।ডব্লিউডব্লিউএফ পাকিস্তানের মতে, এসব প্রজাতির আবাসন সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা ছিল অনেক আগে থেকেই। এসব প্রাণীর অনেকে সেচ খালের মধ্যে আটকে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের বন্য প্রাণী সংরক্ষণকারীরা ১৯৯২ সাল থেকে এগুলোকে প্রধান নদীতে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে।
উজমা খান বলেন, ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধুর ডলফিন শিকার করা হয় নৌকার কাঠের পচন রোধ ও মাছ ধরায় টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে পাকিস্তানে দীর্ঘ দিন ধরে এর ব্যবহারের কথা শোনা যাচ্ছে না।

আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা
ভারতের স্বাধীন পরিবেশ লেখক ও ফটোগ্রাফার আরতি কুমার রাও ২০১৮ সালে তার ব্লগে লিখেন যে ভারতের অবশিষ্ট সিন্ধু নদীর ডলফিনগুলো টিকিয়ে রাখা যাবে যদি সেগুলো স্বাস্থ্যকর নদীতে রাখা যায়।
পাঞ্জাবের মুখ্য সংরক্ষক কুলদীপ কুমার বলেন, নদীর পরিবেশ যাতে ভালো থাকে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আর ডলফিনগুলোর দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ওই এলাকায় মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানের বন্য প্রাণী বিভাগের সাথে কথা বলবে। তাদেরকে তারা অনুরোধ করবে, যাতে অতিরিক্ত ডলফিনগুলো ভারতকে দিয়ে দেয়। তবে তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক তত ভালো নয় যে এমন কাজ এখন হতে পারে।

তবে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
আর পাকিস্তানের উজমা খান বলেন, পাকিস্তানে ডলফিনের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আবার অনেক দূরের পথে এগুলো নিয়ে যাওয়াও কঠিন কাজ।

মঙ্গাবে


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us