জ্বরের সাথে হাত-পা ব্যথা কি করোনার উপসর্গ?

সুজাতা মুখোপাধ্যায় | Sep 23, 2020 08:34 pm
জ্বরের সাথে হাত-পা ব্যথা কি করোনার উপসর্গ?

জ্বরের সাথে হাত-পা ব্যথা কি করোনার উপসর্গ? - ছবি : সংগৃহীত

 

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশনের তালিকায় কোভিডের উপসর্গ হিসেবে পেশি-সন্ধি ব্যথার উপসর্গও যোগ হয়েছে, সে আজ বেশ কিছু দিন হলো। কিন্তু তা বলে অনেক মানুষের যে সমস্যা হয়, এমন নয়। তালিকার বেশ নীচেই আছে তার নাম।

জ্বর যদি থাকে ৮৭.৯ শতাংশ কোভিড রোগীর, শুকনো কাশি থাকে ৬৭.৭ শতাংশের, ক্লান্তি ৩৮.১ শতাংশের, শ্বাসকষ্ট ১৮.৬ শতাংশের, পেশি ও সন্ধি ব্যথা থাকে মোটে ১৪.৮ শতাংশের। চীনের ৫৫৯২৪ জন রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে উপসর্গের এই ক্রম তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

তালিকার আরো নিচে আছে গলা ব্যথা, ১৩.৯ শতাংশ, মাথা ব্যথা, ১৩.৬ শতাংশ, কাঁপুনি ১১.৪ শতাংশ ইত্যাদি। অর্থাৎ আর যাই হোক, কোভিডের উপসর্গ হিসেবে পেশি-সন্ধি ব্যথা এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বলেই ভাবা হয়েছিল এত দিন। সম্প্রতি তা ভুল প্রমাণিত হল। বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেলেন, কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা কতটা জটিল হতে পারে, তা নির্ধারণ করে এই উপসর্গটি। যত মারাত্মক হয় ব্যথা, তত আশঙ্কা বাড়ে ফুসফুসের জটিল সমস্যা, এআরডিএস বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোমের।

কখন বিপদ

ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানিয়েছেন, ‘যদি দেখেন গা-হাত-পা-কোমরে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে, এক-দু-দিন পরও ব্যথা একই রকম আছে ও কোভিডের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, দেরি না করে ডাক্তার দেখান। সব উপসর্গ একসঙ্গেও দেখা দিতে পারে। উপসর্গ দেখে ডাক্তারের যদি সন্দেহ হয়, তিনি কোভিডের পরীক্ষা করাতে বলবেন। রিপোর্ট পজিটিভ এলে আরও কয়েকটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে অবস্থা কতটা জটিল। তার উপর নির্ভর করবে তিনি বাড়িতে থাকবেন, না হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে।’

জটিলতা

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মেগান ক্যাফি চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৫৩ জন ৩০-৪৯ বছর বয়স্ক কোভিড রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেন, ফুসফুস কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর, (১) রক্তে লিভার এনজাইম এসজিপিটি বাড়ছে কিনা (২) পেশিতে তীব্র ব্যথা আছে কি না (৩) রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কতটা বেড়েছে।

এই তিনটি বিষয় মিলে গেলে আরও কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। সব রিপোর্ট মিলিয়ে তার সঙ্গে রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। তখন হয়ত কোনো কষ্ট নেই, তা বলে যে ঠিক তার পর মুহূর্তে হবে না, এমন বলা যায় না। কখনো এত তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় যে হাসপাতালে আনতে আনতেই অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে যায়। এদের আগে থেকে ভর্তি করে অক্সিজেন ও অন্যান্য চিকিৎসা দিলে ফুসফুসের দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়া, যাকে এআরডিএস বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বলে, তা ঠেকানো যেতে পারে। বয়স্ক রোগীদেরই সচরাচর এ ধরনের সমস্যা বেশি হয় বলছে সমীক্ষা।

কেন হয়

তীব্র সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে যখন ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই শুরু করে, তখন সারা শরীর জুড়ে প্রদাহ হয়। পেশিতে প্রদাহ হলে পেশিতে ব্যথা হয়, লিভারে হলে লিভার এনজাইম এসজিপিটি বাড়ে। ফুসফুসে হলে টান পড়ে তার কার্যকারিতায়। অক্সিজেনের ঘাটতি হতে শুরু করে। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমেই কোষে কোষে অক্সিজেন যায়, তার সংখ্যা বেড়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হয়। অর্থাৎ এই তিনটি উপসর্গ থাকা মানে শরীরে বড়সড় ক্ষতি হতে চলেছে বা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে।

ব্যথা মানেই ভয়

তা একেবারেই নয়। অল্পস্বল্প ব্যথা হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। সরাসরি ফ্যানের নীচে বা এসি-তে শুয়ে থাকলেও অনেক সময় হয় এ রকম। সঙ্গে হালকা জ্বর থাকলেও ভাবার কিছু নেই। যখন তিন দিন পর্যন্ত ব্যথা সমস্যা তৈরি করছে বলে মনে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেই মুহূর্তে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us