যুদ্ধ চাচ্ছেন কে?

গৌতম দাস | Sep 26, 2020 05:44 pm
মোদি ও ট্রাম্প

মোদি ও ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত

 

গ্লোবাল নেতৃত্ব বিশেষত গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা হওয়ার লড়াই এবার তুঙ্গে উঠতে যাচ্ছে। এটা ফাইনাল লড়াইও হয়ে উঠার লক্ষণ সম্পন্ন। আমেরিকার আসন্ন নভেম্বর নির্বাচনের জন্যই যেন সবাই অপেক্ষা করছে, আর রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা মরণপণ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোটাদাগে এই লড়াই হবে বাই-পার্টিজান। মানে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দু’দলই এমন লড়াইয়ের পক্ষে, যদিও নির্বাচনে যে জিতবে সে নিজের কায়দায় ও কৌশলে এ লড়াইয়ে নামবে ও নেতৃত্ব দেবে, ফারাক শুধু এখানেই। কিন্তু তবু দু’দলে আরেকটা মিল আছে। সেটি হলো, খোদ আমেরিকাকে এ দুই দল যেন চাইলেই গ্লোবাল নেতৃত্ব বজায় রাখতে পারবে। ‘আমি সরব না’ বললেই যেন গ্লোবাল এম্পায়ারের নেতার আসন ধরে রাখা যায়। যেমন অনেককে আবার দেখছি সামরিক শক্তির বিচারে চীন আমেরিকার কত পেছনে সেটা মেপে দেখিয়ে দাবি করছে, আমেরিকাকে কেউ নেতাচ্যুত করতে পারবে না। তাহলে সোজা আরেক কমন দিক হলো, এ দু’দলই মনে করে- গ্লোবাল এম্পায়ারের নেতা থাকার ব্যাপারটা আমেরিকার ইচ্ছা।

অথচ কেউ আর চাইলেও যেন গ্লোবাল লিডার বা এম্পায়ারের ভূমিকায় আমেরিকাকে রাখতে পারছে না বা চাইছে না, এটাই হলো বাস্তবতা। যে আমেরিকা আগে নিজেই ছিল গ্লোবাল নেতা, অর্থনৈতিক গ্লোবালাইজেশনের লিডার, পণ্য বিনিময় ব্যাপকভাবে দুনিয়ার কোণে কোণে ছড়িয়ে এক গ্লোবাল বিনিময় লেনদেনের ব্যবস্থা বা অর্ডার গড়ে তোলা ছিল যার লক্ষ্য, সেই আমেরিকা এখন ফিরে গ্লোবালাইজেশনের লিডার হওয়া ছেড়ে বুড়ো বয়সে এসে কেবল ‘আমেরিকান জাতির’ নেতা হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে যেটা অবশ্যই ব্যর্থ হবে। কারণ যে দুনিয়া একবার কথিত ‘জাতি’ থেকে গ্লোবালাইজড বিনিময়ের এক ব্যবস্থা বা অর্ডারে ঢুকে গেছে সে আর ফিরে ঘরোয়া একা একা নিজ সীমানার ‘জাতি ব্যবস্থায়’ ফিরে যাবে না, পারবে না। তবু ‘জাতি ব্যবস্থায়’ ফিরে যাওয়ার চেষ্টা ট্রাম্পের গত চার বছরের তৎপরতার প্রত্যক্ষ ফসল। শুধু তাই নয়, এতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা এমন জায়গায় চলে গেছে যে, বাইডেন জিতলেও ট্রাম্পের এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা পলিসিগুলো আর বদলাতে বা পুরনো জায়গায় নিতে পারবেন না। বাইডেনকে ট্রাম্পের কাম-আকাম সবই অনুসরণ করে যেতে হবে। আর এভাবেই যেন আমেরিকা ক্রমশ শেষ হয়ে যেতে চাওয়ার রাস্তায় উঠে গেছে; শেষ দিনগুলোতে যতদিন না গ্লোবাল নেতা আমেরিকা এভাবে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিজেকে বিলীন হওয়ার দিকে নিয়ে চলে যায়। চলতি সপ্তাহের ‘ইকোনমিস্ট’ ট্রাম্পের এমন নীতিগুলোর একটা তালিকা তৈরি করে রেখেছে।

আমেরিকার জন্য বাস্তব অসুবিধা হলো, কেউ গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা হবে কি না এটা তার নিজের খেয়ালে নেয়া ইচ্ছায় সিদ্ধান্তের ইস্যু নয়। অন্যভাবে সরাসরি বললে, মূল কথাটা হলো- অর্থনৈতিক কারণে কোনো রাষ্ট্র যখন গ্লোবাল সারপ্লাস সঞ্চয় বা পুঞ্জীভবনের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়, এটাই সেই পূর্বশর্ত যে, সে গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা হচ্ছে কি না।

যেমন ধরা যাক, আমেরিকা এখন খুবই আগ্রাসী হয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের কথা বলে এগিয়ে আসছে। সম্ভবত সেটা ভারত যতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে মাঠে আমেরিকাকে পেতে আকাঙ্ক্ষা করে, এর চেয়েও আগ্রাসীভাবে। কিন্তু তবু মোদি চীনের সাথে আপস করতেই ছুটে চলে গেলেন। কেন?

কারণ নরেন্দ্র মোদি জানেন তার দরকার এখন বিনিয়োগ-অবকাঠামো আর এফডিআই দুটোই। যার একটা, এফডিআই আমেরিকা হয়তো দিতে সক্ষম এমন বিশেষ সুবিধার শর্তে যে, আমেরিকান ব্যবসায়ীদেরই সরাসরি ব্যবসা, কারখানায় আসতে দিতে হবে। আর প্রথমটা অবকাঠামো বিনিয়োগ, এখানে আমেরিকা অপারগ। কাজেই এই আমেরিকাকে নিয়ে মোদি কী করবেন? কোন কাজে আসবে?

অর্থাৎ এই আমেরিকা আর গ্লোবাল নেতা নয়। এটা আমেরিকা মুখে দাবি করলেও হচ্ছে না। মোদির আমেরিকার প্রতি আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তা কাজে আসছে না। আমেরিকায় যারা এটা মানছে না এরাই অসম্ভব জিনিসটা মেনে নিতে না পেরে পরিস্থিতিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের ও দুনিয়াকে আরো দুস্থ অবস্থায় ফেলে দিতে পারে।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us