যে কারণে নেপালের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হলো ভারতের

বৈশাল কে চালিসে | Oct 09, 2020 09:06 am
কে পি শর্মা ওলি

কে পি শর্মা ওলি - ছবি : সংগৃহীত

 

নেপাল ও ভারত রাজনৈতিক মানচিত্র নিয়ে বিরোধে রয়েছে। উভয় দেশই কিছু ভূখণ্ডের ওপর তাদের দাবি ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করেছে। মানচিত্র নিয়ে বিরোধের জের ধরে রাজনৈতিক সম্পর্কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মোদির প্রথম মেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতির পর আশা করা হয়েছিল যে দ্বিতীয় মেয়াদে তার অবসান হবে। কিন্তু ভবিষ্যত সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তাই রয়ে গেছে।

ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের মর্যাদা পরিবর্তন করে সংবিধান সংশোধন করে নতুন যে মানচিত্র প্রকাশ করে, তার জের ধরে নেপালের সাথে ভারতের নতুন বিবাদের সৃষ্টি হয়। নতুন মানচিত্রে পশ্চিম নেপালের কালাপানি ও লিপুলেখকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে দেখানো হয়। তারপর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া একটি রাস্তা উদ্বোধন করলে নেপাল সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। নেপাল সরকারও ওই এলাকায় তার বলে দাবি করে মানচিত্র প্রকাশ করে।
দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ নতুন কিছু নয়। আর বর্তমান বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে ১৮০০-এর শুরুর দিক থকে।

এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক পর্যায়ে আলৈাচনা। কিন্তু দুই দেশের মধ্যকার আস্থার ঘাটতি প্রবল। নেপাল মনে করে, ভারত বড় ভাইসুলভ আচরণ করছে, তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতির আলোকে সবকিছু ব্যবস্থাপনা করতে চায়। ভারত মনে করে, তার জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য এমনটা করার অধিকার তার রয়েছে।২০১৫ সালে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের উদ্বেগে কান না দিয়ে সংবিধান ঘোষণা করার পরিণতিতে ভারত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে নেপালের ওপর। ভারতের এই আচরণ নেপালি জনগণের মনে দাগ কেটে যায়।

নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি ওই অবরোধকে মেনে নেননি এবং ভারতের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই ২০১৭ সালে ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছেন বরে মনে করেন। মোদির মতো ওলিও পার্লামেন্টে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপভোগ করছেন।নেপালের অন্য রাজনীতিবিদরা ভারতকে ছাড় হয়তো দিতে পারেন। কিন্তু ওলির কাছ থেকে তা আশা করা যায় না।ফলে আরেকটি ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ এড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্তটি নিষ্পত্তি করা উচিত। অন্যান্য স্থানের অভিজ্ঞতার আলোকে ভারতের উচিত যত দ্রুত ম্ভবত সীমান্ত সংলাপ শুরু করা।

অন্যদিকে নেপাল তার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে। তারা বারবার এই সমস্যা নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভারত তাতে কর্ণপাত করছে বলে মনে হচ্ছে না। আগে আলোচনা হতো আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। কিন্তু এখন অবস্থা বদলে গেছে। এখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
এই সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে বিশেষ সম্পর্কের বিভ্রান্তিকর দাবি। হিমালয় নিয়ে নেহরুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ধারণা করা হয় যে, দক্ষিণ এশিয়া হলো ভারতের বিশেষ প্রভাব-বলয়। কিন্তু ওই দৃষ্টিভঙ্গি এখন অচল। নেপালসহ অন্যান্য দেশ মনে করে, তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে, নিজস্ব ধ্যান-ধারণা আছে।

আর এর জের ধরেই ভারত ও নেপালের মধ্যে আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারত তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য নিরাপত্তাগত শক্তি প্রয়োগ করে। শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসাদের হটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় সাময়িকভাবে সফল হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ফলপ্রসূ হয়নি।

নেপালের সাথে বিরোধ দূর করার জন্য ভারত প্রথম যে কাজটি করতে পারে তা হলো দুই দেশের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইমিনেন্ট পারসন্স গ্রুপের (ইপিজি) প্রতিবেদন মোদির গ্রহণ। এই প্রতিবেদনে ১৯৫০ সালের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি পুরোপুরি সংশোধন করতে বলা হয়েছে। নতুন চুক্তিতে দুই দেশের সম্পর্ক একুশ শতকের আলোকে করা উচিত বলে তাতে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, চীনের প্রবল উপস্থিতি এখন নতুন স্বাভাবিক বিষয়। চীন-নেপাল সম্পর্ক উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অন্যদিকে ভারত-চীন সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়ায় নেপালের জন্য সমস্যঅ হয়েছে। তবে নেপাল নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে আসছে।

নেপাল তার উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কেবল ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে, এমনটা বাস্তবাতপূর্ণ নয়। তাছাড়া ভারতের পদক্ষেপের কারণেই চীনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছে নেপাল। চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়ে এগিয়ে আসার অনেক আগেই উত্তর দিকে কানেকটিভিটি চেয়েছিল নেপাল। তবে ভারত এখন তার অর্থনৈতিক সুবিধা প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের কাছে টানতে পারে। এটি ভারতের জন্য বেশ কল্যাণকর হবে।

নেপাল মনে করে, সীমান্ত বিরোধ নিরসনে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে বল এখন ভারতের কোর্টে। নেপালিরা এখন সতর্কভাবে অপেক্ষা করছে, ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে।

সূত্র : রিপাবলিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us