খালেদা জিয়া ও জনগণের ভাগ্য

ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান | Oct 16, 2020 06:52 pm
খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া - ছবি : সংগৃহীত

 

বিএনপি কি উপনির্বাচনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে অংশ নিয়েছে নাকি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতো ড. কামালদের পাতা ফাঁদ থেকে এখনো বের হতে পারেনি? ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখা একটা স্বাভাবিক বিষয়। কেননা ঐক্যফ্রন্টের গঠনই ছিল বিগত জাতীয় নির্বাচনের জন্য। কিন্তু ১৮ দলীয় জোটের গঠনপ্রক্রিয়া ছিল ঐতিহাসিক। চারদল থেকে ১৮ দল যা এখন ২০ দলীয় জোট পরিণত হয়েছে। ১৮ দলের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে- গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আওয়ামী দুঃশাসনমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জোটের কার্যক্রম চলবে। এ জন্য বিগত ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাস লাগাতার আন্দোলন সংগ্রামে লাখ লাখ মামলা, হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন, অপহরণের ক্ষত নিয়ে টিকে আছে ২০ দলীয় জোট। মুক্তিযুদ্ধের পর এত কঠোর আন্দোলন প্রতিরোধ এবং সরকারি নির্যাতন-নিপীড়ন কেউ দেখেনি। তিন মাসের লাগাতার আন্দোলন ছিল স্মরণকালের মধ্যে অন্যতম। ঐক্যফ্রন্ট গঠনকালীন আমরা অনুভব করেছিল, জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের বিপথগামী করতে সরকারের ইশারায় ড. কামালরা বিএনপিকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। আমাদের মতামতের গুরুত্ব থাকবে না বলে উচ্চবাচ্য করিনি। যেদিন সকালে ড. কামাল সংলাপের আহ্বান জানালেন আর দুপুরেই ওবায়দুল কাদের সংলাপে সম্মতি জানালেন তখন আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, ড. কামাল শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জোটবদ্ধ হচ্ছেন। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ মনে করি।

২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা টেলিফোনে বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াতের হরতাল চলাকালে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার ওই সংলাপকে বেগম খালেদা জিয়া পাতানো ফাঁদ ও ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কেউ কেউ মনে মনে সংলাপে যাওয়ার যুক্তি দেখতেন। বেগম খালেদা জিয়া আমাকেও বলেছিলেন, সংলাপের আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার চালবাজির অংশ ছিল। শেখ হাসিনার ফোনের জবাবে বেগম খালেদা জিয়া সংলাপে বসার জন্য হরতালের পর তারিখ নির্ধারণের জন্য বলেন। আসলে শেখ হাসিনা তখন দেশের স্বার্থে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংলাপ করতে চাননি। শুধু লোক দেখানো ও ধোকা দিতে বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মিটিং, সভা সমাবেশে বারবার একটি কথা বলতে শুনেছি- শেখ হাসিনার অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই ২০১৪ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থেকে দশম সংসদ নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটকে সাথে নিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি শেখ হাসিনার সাথে সংলাপ ও নির্বাচনে অংশ নিয়ে চরম ব্যর্থতা ও ভরাডুবির মাধ্যমে প্রমাণ করলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার সংলাপ ও নির্বাচনে না যাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা যে সুপরিকল্পিত ও নীলনকশার অংশ তা বিশিষ্টজনেরা স্বীকার না করলেও সাধারণ জণগণ এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন। কেননা বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে ড. কামালকে বিএনপি জোটের প্রধান করা যেত না। শেখ হাসিনার পাতানো সংলাপে নেয়া যেত না, বিএনপির অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ ভোটডাকাতির নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারতেন না। নির্বাচনের পর মোকাব্বির ও সুলতান মনসুরদের সংসদে যাওয়া নিয়ে ড. কামালের ধূর্তামির কথা বলতে চাই না। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাষ্ট্রে ষড়যন্ত্র, নির্বাচনে ভরাডুবির পরও ড. কামালদের ছাড়তে এত পিছুটান কিসের তা অন্তত তারেক রহমানকে খুঁজে দেখা উচিত। আজ দেশ ভালো নেই, ভারতীয় ও মিয়ানমারের আগ্রাসনে সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, জনগণ ভালো নেই আওয়ামী জুলুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসনের কারণে। বেগম খালেদা জিয়াও ভালো নেই। তিনি সরকারের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আজ গৃহবন্দী। চিকিৎসাহীন অবস্থায় তার শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য্য রাজনৈতিক জীবনে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, তিনি ভালো থাকলে দেশ ও জনগণ ভালো থাকে। তিনি কষ্টে থাকলে দেশ ও জনগণও কষ্টে থাকে। তাই বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্য আর দেশ ও জনগণের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছরে সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে দেশে জাহিলিয়াত কায়েম করেছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।

ভারতীয় আধিপত্যের কাছে নতজানু হয়ে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। তাই দে শের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তকেই এগিয়ে আসতে হবে। কেননা ১৯৭১ সালে আওয়ামী নেতৃত্ব যখন পলায়নপর চিন্তার কারণে মুক্তি সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল তখনই মেজর জিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পরিচয় দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তাই শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপিকেই দেশ ও জাতির চরম দুঃসময়ে পরীক্ষিত দল ও মিত্রদের নিয়ে জনমুক্তির সংগ্রাম করতে হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আধিপত্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে আওয়ামী জুলুমতন্ত্র থেকে দেশ মুক্ত করা সম্ভব হবে। আওয়ামী চর ও সরকারের এজেন্টদের নিয়ে ঐক্য করে যেমন অতীতে সফলতা আসেনি ভবিষ্যতেও আসবে না। আমরা ঐক্য চাই দেশপ্রেমিকদের, বর্ণচোরাদের নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর শহীদ জিয়াই ঐক্যের অনুঘটক। যারা শহীদ জিয়ার ভূমিকা ও অবদানকে স্বীকার করে না তারা দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। দেশপ্রেমিকদের আদর্শিক ঐক্য ও রাজপথে সুপরিকল্পিত আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া বা দেশ ও জনগণকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us