যেসব রোগ ডেকে আনে উচ্চ রক্তচাপ

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Oct 17, 2020 01:45 pm
যেসব রোগ ডেকে আনে উচ্চ রক্তচাপ

যেসব রোগ ডেকে আনে উচ্চ রক্তচাপ - ছবি সংগৃহীত

 

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেব দিতে গিয়ে কো-মর্বিডিটি শব্দটা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। যে সব ক্রনিক অসুখ থাকলে করোনাভাইরাসসহ যেকোনো সংক্রমণই মারাত্মক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ( হাই ব্লাড প্রেশার) এমনই এক সমস্যা যা নিঃশব্দে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্রমশ বিকল করে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বের প্রতি ৪ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন ও ৫ জন মহিলার ১ জন উচ্চ রক্তচাপের শিকার।

বিশ্বের ১৩৭ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। আগামী ৫ বছরে সংখ্যাটা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সব থেকে মুশকিল হলো এদের মধ্যে আবার অনেকে জানেনই না যে তাদের রক্তচাপ বেশি, বলছিলেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট প্রকাশ কুমার হাজরা। রক্তচাপের কারণে প্রতি বছর ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান। তাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে সচেতন হতে হবে সবাইকেই। আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক হবার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ।

প্রকাশবাবু জানালেন, এসেনশিয়াল আর সেকেন্ডারি দুই ধরনের রক্তচাপ দেখা যায়। দ্বিতীয়টির জন্যে কিছু কারণ জানা গেছে যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার, পলিসিস্টিক কিডনি এরকম কিছু কারণ দূর করতে পারলে ব্লাড প্রেশার আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবার কথা। সমস্ত হাই প্রেশারের রোগীদের প্রায় ৫%-এর সেকেন্ডারি রক্তচাপ। বাকি ৯৫%-এর এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। অর্থাৎ রক্তচাপ কেন বেশি উত্তর এখনও খুঁজে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন সাধারণত ১২০/৮০ কে স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি কারো রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর বেশি হয় তখন তার রক্তচাপ বেড়েছে বলা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসেনশিয়াল উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে রক্তচাপ বংশে থাকলে ঝুঁকি বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। মানসিক চাপ ও শহুরে জীবন যাত্রার সঙ্গে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার একটা যোগসূত্র আছে। দেখা গেছে শহরাঞ্চলে ৩৫ - ৪০ শতাংশ ৪০ পেরিয়ে যাওয়া মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার। তুলনামূলক ভাবে গ্রামে এই হার কিছুটা হলেও কম।

রক্তচাপ বাড়লে বোঝার উপায় কী জানতে চাইলে পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না। কখনো কারো মাথা আর ঘাড়ে ব্যথা করে। অনেকের দুর্বল লাগে, সামান্য পরিশ্রমে নিঃশ্বাসের কষ্ট ও বুক ধড়ফড় করে। মাঝেমাঝে এরকম উপসর্গ চলে, রাগ হয়, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই এই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। তাই অসুখ চট করে ধরা পড়ে না। কিন্তু লাগাতার অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ে জীবনযাপন করলে কিডনি, হার্ট-সহ বিভিন্ন অঙ্গ একে একে বিকল হতে শুরু করে। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আচমকা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোকের জন্যেও দায়ী রক্তচাপের সমস্যা।

অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের কারণে চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বাবা, মা বা বাড়ির অন্যদের এই সমস্যা থাকলে কোনো রকম সমস্যা হলেই প্রেশার চেক করানো আবশ্যিক, পরামর্শ চিকিৎসক প্রকাশ হাজরার।

এসেনশিয়াল হাই ব্লাড প্রেশার অর্থাৎ কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই যাদের রক্তচাপ বেড়ে যায় তাদের অন্যান্য কিছু সমস্যা থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এঁদের ডায়াবিটিস থাকতে পারে। সঙ্গে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা থাকে অনেক বেশি।

এই ঝুঁকিপূর্ণ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত মনিটরিং দরকার। ওষুধ ও লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন করে রক্তচাপ কমিয়ে রাখা উচিত। প্রত্যেক ছয় সপ্তাহ অন্তর এঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

ওষুধের মাত্রা বদলে ও নতুন ওষুধের সাহায্যে কমপ্লিকেটেড হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অনেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করেন। এই ভুল করলে রক্তচাপ বেড়ে সাংঘাতিক শারীরিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্ট্রোক হয়ে আজীবন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে জীবন কাটানোর ঝুঁকি বাড়ে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাবার পাশাপাশি রোজকার জীবন যাত্রায় কিছু অদল-বদল করা দরকার। বিশেষ করে লবণ খাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়।

লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। দিনে ৪ – ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া চলবে না। বেশি ওজন ও পেটে বাড়তি মেদ হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য মেটাবলিক ডিজিজ যেমন ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সপ্তাহে পাঁচ দিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর মতো দ্রুত পায়ে হাঁটা আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম করা দরকার। গোসল খাওয়ার মতোই শরীরচর্চাকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে হবে। পাকা কলা, কমলালেবু, বিনস, মুসুর ডাল, পালং শাক, মুসুর ডাল, রাঙা আলু ইত্যাদি পটাসিয়ামযুক্ত খাবার রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্যে করে। ডাবেও পর্যাপ্ত পটাসিয়াম আছে, সময় সুযোগ বুঝে ডাব খেতে পারলে ভালো হয়।

এ ছাড়া প্রয়োজন মন ভালো রাখা এবং দৈনিক নিয়ম করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম। কম ঘুম রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। কোভিড অতিমারির কালে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে ভালো থাকতে পারবেন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us