হজরত আলীর প্রতি মহানবী সা:-এর ৩ আদেশ

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম | Oct 19, 2020 05:24 pm
হজরত আলীর প্রতি মহানবী সা:-এর ৩ আদেশ

হজরত আলীর প্রতি মহানবী সা:-এর ৩ আদেশ - ছবি সংগৃহীত

 

ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রা: ছিলেন মহানবী সা:-এর চাচাতো ভাই। তিনি তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তার উপনাম- আবুল হাসান ও আবু তুরাব। উপাধি হায়দার, আসাদুল্লাহিল গালিব বা আল্লাহর বিজয়ীসিংহ, মুরতাদা, ইমামুলখুতাবা বা সর্বশেষ্ঠ বক্তা ইত্যাদি। মহানবী সা: তার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তুমি আমার জন্য তেমন যেমন মুসার স্থলে হারুন। তবে পার্থক্য হলো- আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না।’ (মিশকাত-মানকিবে আলী ইবনে আবি তালিব রা: পৃষ্ঠা ৫৬৩, সহিহ বুখারি ও মুসলিম) খায়বার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা প্রদান করব যার হাতে আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করবেন, যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন।’

অতঃপর যখন সকাল হলো সবাই প্রত্যাশার প্রহর গুনছেন কার হাতে রাসূল সা: পতাকা দেন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আইনা আলী ইবনে আবি তালিব, আলী ইবন আবি তালিব কোথায়? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, এখানে হে আল্লাহর রাসূল সা:! তবে তার চোখে অসুখ। রাসূল সা: বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো।’ অতঃপর হজরত আলী রা:-কে আনা হলে রাসূল সা: মুখের একটু লালা তার চোখে লাগিয়ে দিলে চোখ সুস্থ হয়ে যায়। অতঃপর তাকে খায়বার যুদ্ধের পতাকা প্রদান করেন (মিশকাত পৃষ্ঠা-৫৬৩ সহিহ বুখারি ও মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সা: হজরত আলী রা: প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘আলী আমার থেকে, আমি তার থেকে, সে মুমিনদের অভিভাবক।’ (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা- ৫৬৪) ‘যে ব্যক্তি আলীকে গালি দিলো, সে যেন আমাকে গালি দিলো।’ (আহমদ, মিশকাত পৃষ্ঠা-৫৬৫) দ্বিতীয় হিজরিতে মহানবী সা: স্বীয় আদরে দুলালি হজরত ফাতিমা রা:-কে তার সাথে বিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি জ্ঞানের শহর, আর আলী এর দরজা’। (মিশকাত)

জামাতাকে তিনটি কাজের আদেশ : মহানবী সা: স্বীয় জামাতা হজরত আলী রা:-কে আদেশ দেন, ‘হে আলী! তিনটি কাজে কখনো বিলম্ব করবে না; (মিশকাত) বরং দ্রুত সম্পন্ন করবে।

এ তিনটি কাজ হলো

১. জানাজায় উপস্থিত হলে দ্রুত জানাজার নামাজ পড়ে ফেলবে। কখনো বিলম্ব করবে না। কারণ সে যদি নেককার হয়, তাহলে তুমি তাকে তার সুখ-শান্তি থেকে বঞ্চিত করলে। আর যদি বদকার হয়, তাকে তার প্রাপ্ত শাস্তি হতে দিলে না। উভয়টি অন্যায়, কিন্তু আমরা কী করি! লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য দেয়া হয়। রাজনৈতিক নেতা হলে তো কথাই নেই, কয়েক ঘণ্টা চলে বক্তব্য। আবার কখনো কখনো ছেলে বা মেয়ে আসার জন্য বিলম্ব করা হয়। যতক্ষণ সময় লাগে লাগুক কিন্তু তাদের আসা ছাড়া জানাজা হবে না। তা আদৌ শরিয়ত সমর্থিত কাজ নয়। শরিয়তের নির্দেশ হলো যথাসম্ভব দ্রুত জানাজা পড়ে দাফনের ব্যবস্থা করা।

২. নামাজের সময় হলে নামাজ আদায় করবে : কারো জন্য নামাজ বিলম্ব করা জায়েজ নেই। তবে কোনো দুষ্ট প্রকৃতির লোকের জন্য বা কোনো নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়ে এমন নামাজির জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা জায়েজ। (আল আশবা ওয়ান নাজাইর দ্বিতীয় খণ্ড, সালাত অধ্যায়) অনেক ইমামের মতে আউয়াল ওয়াক্তে তথা নামাজের সময় হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়া মুস্তাহাব।

৩. ছেলেমেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ের ব্যবস্থা করবে : ছেলেমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকদের অন্যতম দায়িত্ব হলো তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। শরিয়তে বিয়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আমাদের দেশে বিয়ের জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যা শরিয়ত সমর্থিত নয়। এমনো দেখা যায়, অনেকে ইচ্ছে করেই বিয়ে বিলম্ব করে বা তাদের অভিভাবকও এ ব্যাপারে কোনো চিন্তাই করে না। ছেলেমেয়েদের চরিত্র ঠিক রাখতে হলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত।

ছেলেমেয়ে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কাজ করলে বাবা-মাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যভিচার মহামারী আকার ধারণ করছে। এর প্রধান কারণ দু’টি। একটি হলো- যথাসময়ে নারী-পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থা না করা। অন্যটি হলো- নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশা। নারীরা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, যানবাহনে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, স্কুল-কলেজে চলাফেরা করে। এমনকি যুবকদের আকৃষ্ট করার যত কৌশল আছে সবই তারা করছে। আবার ছেলেরাও স্কুল-কলেজে, পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে মেয়েদের কটূক্তি ও হয়রানি করছে যা তাদের আদৌ করা উচিত নয়। ব্যভিচারে আকৃষ্ট করার আরেকটি মাধ্যম হলো মোবাইল।

হাদিসের ভাষ্য মতে, ব্যভিচারের পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায়, তিনটি আখিরাতে।

দুনিয়ায় তিনটি হলো- সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া, ২. দারিদ্র্যতা, ৩. অকালমৃত্যু।

আখিরাতের তিনটি হলো- ১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাবের কঠোরতা এবং ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই.ফা.পৃষ্ঠা-১০৯)

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us