সূরা ফাতিহা : বিস্ময়কর প্রার্থনা

এস.এম শফিউল্লাহ | Dec 15, 2020 03:47 pm
সূরা ফাতিহা এক বিস্ময়কর প্রার্থনা

সূরা ফাতিহা এক বিস্ময়কর প্রার্থনা - ছবি সংগৃহীত

 

সর্বপ্রথম যখন আল-কুরআন বুঝার চেষ্টা আরম্ভ করলাম তখন মনের পাতায় অনেক প্রশ্ন জাগ্রত হতে থাকল। সহস্র প্রশ্নের মধ্যে এটিও আমার মনের একটি প্রশ্ন ছিল- সূরা আলাক কেন সূরা ফাতিহার আগে সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে অবতীর্ণ হলো না। সূরা বাকারার মতো বৃহৎ একটি সূরা কেন মাত্র সাত আয়াতবিশিষ্ট সূরা ফাতিহার পার্শ্বে স্থান পেল। একসময় মনের অজান্তে যেন আমার প্রশ্নগুলোর উত্তরপত্র আমার দুই চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে থাকল। কঠিন অন্ধকার, আকাশে ঘনীভূত মেঘ, ঘোর নিনাদে বজ্রপাত, এহেন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পথিকের পথচলা। একটা টর্চ বা আলোর প্রয়োজন তো পথে ওঠার আগেই হয়ে থাকে, পথ শেষ হলে তো আর আলোর প্রয়োজন হয় না। এ দুনিয়াতে ঘোর অন্ধকার সমপথ, মুমিন বান্দারা সে আঁধার পথের পথিক, মরদুদ শয়তান পথের বাঁকে বাঁকে বসে আছে ওঁৎ পেতে তাদের মূলধন ঈমান কেড়ে নেয়ার জন্য। তাই তো পরম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন এ আঁধার পথ চলার জন্য আলো হিসেবে এবং পথের দিশা হিসেবে পুরো কুরআন তাঁর বান্দার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও এ সেই গ্রন্থ যার ভেতরে কোনো সন্দেহ নেই, খোদাভীরুদের জন্য এটি হচ্ছে পথনির্দেশিকা।’

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কুদরত ও শান আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বুঝে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে হজরত জিবরাইল আ: সর্বপ্রথম যে পাঁচটি আয়াত নিয়ে এসেছিলেন তা হচ্ছে- সূরা আলাকের প্রথম অংশ। আর এর সর্বপ্রথম আয়াতের সর্বপ্রথম শব্দ হচ্ছে ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়ো। কিন্তু চিন্তা ও গবেষণার ব্যাপার হলো এই- সূরা আলাক পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে সূরা ফাতিহার পূর্ণ সূরারূপে অবতীর্ণ হওয়ার বেশ পরে। আর সূরা ফাতিহা হচ্ছে পবিত্র আল-কুরআনের পূর্ণাঙ্গ প্রথম সূরা যা মক্কায় অবতীর্ণ বা মাক্কি সূরা। এ সূরাটিতে সর্ব মোট সাতটি আয়াত আছে। আয়াতগুলোর মধ্যে তাঁর বান্দা অতি বিনীতভাবে দুই হাত বেঁধে তার সাথে যে কথাবার্তা বলছে, তার সারমর্ম নিম্নরূপ।

১. সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালকের জন্য যিনি সৃষ্টিকূলের মালিক; ২. তিনি পরম দয়ালু ও অতিশয় মমতাবান; ৩. তিনি বিচার দিনের মালিক; ৪. আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি; ৫. আপনি আমাদের সরল পথটি দেখিয়ে দিন; ৬. তাদের পথ যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ করেছেন; ৭. তাদের পথ নয় যাদের প্রতি অভিশাপ দেয়া হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই, মানুষ যখন কালিমা তাইয়েবা পাঠ করে সর্বপ্রথম আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে একজন মুমিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল তখন তার সামনে সর্বপ্রথম যে কাজটি তা হচ্ছে- অজু ও তৎপরবর্তী নামাজ আদায়। আর নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ পাকের কাছে চাওয়া-পাওয়ার পালা, বান্দা তার মনিবের কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলছে, আর মনিব তার গোলামের কথাগুলো শ্রবণ করছেন। বিদ্যুৎগতিতে যেন আল্লাহ পাক তার গোলামের প্রার্থনাগুলো মঞ্জুর করে নিলেন। এবার আল্লাহ পাক বলছেন- ১. আলিফ, লাম, মিম; ২. এই সে গ্রন্থ যার ভেতরে কোনো সন্দেহ নেই, যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথপ্রদর্শক বা পথনির্দেশিকা; ৩. যারা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস করে যারা সালাত (নামাজ) প্রতিষ্ঠা করে, আমি যে জীবন উপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে; ৪. তোমার ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর ও পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস করে; ৫. এ লোকগুলোই তাদের মালিকের সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম। আল্লাহর বান্দা বা গোলাম তার প্রার্থনাকৃত তিনটি বিষয়ের সমাধান সাথে সাথেই পেয়ে গেছে, অর্থাৎ তার প্রার্থনা যেন সাথে সাথ আল্লাহ পাক মঞ্জুর করে নিয়েছেন। কিন্তু হায়! তার বান্দা তাঁর প্রতি কতটা অমনোযোগী, অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, দান সাদকা করে, যেসব গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে তা বিশ্বাস করে, পরকালের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু পথনির্দেশিকা অর্থাৎ কুরআন পড়েও না, বুঝেও না, বুঝার চেষ্টাও করে না। সে যদি কুরআন পড়ত বুঝত, তবে হয়তো সফলকাম হয়ে যেত, অর্থাৎ আল্লাহ পাক তার চাওয়ার সাথে সাথে পুরো কুরআন শরিফ বান্দার হাতে তুলে দিলেন, বললেনÑ এটাই সহজ সরল পথ, যা তুমি চেয়েছ এটার মধ্যে তা লেখা আছে। এরপর যদি বান্দা বলেÑ আমি পড়তে পারি না, আরবি জানি না। তার উত্তরে আল্লাহ যদি বলেনÑ তবে আরবিতে আমার কাছে কিভাবে প্রার্থনা করলে বা না জেনে সবার সাথে আমিন কিভাবে বললে?

বান্দা হয়তো উত্তরটা এভাবে দিতে পারে, বহু কষ্টে মক্তবে সূরা ফাতিহা শিখেছিলাম কিন্তু ওর ভেতরে কিছু চাওয়া হয়েছে কি না জানি না, আর চাইলেও কী চাওয়া হয়েছে বলতে পারি না। মহান আল্লাহ পাক বান্দার কথার উত্তরটা যদি এভাবে দেনÑ আমি বহু মুফাসসিরে কুরআন দিয়ে বহু ভাষায় আমার এ পথনির্দেশিকার অনুবাদ করিয়েছি, পড়োনি কেন? তখন বান্দার আর কোনো কৈফিয়ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে কোনো জ্ঞানবান ব্যক্তি ভাবতে পারে না। হয়তো মুখ ভারী করে তাঁর বান্দা এতটুকু বলতে পারে, আমাকে অনেকে বলেছিল ওটা বুঝতে যেওনা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তুমি তো আলেম নও। কিন্তু বুঝার চেষ্টা করে না বুঝলে যিনি বুঝেন তার কাছে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে, তাও তো খুলে দেখলে না; পড়ে দেখলে না।

অতএব কুরআন পড়তে জানি না, কুরআন বুঝি না, কুরআন পড়ি না এর অর্থ হচ্ছেÑ তোমার নাম সফলকামদের তালিকা থেকে বাদ। তুমি সারাটি জীবন শুধু বলতেই থাকো- ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us