বাংলায় আর্য আধিপত্য প্রতিরোধ যেভাবে

মুসা আল হাফিজ | Feb 08, 2021 04:39 pm
বাংলায় আর্য আধিপত্য প্রতিরোধ যেভাবে

বাংলায় আর্য আধিপত্য প্রতিরোধ যেভাবে - ছবি সংগৃহীত

 

আর ডি ব্যানার্জি নামে বিখ্যাত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮৫-১৯৩০) ভারতের ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব অনুসন্ধানে গুরুব্যক্তিত্ব। দুই খণ্ডে প্রকাশিত তার বাঙ্গালার ইতিহাস-এ পাওয়া যায়, আর্যদের প্রতিরোধে এখানকার ভূমিপুত্রদের লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত। প্রাথমিক বৈদিক সাহিত্যে সরাসরি বাংলার উল্লেখ নেই। ঋগে¦দ, সামবেদ, যজুর্বেদ ইত্যাদিতে বারবার দেখা যায়, দেবতা ও অসুরের লড়াই। দেবতা এখানে আর্যরা, অসুরদের মধ্যে আছে এই ভূমিজ সন্তানরা। নিজেদের সংস্কৃতি, পরিচয় ও ভূমি রক্ষার লড়াইয়ে তারা যতই পরাক্রম দেখিয়েছেন, ততই ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য অঙ্কন করেছে তাদের ঘৃণ্য ও হীন এক মুখ!

বঙ্গ শব্দের প্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যকে। সেখানে দেখা যায় বঙ্গ, মগধ ও চেরদেশবাসিগণকে আর্যরা চিড়িয়া বা পক্ষিবৎ মনে করেছেন।
এতে বাঙালিদের বলা হয়েছে, ‘বয়াংসী’ বা ‘পক্ষী বিশেষ’: আবার ঐতরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থে পুণ্ড্র্র বা উত্তর বাংলার অধিবাসীদের বলা হয়েছে, দস্যু।

মহাভারতে দেখা যায়, দিগি¦জয়ে বেরিয়ে ভীম সাক্ষাৎ পান সমুদ্রতীরে বাংলার ম্লেচ্ছদের। তারা অপবিত্র। ভগবত পুরানে যাদের মূর্তিমান পাপ বলা হয়েছে, তাদের প্রধান অংশ বাঙালি। বৈধায়নের ধর্মসূত্রে আছে পুণ্ড্রে বা উত্তর বাংলায় আর বঙ্গ বা পূর্ববাংলায় যারা যাবে, তাদের দেশে ফিরে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
মনুর বাক্য হিসেবে পঠিত হতো এই প্রবাদ -
‘অঙ্গবঙ্গকলিঙ্গেষু সৌরাষ্ট্রমগধেষু চ।
তীর্থযাত্রাং বিনা গচ্ছন্ পুনঃ সংস্কারমর্হতি।’
মানে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র ও মগধ দেশে তীর্থযাত্রা ছাড়া অন্য কারণে গেলে পাতিত্যদোষ দেখা দেয় এবং নতুন করে সংস্কারের দরকার পড়ে।

বৌধায়ন ধর্ম্মসূত্রে দেখা যায়, বঙ্গদেশে কেউ যদি যায়, তাহলে শুদ্ধি লাভের জন্য তাকে বিশেষ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে হবে। বাংলা এখানে অপবিত্র, বাঙালি অসভ্য। কিন্তু আসলেই কি তাই?

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে (১৮৫৩-১৯৩১) উদ্ধৃত করে রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় দেখান, যখন আর্যগণ মধ্য এশিয়া থেকে পাঞ্জাবে আসেন, সেই প্রাচীনকালেও বাংলা সভ্য ছিল। রাখালদাসের ভাষায়, ‘আর্য্যগণ আপনাদের বসতি বিস্তার করিয়া যখন এলাহাবাদ পর্যন্ত উপস্থিত হন, তখন বাঙ্গালার সভ্যতায় ঈর্ষ্যাপরবশ হইয়া তাঁহারা বাঙ্গালীকে ধর্ম্মজ্ঞানশূন্য এবং ভাষাশূন্য পক্ষী বলিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন।’

বাংলার উন্নত সভ্যতা সম্পর্কে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন বিস্তর। বাঙালির লোহার ব্যবহার, তমলুকসহ অন্যান্য বন্দর, নানা দেশে জাহাজে করে বাণিজ্য, বালাম চাল রফতানি, জলে ও স্থলে প্রতিপত্তি, বঙ্গরাজ্যের এক ত্যাজ্যপুত্রের সাতশত লোক নিয়ে লঙ্কাজয় ইত্যাদি প্রমাণ করে বাংলা তখন সভ্যতা ও শক্তিতে অনেক অগ্রসর ছিল।

শাস্ত্রী লিখেন, ‘প্রাচীন গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় যে, বড় বড় খাঁটি আর্য্যরাজগণ, এমন কি যাঁহারা ভারতবংশীয় বলিয়া আপনাদের গৌরব করিতেন, তাঁহারাও বিবাহসূত্রে বঙ্গেশ্বরের সহিত মিলিত হইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিতেন।’

এই যখন বাস্তবতা, তখন বৈদিক সাহিত্যে কেন বাংলা ও বাঙালির ইতর চিত্রায়ন? এর মূলে নিহিত আছে আর্যদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলার প্রতিরোধ।

সংস্কৃত ভাষায় আর্য বলতে বোঝায় উত্তম বংশীয়, উত্তম গুণান্বিত ব্যক্তি। কিন্তু আর্যরা কোনো সৎ বা উত্তম বার্তা নিয়ে ভারতে আসেনি। তারা এসেছিল ধ্বংসের বাজনা বাজিয়ে। হাতে ছিল অস্ত্র। প্রায় চার হাজার বছর আগে তারা ঢুকে পড়ে উত্তর ভারতে। দ্রাবিড় অধ্যুষিত সিন্ধু, পাঞ্জাব ও উত্তর ভারত আর্যদের দখলে চলে যায় সহজেই। তাদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে মানুষ পালিয়েছে দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বর্তমান বাংলাদেশ ইত্যাদি অঞ্চলে। আর্যরা বাড়িয়ে চলেছে তাদের দখল। এগিয়ে গেছে দিকে দিকে। ক্রমেই প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত আর্যদের প্রতিপত্তির অধীনে চলে আসে।

বাংলায় প্রবেশের চেষ্টায় কমতি ছিল না তাদের। তবে এখানে প্রবেশ করতে সময় লেগেছে আরো এক হাজার বছর। কিন্তু ধনসম্পদে পূর্ণ উর্বর দেশ জেনেও বাংলায় প্রবেশ করতে আর্যরা এত দেরি করল কেন? আসলে দেরি করতে চায়নি তারা। চেষ্টায়ও কমতি করেনি। বাংলা তাদেরকে রুখে দিচ্ছিল বারবার। বিহারের গন্ধক নদী অতিক্রম করে এখানে প্রবেশ করতে না পেরে এই এলাকাকে তারা নিন্দা করেছে। দেখাতে চেয়েছে, এই অঞ্চল দেবতাপরিত্যক্ত, ধর্মীয়ভাবে তাদের বসবাসের অনুপযুক্ত।

রমিলা থাপার (জন্ম:১৯৩১-) দেখিয়েছেন, বাংলার সাথে আর্যরা দেখাতে থাকে সাংস্কৃতিক সীমান্ত। কারণ আর্যরা পবিত্র, বাংলার অধিবাসীরা অপবিত্র। ‘শেষদিকের বৈদিক সাহিত্যে ইন্দো-আর্য রাজা এবং আগুনের বৈদিক দেবতা ‘অগ্নি’র পূর্বদিকে গমনের যে কথা লিপিবদ্ধ আছে, তাতে এ বিভাজনের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়। এই কিংবদন্তিতে দেখা যায়, ‘অগ্নি’ দেবতা বিহারের গন্ধক নদী অতিক্রম করতে অস্বীকার করেছে, কারণ বৈদিক মতে, বলি দেয়ার জন্য এর পূর্বাঞ্চল তথা পূর্ব বিহার ও বাংলা-ধর্মীয়ভাবে অনুপযুক্ত।

কমপক্ষে খ্রিষ্টপূর্ব চারটি শতাব্দী আর্য-প্রভাব প্রতিরোধ করেছে এই জনপদ। খ্রিষ্টপূর্ব চার শতকে মৌর্যশাসন বাংলার কিছু অংশে আর্যপ্রভাব ছড়িয়ে দেয়। সেই থেকে ক্রমে ক্রমে এগুতে হয়েছে তাদের। প্রতিরোধ জারি ছিল। ফলে বাংলায় আর্যদের জায়গা করে নিতে বৈদিক যুগ প্রায় শেষ হয়ে যায়। এই দীর্ঘ সময় ধরে আর্যদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষায় লড়েছেন এই ভূমির অসম সাহসী সন্তানেরা। সেই প্রতিরোধের বিবরণ শোনা যাক অধ্যাপক মন্মথমোহন বসুর জবানীতে-

‘প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত যখন বিজয়ী আর্য জাতির অধীনতা স্বীকার করিয়াছিল, বঙ্গবাসীরা তখন সগর্বে মস্তক উত্তোলন করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াছিল। শতপথ ব্রাহ্মণ বলেন, আর্যদের হোমাগ্নি সরস্বতী তীর হইতে ভাগলপুরের সদানীরা (করতোয়া) নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত আসিয়া নিভিয়া গিয়াছিল। অর্থাৎ সদানীরার অপর পারে অবস্থিত বঙ্গদেশের মধ্যে তাঁহারা প্রবেশ করিতে পারেন নাই।’

সামরিক অভিযান ব্যাহত হওয়ার পর আর্যরা শুরু করে সাংস্কৃতিক জাল বিস্তার। এর নেতৃত্ব দেয় ব্রাহ্মণরা। তারা প্রথমে প্রবেশ করে বাংলায়; বেদান্ত দর্শন প্রচারের নামে। তাদের এ কাণ্ডজ্ঞান ছিল যে, বাঙালির সংস্কৃতি ও মনের জায়গাটায় যদি পা রাখা যায়, তাহলে বাংলার অজেয় ভূমিও পায়ের নিচে আসবে।
মৌর্য ও গুপ্ত শাসনামলে ব্রাহ্মণ্যবাদী অনুপ্রবেশ ও বাংলার আর্যকরণের যে স্রোত শুরু হলো, তা ছিল দখলদারীরই ভিন্ন অবয়ব। বাংলায় তারা তৈরি করলেন ভিন্ন এক সমাজবাস্তবতা।

নীহাররঞ্জন রায় (১৯০৩-১৯৮১) এর ভাষায়, ‘বাংলাদেশের নানা জায়গায় ব্রাহ্মণেরা এসে স্থায়ী বাসিন্দা হতে লাগলেন, এরা কেউ ঋগে¦দীয়, কেউ বাজসনেয়ী, কেউ শাখাব্যয়ী, যাজুর্বেদীয়, কেউ বা সামবেদীয়, কারো গোত্র কান্ব বা ভার্গব, বা কাশ্বপ, কারো ভরদ্বাজ বা অগস্ত্য বা বাৎসা বা কৌন্ডিন্য। এমনি করে ষষ্ঠ শতকে আর্যদের বৈদিক ধর্ম ও সংস্কৃতির ঢেউ বাংলার পূর্বতম প্রান্তে গিয়ে পৌঁছল।’
এটি ঠিক নয় যে, বহিরাগত ব্রাহ্মণদের এদেশে প্রথমে নিয়ে আসেন রাজা আদিসুর। তারা আদিসুরের আগেই বাংলায় ঢুকে পড়ে। নীহাররঞ্জন রায় দেখিয়েছেন, অষ্টম শতকে বাংলার সর্বত্রই ব্রাহ্মণের বসবাস ছিল। তবে তাদের প্রতিষ্ঠা ও প্রাধান্য শূর, সেন, বর্মণ ইত্যাদি রাজত্বের আমলে। এদের প্রধান্য প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রাজবংশের কোনোটাই বাঙালি ছিল না, সবাই ছিল বহিরাগত।

রাজা আদিসুর রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্রাহ্মণ্য প্রতিষ্ঠায় হন বিশেষভাবে উদ্যোগী। ভরত মল্লিক-এর চন্দ্রপভা কুলপঞ্জিকা (১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দ) কিংবা কবিকণ্ঠহার-এর সদ্বৈদ্য কুলপঞ্জিকা (১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দ) দাবি করে, আদিসুরের মাধ্যমে ব্রাহ্মণরা এ দেশে আসেন কনৌজ বা কোলঞ্চ থেকে। সংখ্যায় তারা ছিলেন পাঁচজন। তারা হলেন, সান্ডল্য নারায়ণ, বৎস্য ধরধর, কশ্যপ সুসেন, ভর্দ্বজ গৌতম এবং সবর্ণ পরসর। এ দেশে রাঢ়ের ব্রাহ্মণ কিংবা বরেন্দ্রের ব্রাহ্মণরা নিজেদের সেই পাঁচ আদিপুরুষের সন্তান দাবি করেন। উভয় ধারা এক পর্যায়ে আলাদা দুটি সামাজিক রীতি ও আচার তৈরি করে। রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্ররা নিজেদের মধ্যে আন্তঃবিয়ে সম্পর্কেও বিশ্বাসী থাকেনি। তাদের বিস্তৃতির পাশাপাশি জারি থাকে বহিরাগত ব্রাহ্মণদের অভিবাসন।

বর্মণ বংশের রাজা সামলবর্মণ বৈদিক ব্রাহ্মণদের বাংলায় বসতি স্থাপনের জন্য নিয়ে আসেন। সেন বংশের বল্লাল সেন ছিলেন এক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর। কৌলিন্যপ্রথাকে তিনি দেন প্রতিষ্ঠা। শ্রোত্রিয়দের মধ্যে যাঁরা নবগুণবিশিষ্ট ছিলেন, বল্লাল তাঁদের কুলীন উপাধি দিয়েছিলেন। এই নবগুণগুলো হলো : আচার, বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থ দর্শন, নিষ্ঠা, শান্তি, তপ ও দান। এগুলি ‘কুল লক্ষণ’ নামে পরিচিত। বর্মণ ও সেন রাজবংশ ব্রাহ্মণ আনত বাংলার বাইরে থেকে। কোনো কোনো পাল রাজাও এক্ষেত্রে ছিলেন প্রবল আগ্রহী।
রাজা আদিশূরের আমদানি করা সেই পাঁচ ব্রাহ্মণের সংখ্যা রাজা ক্ষিতিশূরের সময়ে ঊনষাটে এসে দাঁড়ায়। রাজার দানে প্রত্যেকেই হন একেক গ্রামের মালিক। উত্থান হয় রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের। সবাই সমান কুলীন ছিল না।

এদের ঊনষাট গ্রাম পরে ভাগ হয় তিন শ্রেণীতে। এগুলো হলো মুখ্য-কুলীন, গৌণ-কুলীণ ও শ্রোত্রিয়। প্রত্যেক ব্রাহ্মণ ও তাঁদের উত্তরপুরুষ যে গ্রামে বসবাস করত সে নামেই তারা হয় গাঞী বা গ্রামের অধিবাসী। এটাই হয় তাদের পারিবারিক অভিধা। যেমন ভট্ট, চট্ট, বন্দ্যো, মুখো ইত্যাদি। ফলে মুখতি গ্রামে থাকত, এমন উপাধ্যায় বা কুলীন শিক্ষকরা হয় মুখোপাধ্যায়।

অপর দিকে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের ছিল গাঞী। প্রত্যেকটাই ছিল প্রবল প্রতিপত্তির অধিকারী। তাদের সংখ্যা ও প্রভাব ছিল দ্রুত বিস্তারশীল। লাহিড়ী, সান্যাল, বাগচী, মৈত্র ও ভাদুড়ী পদবীর ব্রাহ্মণরা বারেন্দ্রীয় কুলীন ব্রাহ্মণ। এছাড়া রয়েছে আতর্থী, কাহালি। যদিও সেগুলো কুলীন নয়। এসব পরিবার ও তাদের পরবর্তীদের হাতই হয়ে উঠেছিল বাংলার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকেন্দ্র।

আট থেকে বারো শতকে উৎকীর্ণ বিভিন্ন শিলালিপি স্পষ্ট করে যে, লাট (গুজরাট), মধ্যদেশ এবং ক্রোদঞ্চি বা ক্রোদঞ্চ (কোলঞ্চ), তরকরি (শ্রাবস্তি), মুক্তবস্তু, হস্তিপদ, মৎস-বস, কুন্তির এবং চন্দবর ইত্যাদি জনপদ থেকে এসে বিপুল সংখ্যক ব্রাহ্মণ বাংলায় বসতি স্থাপন করে। এবং রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র এর পাশাপাশি, বৈদিক, শকদ্বীপী ইত্যাদি শাখা তৈরি হয় বাংলার ব্রাহ্মণদের মধ্যে।

ব্রাহ্মণদের পিছু পিছু আসে আর্যদের অন্যান্য শ্রেণী। এ দেশের ভূমিপূত্র ছিলেন অস্ট্রিক দ্রাবিড় ও কিরাতেরা। তাদের ওপর আর্যদের আক্রোশের শেষ ছিল না। ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে ধীরে ধীরে চলে যায় এদেশের কর্তৃত্ব। রাজারা দেশ শাসন করত। কিন্তু রাজাদের শাসন করত ব্রাহ্মণ্যবাদ। মনে রাখতে হবে, ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণ্যবাদ এক কথা নয়। ব্রাহ্মণ মাত্রই ব্রাহ্মণ্যবাদী নন। ব্রাহ্মণ্যবাদ একটি বিকৃতির ফসল। যা বহু রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে হয়ে ওঠে প্রবল ও প্রসারিত। তার হাতে পুঞ্জীভূত হয় বিপুল ক্ষমতা। সেনদের আমলে সেটা লাভ করে অভাবনীয় প্রাবল্য। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের কেন্দ্রে। সেন রাজারা নিজেদের প্রয়োজনেই এটা নিশ্চিত করছিলেন। কারণ তারা এখানে ছিলেন বহিরাগত। ব্রাহ্মণ্য সহায়তা ছাড়া তাদের চলত না।

সুরজিৎ দাস গুপ্ত লিখেন, ‘সেন রাজাদের আমলে প্রচণ্ড আগ্রহে ও প্রচারের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণের উদ্দীপনায় ব্রাহ্মণ্যধর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ফলে বাঙালি সমাজে মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণদের প্রতাপ এত বেশি বেড়ে যায় যে, তা অচিরে অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায়।’
সেই অত্যাচার এখানকার অদিবাসীদের জীবনের মুখকে কীভাবে মরণাচ্ছন্ন করেছিল, তার নজির বাংলার ইতিহাসে একান্ত বিরল।

লেখক : কবি, গবেষক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us