উত্তর আমেরিকার কিনোয়া চাষেরে সফল বাংলাদেশের কৃষক

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Mar 27, 2021 02:52 pm
উত্তর আমেরিকার কিনোয়া চাষেরে সফল বাংলাদেশের কৃষক

উত্তর আমেরিকার কিনোয়া চাষেরে সফল বাংলাদেশের কৃষক - ছবি : বাসস

 

প্রথমবারের মতো এবছর উত্তর আমেরিকার ফসল কিনোয়ার চাষ হয়েছে বাংলাদেশে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কিনোয়া চাষ করে সাফল্য পেয়েছে লালমনিরহাট জেলার কৃষকরা। এই ফসল ধান চাষের চেয়েও লাভজনক। কিনোয়া কাউনের মতো দেখতে। এটি উচ্চমান সম্পূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্য ও ক্যালোরি যুক্ত দানাদার খাবার। ভাত, রুটির বিকল্প হিসেবে ইউরোপ, আমেরিকার, উত্তর আমেরিকা, চীন ও ভারতের মানুষ খায়।

শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কিনোয়া জাতের ফসল নিয়ে গবেষণা করেছে। সেই গবেষণার পর মাঠ পর্যায়ে এবছর প্রথম কিনোয়ার চাষ হয়েছে বাংলাদেশে। সারাদেশে ৫টি পরীক্ষামূলক প্লটে মাঠ পর্যায়ে তৃণমূল কৃষকে দিয়ে কিনোয়া চাষ শুরু হয়েছে। নতুন এই ফসলের চাষ হয়েছে লালমনিরহাটে দুটি, কুড়িগ্রামে একটি ও পটুয়াখালীতে দু’টি প্লটে । লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিনটি কিনোয়া চাষের প্লটে কিনোয়া চাষ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে। কিনোয়ার ফলন হয়েছে আশানুরূপ। উৎপাদন কৃষক আশা করছে বাম্পার। এই ফসল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। কিনোয়া ফসরের শস্য দানার রং তিন ধরণের হয়ে থাকে সাদা, লাল ও কালো।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চিনিপাড়া গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন (৫৫) জানান, কিনোয়া ফসল সম্পর্কে তার কোনো পূর্বে ধারণা ছিল না। কৃষিবিদ ইকবাল হাসান এই কিনোয়া লাভজনক ফসল হিসেবে চাষের সহায়তা ও পরামর্শ দেয়। ২৫ শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করেছি। কিনোয়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। ২৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৮০-৯০ কেজি কিনোয়া শস্য দানা জাতীয় ফসল উৎপাদন হবে। এই কিনোয়া চাষে কোনো রাসায়নিক সারের ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র জৈব সার ব্যবহার করে আশানুরুপ কিনোয়া চাষে সাফল্য পেয়েছি। সরকার বাজারজাত করণে সহায়তা দিলে আগামীতে কয়েক গুণ বেশি জমিতে কিনোয়া ফসল চাষ করার আগ্রহ আছে। বিদেশে এই শস্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মাটি বেলে-দোআঁশ যুক্ত মাটি। শীতের সময় আবহাওয়াও কিনোয়া ফসল চাষের উপযোগী থাকে। তাই কিনোয়া চাষে সাফল্যে এসেছে। এখন জনপ্রিয় করা গেলে এই ফসল কৃষিকে বিশ্বে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনৈতিকে মর্যাদার আসনে বসাবে। কৃষি ঘুরে দাঁড়াবে।

কৃষিবিদ ইকবাল হাসান, কিনোয়া চাষ করতে প্রতি শতাংশ জমিতে খরচ হয় আনুমানিক প্রায় ৫-৬ শত টাকা। কিনোয়া ফসল উৎপাদন হয় (শস্যদানা) উৎপাদন হয় প্রায় ৪-৬ কেজি। ব্যক্তিগতভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের তিন জন কৃষককে কিনোয়া চাষে আগ্রহী করে তুলেছি। এই তিনজন কৃষক ছিল কিনোয়া চাষের পাইলট প্রজেক্ট। উৎপাদন খুবেই (ফলাফল) সন্তোষজনক পেয়েছি। কিনোয়ার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ঢাকা শের-ই- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেনট অব এগ্রোনমি’র প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস জানান, কিনোয়া হলো হাই প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। কিনোয়াতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা সারা শরীরজুড়ে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিকে সহায়তা করে। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চারগুণ হয়ে যায়।

ড. পরিকমল জানান, ৫ বছর গবেষণার পর পাইলটিং করতে মাঠ পর্যায়ে কিনোয়া চাষ তৃণমূলে পর্যায়ের কৃষকদের দ্বারা শুরু করেছি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে কিনোয়া চাষের অনুমোদন দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি এই ফসল চাষ শুরু করতে হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময় সফল ঘরে তোলা যায়। খাদ্য চাহিদা মেটাতে উৎপাদিত কিনোয়া বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।

ফসলটির পুষ্টি সমৃদ্ধতার কারণে খ্রিস্টপূর্ব ৫ হাজার বছর পূর্ব থেকেই ল্যাটিন আমেরিকাভূক্ত দেশে দানা, ফ্লেক্স, পাস্তা, রুটি, বিস্কুট, বেভারেজ হিসেবে কিনোয়া ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালী, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, ভারতসহ ৯৫ টিরও অধিক দেশে কিনোয়া চাষাবাদ হচ্ছে। এসব দেশের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে।

সূত্র : বাসস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us