জিন্দা লাশ

নূরুন্নাহার নীরু | Apr 03, 2021 02:59 pm
জিন্দা লাশ

জিন্দা লাশ - ছবি সংগৃহীত

 

অবশেষে নিরাপত্তাকর্মীরা এসে নিয়ে গেল বৃদ্ধ জিয়াংহুর নির্জীব দেহটা প্লাস্টিকের ব্যাগে পুরে। বিপত্মীক জিয়াংহু এবং তার দু’সন্তান আগে থেকেই ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে কোয়ারেন্টিনে আবদ্ধ ছিল। কোভিড-১৯ ওদের তিনজনের সংসারটাকে নিমিষে ছারখার করে দিলো। বৃদ্ধ বাবার সর্দিজ্বর-কাশি দুভাইকে অতিমাত্রায় সচেতন করে তুলছিল। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের আক্রমণে জনমন আতঙ্কিত। চীনের উবেই প্রদেশ থেকেই যার উত্থান। সেই প্রদেশেরই ছোট্ট শহর উয়াংসা। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা তৃপ্তমধুর দিনযাপনে অভ্যস্থ সহজ সরল মানুষগুলো এখন উদ্ভ্রাান্ত উদ্বাস্তুর মতো নিজভূমে পরাহত। অনুর চেয়েও অণুজীব এই ভাইরাসের কাছে আজ সব পরাস্থ।

মাতৃহীন দুই ভাই। ওদের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ নেই। তাই বলে কি সতর্কতাও নেই? হ্যাঁ সে জন্যই দুভাই স্বঘোষিত কোয়ারেন্টিন পালন করছিল। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে সপ্তাহের দিনগুলোকে ভাগ করে নিয়ে পালাক্রমে দু’ভাই খাবার তৈরি করে নিজেরা খায়। বাবার কক্ষের সামনেও রেখে যায়। কিন্তু আজ সকাল থেকেই বাবার কোনো সাড়া না পেয়েই লারাংহু কল দিয়েছিল জরুরি বিভাগে।

মধ্যরাত। চারদিক নির্জন-সুনসান। নিথর বাতাস। শহরজুড়ে হোম কোয়ারেন্টিন। প্রাণচঞ্চল মানুষগুলো এখন করোনাতঙ্কে দিন গুনছে। কেউ হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে কেউবা বাড়িতেই আইসোলেশনে সময়কে বয়ে বেড়াচ্ছে অপাঙ্ক্তেয় বোঝার মতো।

জিয়াংহুর প্রতিবেশীরা তো আগেই খিল এঁটেছে। নিজ নিজ নিরাপত্তার বলয়ে। যেদিন টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানাজানি হয়ে গেছে সেদিন থেকেই ওরা করেছে অবরুদ্ধ নিজেদের। ভয়ে ওদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। নারীবিহীন সংসারে তিন পুরুষের এই একাকিত্ব জীবন বিষিয়ে উঠছিল যেন।

ধীরে ধীরে শারীরিক, মানসিক সব শক্তি হারিয়ে থার্মোমিটারের পারদের মতো জীবন ওদের ওঠা-নামা করছে।
যদিও আজ করোনাক্রান্তের ১৫ দিন চলছে, দ্বিতীয় টেস্ট করানোর কথা। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য দু’ছেলেকে ভড়কে দিয়ে বৃদ্ধ জিয়াংহু পরলোকে আজীবনের যাত্রায় পাড়ি জমাল!

তবু মেনে নিতে হবে নিয়তি! বাবাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পাড়ি দিতে হবে এ ইহলোক। তাই শোকের সাথেই চলছে শেষকৃত্যের আয়োজন।

যথারীতি চিতায় আগুন জ্বলে উঠল। আগুনের তাপে প্লাস্টিকে মোড়ানো বস্তাবন্দী দেহটা নড়েচড়ে উঠল যেন। ভেতরের মানুষটা কিছু বলতে চায়। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টাতেও দুর্বল ক্ষীণ শরীরে নিজকে মুক্ত করা কঠিন হয়ে গেল তার। চিৎকার করতে চাইল গগণবিদারী- ‘আমি মরিনি, মরিনি এখনো। জ্বরের প্রকোপে চেতন হারিয়ে পড়েছিলাম মাত্র!’

কিন্তু কে শোনে কার আকুতি। আগুনের লেলিহান শিখা ততক্ষণে আকাশচুম্বী। তবু বিকট চিৎকারে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্মশানে কর্তব্যরত বাহিনী প্রাণ নিয়ে দে দৌড়।

এই বুঝি করোনার প্রেতাত্মা বেরিয়ে পড়ল প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে, ধাওয়া করল পিছু পিছু!
শুধু বুঝল না কেউ মুখবাঁধা ব্যাগ থেকে জীবন্ত লাশটি বের হতে পারল না কোনোভাবেই। কিন্তু ভূত নামে অঙ্গার হলো করোনাতঙ্কের জ্বলন্ত চিতায়!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us