কেয়া এবং ছেলেটা

আবুল কালাম | Apr 03, 2021 03:05 pm
কেয়া এবং ছেলেটা

কেয়া এবং ছেলেটা - ছবি সংগৃহীত

 

কেয়া। বেঞ্চে বসা। তার ডান পাশে লম্বা দাড়িগোঁফের একটা ছেলে। ছেলেটার পরনে হিজল রঙের একটা প্যান্ট আর নীল রঙের একটা ফুলহাতা শার্ট। দেখে ইউনিভার্সিটির ছাত্র মনে হয়। ছেলেটার মাথায় কোঁকড়ানো চুল। কেয়ার খোলা চুল উড়ে উড়ে বারবার ছেলেটার চোখে মুখে লাগছে। দারুণ সম্মোহনী গন্ধ মেয়েটির চুলের! বাতাসের মুহুর্মুহু পার্কের অপরূপ দৃশ্য!

কেয়ার অর্কিড খুব পছন্দ এবং ছেলেটাও প্রতিদিন একটা করে অর্কিড কেয়ার জন্য আনে। কিন্তু আজ আনেনি। তাই কেয়া একটু অভিমান করে বসে আছে অন্য দিকে মুখ চেয়ে। ছেলেটাও কোনো কথা বলছে না। সাড়া শব্দহীন। একরকম কেয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা। কেয়া অবাক হয়! সদা ঠোঁটের ফাঁকে হাসিখুশি লেগে থাকা ছেলেটা এমনভাবে স্তব্ধ হলো কেন? তার জানতে ইচ্ছে করে। তাই কেয়া তার নীরব অভিমানকে ভেঙে ফেলে। ছেলেটাকে বুঝতেও দিলো না সেও যে অভিমান করেছিল। কারণ কেয়া জানে দু’জনে একসাথে রাগ করতে নেই। আর ছেলেরাও অত সহজে মন খারাপ করে না! যখন মন খারাপ তীব্র হয় কোনো কারণ থাকে নিশ্চয়। কেয়া আড়চোখে তাকাল ছেলেটার দিকে। নাহ! এখনো গাম্ভীর্যতা লেগে আছে ছেলেটার অবয়বে।

আবির, কি হয়েছে তোমার? ছেলেটা নিরুত্তর। ‘হা’ করে তাকিয়েই আছে। কেয়া আবার বলল, বলোনা? কেয়ার অনুনয়মাখা অনুরোধে ছেলেটা আর নিশ্চুপ থাকতে পারল না। টুপটুপ করে জল পড়ছে ছেলেটার দু’চোখ থেকে। আশ্চর্য, ছেলেরাও কাঁদে? কিন্তু না কেয়া এটাকে কোনো ফিলিংস ভাবল না। ছেলেটার ফঁফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা দেখে কেয়ারও দু’চোখ থেকে পানি টপকাতে লাগল। কেয়া আবার বলে, তুমি নীরব থেকো না প্লিজ! আমাকে বলো তোমার কি হয়েছে?

- ‘কিছু না!’ গুঁড়ি গুঁড়ি শব্দে উচ্চারণ করল ছেলেটা এবং অঝোরে কেঁদে কেঁদে বলল, আমি আর বাঁচব না কেয়া। আমায় মাফ করে দিও তুমি! আমি কেন জানি মৃত্যুকে খুব বেশি স্মরণ করি। হয়তো অতি সন্নিকটেই মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন ঘটবে আমার...

তাই আমি আর চাই না কেয়া তোমাকে আমার এই অনিশ্চিত জীবনে জড়িয়ে রাখতে। যে কথাটা আজ আমি বলার জন্য এসেছি তা হলো, ‘তুমি আমাকে ভুলে যাবে চিরতরে!’ তোমার জীবন নষ্ট হোক তা আমি চাই না কেয়া। তার চেয়ে বরং তুমি তোমার জীবনটাকে নতুনভাবে শুরু করো। আমাকে ঘিরে যতো স্বপ্ন তুমি এঁকেছিলে, মনে করো ওটা ছিল ভুল স্বপ্ন। প্লিজ কেয়া! এরপর থেকে তুমি আমায় আর মিস করো না, হাতজোড় করে বলছি! কিন্তু কেয়া মানতেই পারল না ছেলেটার কথাগুলো। বলল, না আবির, তা হয় না। আমি তো তোমাকে শুধু সুখ পাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি। তোমার দুঃখের ভাগও তো আমি নিতে পারি।

ছেলেটা মেয়েটাকে আর বসিয়ে রাখতে চায় না। বলল, কাল থেকে আর আসব না। তুমি বাসায় ফিরে যাও!
কয়েক দিন পর কেয়ার নিকট সংবাদ পৌঁছল, ভীষণ জ্বরাক্রান্তও ছিল ছেলেটা ছেলেটা এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। শুনতেই, খুঁটিহীন আকাশ ভেঙে পড়ল যেন কেয়ার মাথার ওপর। কোনো কিছুতেই আর কেয়া বিশ্বাস জোগাতে পারছে না। ছেলেটা এমনি এমনি সেদিন তাকে ভুলে যেতে বলেনি। কেয়া শূন্যচোখে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা অনেক স্বার্থপরের মতো না বলে একাকী চলে গেলে!

একদিন হঠাৎ কেয়াও নিখোঁজ হয়ে গেলো। সারা এলাকাজুড়ে তার কোনো সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। পাগল বেশে হন্যে হয়ে কেয়ার বাবা-মা তাকে খুঁজতে থাকে। যাকেই পায় জিজ্ঞেস করে কেয়ার কথা। কেউ বলে, কেয়াকে ওদিকে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি। আবার কেউ বলে, কেয়াকে ওই নির্জন কবরস্থানের দিকে যেতে দেখেছি। অপর একজন বলে কেয়াকে নদীর পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখেছি সেই সন্ধ্যাবেলা...!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us