ফুটবল হ্যান্ট একাডেমির জন্য কি সহায়তা পেতে পারি?

রহমান মৃধা | Apr 05, 2021 03:35 pm
ফুটবল হ্যান্ট একাডেমির জন্য কি সহায়তা পেতে পারি?

ফুটবল হ্যান্ট একাডেমির জন্য কি সহায়তা পেতে পারি? - ছবি : সংগৃহীত

 

অনুপ্রেরণা, সাধনা, কঠিন পরিশ্রম, উৎসর্জন বা বিসর্জন- এসব যদি না থাকে তবে বেটার বা গ্রেটার হবার সম্ভবনা খুবই কম। সব শিক্ষায় কিন্তু নকল জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। তবে ওই নকল কেবল পাস করার জন্য করলে হবে না। আমরা বাংলাদেশীরা একটি বিষয়ে খুব ভালো সচেতন, তা হলো যতো কষ্টই হোক না কেনো লেখাপড়ায় সবাই উঠে পড়ে লেগেছি, ভালো থেকে খুব ভালো হতে চেষ্টা করছি। কিন্তু ভেবেছি কি যে দুনিয়াটা মস্তবড় এবং এখানে প্রয়োজন রয়েছে অনেক কিছুর? এখন সবাই যদি বই হাতে করে জ্ঞানচর্চায় লেগে যাই কী হবে বাকি দিকগুলোর? শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের মাত্রাকে প্রসার করে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো।

যে জাতি ট্রাফিক রুলস অমান্য করে, দুর্নীতি, ধর্ষণ, পরনিন্দা, মিথ্যা কথা বলে, যেখানে সেখানে থুথু বা নোংরা জিনিস ফেলে, কথায় ও কাজে নোংরামি করে, সর্বোপরি তোষামোদি করে, ওই জাতি বিশ্বের কাছে সম্মান পেতে পারে না।

যে জাতি খেলাধুলায় মগ্ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সতর্ক, জানা এবং শেখার আগ্রহে অগ্রগামী, ওই জাতি বিশ্বের কাছে তার সম্মান হারাতে পারে না।

কোনো কিছুতে ভালো করতে হলে যেমন আছি তেমন থাকলে চলবে না। যেমন 'গুড টু বেটার' বা 'গুড টু গ্রেট'-এর মানে যেখানে আছি তার থেকে আরেকটু ভালো থাকার/হবার আকাঙ্ক্ষা বা তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
জাতির নৈতিক মানদণ্ডের উন্নতিতে লেখাপড়ার সাথে সাথে খেলাধুলারও দরকার রয়েছে। খেলাধুলা মানুষের মনকে উদার করে, অলসতা দূর করে, দূর করে কুৎসিত চিন্তাচেতনাকে। খেলাধুলায় যারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত তারা তাদের ইমেজকে কাজে লাগাতে পারে সহজে। ক্রীড়াবিদরা সহজেই বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করে। এদের ব্রান্ড নেমের মূল্য অপরিসীম। এদের ভোগের চেয়ে ত্যাগের ওপর নজর বেশি। এরা আনন্দঘন সময়ের জন্য কাজ করে অনেক, তবে সে আনন্দ মুহূর্তের সময়টুকু কিছুক্ষণ মাত্র। তবুও এই কিছুক্ষণের বিনিময়ে কষ্ট করতে অভ্যস্ত তারা অনেকক্ষণ।

বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ অথচ হাতেগোণা অল্প কিছুসংখ্যক লোক খেলাধুলায় আসক্ত। কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? দৈনিক পত্রিকা খুললে যেসব খবর চোখে পড়ে তা হলো দুর্নীতি, ধর্ষণ। ক্রিকেটের খবরও চোখে পড়ে। তবে কালেভদ্রে । যদি বাংলাদেশ টিম ক্রিকেট ভালো খেলে তাহলে সবার মুখে টাইগারদের গুণগান, খারাপ খেললেই গালিগালাজ।

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখায় বাঙালিরা পাগল। খেলা দেখা, সমালোচনা করায় পণ্ডিত। অথচ কেউ নিজের দেশের হয়ে খেলতে বা খেলাতে রাজি নয়। কারণ কী? কারণ কিছু একটা তো অবশ্যই আছে! আমার ধারণা স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫০ বছর পার হলেও জাতিগঠনে আমরা তেমন একটা মনোযোগী হতে পারিনি।

ওই না পারার ব্যর্থতা অনেকের। একদিকে যেমন অর্থনীতিবিদদের অন্যদিকে তেমন রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের! শুধু এরাই নয়; আছে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবীরাও। আর এদের সবার সামগ্রিক ব্যর্থতা যারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তাদেরও দায়টা কম নয়। আমার মনে হয় এরাই মূলত দায়ী। আর তারা হলেন সাংবাদিকরা। তারা যদি ঠিকমতো তাদের দায়টা পালন করে যেত, তাহলেও আমরা কিছুটা আলোর দিশা খুঁজে পেতাম। কী আমার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না?

আসুন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা শুনাই! বছর খানেক আগে যেমন একটি জাতীয় দৈনিকের দু'জন নামকরা স্পোর্টস সাংবাদিককে সাম্প্রতিক সময়ে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। নাম বললে আপনারা সবাই চিনবেন।

কারণ স্পোর্টস রিপোর্টিংয়ে এই দু'জন সাংবাদিক বাংলাদেশের দিকপাল। কিন্তু বলা নেই, কওয়া নেই, কোনো এক সকালে এদের সামনে পূর্বলিখিত অব্যাহতিপত্র এগিয়ে দেয়া হয়। অথচ এদের লেখায় একসময় ওই পত্রিকার হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক দুঃসময়ে এরা তাদের লেখনি দিয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ টাইগারদের একটি সবল, হৃষ্টপুষ্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টিম গঠনে এদেরও অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। আর তারা সেটা পালনও করে আসছিলেন সুষ্ঠুভাবে। সেই যে আইসিসিতে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো তারও আগে থেকে; এদের লেখনি বেচে ওই সম্পাদক আজও বেঁচে আছেন। অথচ এদেরকেই ইস্তফা দিতে হয়েছে। কী কারণ থাকতে পারে সেটা সব সময় জানা জাবে না বা হবে না।
আমার লেখার কারণও সেটা নয়, তবে একটি দেশ বা জাতির যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে দেশের উন্নতি হবে কী করে? বিশ্বের কোথায় কীভাবে খেলাধুলার প্রতি কী পরিমাণ ইনভেস্ট করা হচ্ছে এসব বিষয় যদি প্রতিনিয়ত লেখালেখি না হয় কীভাবে নতুন প্রজন্ম জানবে?

নতুন প্রজন্মদের যদি অনুপ্রেরণা না দেয়া হয়, তবে কি কোনো পরিবর্তন হবে? বাংলাদেশের ক্রীড়া শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা সক্রিয় হওয়া দরকার। খেলাধুলার জগতকে প্রতিদিন তুলে ধরা দরকার, জানা অজানা খেলাধুলার জগতের খবরাখবর দৈনিক সংবাদের একটি বিশেষ অংশ হওয়া দরকার, যা একটি জাতিকে চেতনা দেবে, অনুপ্রাণিত করবে।

বাংলাদেশ সরকার এখনও বিষয়টির তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করছে বলে আমার মনে হয় না। পৃথিবীতে অনেক দরিদ্র দেশ রয়েছে যারা খেলাধুলার কারণে বিশ্বে সম্মান অর্জন করছে। খেলাধুলা নিয়ে যে সব ভালো উন্নতমানের সাংবাদিক রয়েছে তাদেরকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন লেভেলের খেলাধুলাকে প্রতিদিন তুলে ধরা একই সঙ্গে বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে তা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করা খুবই দরকার এ প্রতিযোগিতার যুগে।

প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়, নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্রিয়েটিভ মনোভাবের সৃষ্টি না করতে পারলে এরা দেশপ্রেমিক হবে না। হাজারও ভালো শিক্ষা অর্জন করলেও দুর্নীতিমুক্ত হবে না দেশ। সুশিক্ষা পেতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমি যেহেতু শিল্পব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত থেকেও খেলাধুলার ওপর বহু বছর সময় দিয়েছি এবং আমার ছেলেমেয়েকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। তাই জানি এর মূল্য কী।
আমি বাংলাদেশে ফুটবল হ্যান্ট একাডেমি চালু করতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যেখানে উদ্দেশ্য মাত্র একটিই, আর তা হলো, লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বে তুলে ধরা। আর তার জন্য দরকার সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ। কীভাবে পেতে পারি, তা জাতির কাছে আমার এখন এটাই প্রশ্ন?

আমি বিশ্বাস করি, ১৭ কোটি মানুষের ৩৪ কোটি পা ও হাত রয়েছে তাকে কাজে লাগানো সম্ভব। আর ওই সম্ভবকে বাস্তবে রূপ দিতে সবার সাহায্য কামনা করছি। একইসাথে বাংলাদেশের সকল সাংবাদিককে দেশের স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান করছি।

লেখক : সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us