কঠোর লকডাউন ৭ না ১৪ দিনের?

অন্য এক দিগন্ত | Apr 10, 2021 09:13 am
লকডাউন

লকডাউন - ছবি : সংগৃহীত

 

চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ক্রমেই শঙ্কা বাড়াচ্ছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হলেও তা চলছে অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে। করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য পরিপূর্ণভাবে অন্তত দুই সপ্তাহের লকডাউনের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য এই লকডাউন দেয়া হবে। এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে। গণপরিবহন ও শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আগামীকাল রোববারের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে এদিন কিংবা পরদিন ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান।

গতকালে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কিন্তু এতেও জনগণের উদাসীনতা কমেনি। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করছে।’

পরে লকডাউন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ কমানোর জন্য গত ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। সেটির আলোকেই ৪ এপ্রিল আরেকটি প্রজ্ঞাপন আমরা দিয়েছি। যাতে মানুষ ঘরের বাইরে না আসে। তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, আরো কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল। সেই আলোকেই এখন পর্যন্ত চলছে।’

তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কথা চিন্তা-ভাবনা করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেছেন, আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী ১৪ তারিখ থেকে সাত দিনের কঠোর লকডাউন দিতে যাচ্ছি আমরা।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘জরুরি সেবা ছাড়া, সব ধরনের অফিস আদালত, গণপরিবহন, দোকানপাট, মার্কেট সব কিছুই বন্ধ থাকবে। সবকিছু কঠোর লকডাউনের আওতাধীন থাকবে। শিল্প-কারখানাগুলোও বন্ধ থাকবে। মানুষ যে যেখানে আছেন, সেখনেই থাকবেন। এটা কঠোর লকডাউন হবে’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে আসতে পারবে না, এটা এবার নিশ্চিত করা হবে। সবাইকে সংযত আচরণ করতে হবে। পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত সুবিবেচনার সাথে নিতে হবে। আর একটি মানুষও যাতে সংক্রমিত না হন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবাইকে ঘরে থাকবে হবে।’ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্ত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল আছে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে একটি নির্দেশনা আছে। নতুন সিদ্ধান্ত ১৪ তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়ে দেবো, সেখানে বিস্তারিত থাকবে। রোববারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হবে আগামীকাল রোববার রাত ১২টায়। বিধিনিষেধের সময়ে অবশ্যই পালনীয় ১১টি নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। তবে বিধিনিষেধ শুরুর পর গণপরিবহন না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা। বিভিন্ন স্থানে তারা বিক্ষোভ করেন। একইসাথে দোকান ও মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতেও আন্দোলনে নামেন মালিক-শ্রমিকরা। দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে গত বুধবার নতুন সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে শপিংমল ও দোকান খোলার দাবিতে ব্যবসায়ীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষে গতকাল থেকে আগামী ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমলও খোলা রাখা যাবে বলে গত বৃহস্পতিবার নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্দেশনা অনুযায়ী আজ শপিংমল ও দোকানপাটও খোলা রয়েছে।

এ দিকে, গত ৭ এপ্রিল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে উদ্বেগজনকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১৮টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না বলে মনে করে জাতীয় কমিটি। আর না মানার ফলে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
গতকাল শুক্রবার কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ আরো শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার মনে করে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সভায় মতামত জানান কমিটির সদস্যরা। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করা হয়। দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলেও মতামত দিয়েছে কমিটি। একইসাথে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালের সাধারণ বেড, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচেষ্ট আছে জানিয়ে কমিটি আশা করছে, ডিএনসিসি হাসপাতাল আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে। হাসপাতালে রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় সরকারি পর্যায়ের এই কার্যক্রমের সাথে পাল্লা দিয়ে অতি দ্রুত আরো সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে কমিটি।

করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাস থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢিলেঢালা লকডাউনে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তখন করোনায় আক্রান্ত বহু লোককেই ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। সূত্রটি জানায়, এখন যে ধরনের লকডাউন চলছে, তাতে সাধারণভাবে দেখলে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ কমেনি। তবে এটাও ঠিক সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়েওনি। এখন কঠোর লকডাউন দেয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেই তারা মনে করছে।

দেশে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু যেখানে ছিল ৬৪, দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৭৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদদের নানা পূর্বাভাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে সরকার।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us