বাইডেনের নীতি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধকে জটিল করছে!

এম আর রাসেল | Apr 14, 2021 04:57 pm
জো বাইডেন

জো বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত

 

গত মাসে আলাস্কায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সাথে প্রথম বৈঠকেই দুই দেশের প্রতিনিধিরা উচ্চবাক্য বিনিময় করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রেষারেষি দ্রুতই মিলিয়ে যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীন বিশ্বব্যবস্থার প্রতিষ্ঠিত নিয়মের বাইরে হাঁটছে, যা বৈশ্বিক অস্থিরতা তৈরি করছে। সাইবার হামলা, দক্ষিণ চীন, উইঘুর ও হংকং ইস্যুতে চীন একতরফা উগ্রতা প্রদর্শন করছে। বিরোধী মতকে দমনের মাধ্যমে চীন কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়াকে চীন মেনে নিতে নারাজ। চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকার রাখে না। চীনের অবশ্য পশ্চিমা মিডিয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীন নতুন এক কূটনীতির জন্ম দিয়েছে তা হল 'নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি'।

এর মূল কথা হলো, চীনের ওপর পশ্চিমা কূটনৈতিকদের আক্রমণের বিরুদ্ধে আগ্রাসী জবাব। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঈ কনিষ্ঠদের প্রেরণা দিতে এক বৈঠকে তাদের 'উলফ ওয়ারিয়া'র হওয়ার আহবান জানান। সেই থেকেই চালু হয় নতুন শব্দবন্ধ 'Wolf Warrior Diplomacy'।

একসময় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ছিল। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই চীনের আজকের উন্নয়নের পদযাত্রার শুভ সূচনা হয়। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীনকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে সাহায্য করেন।

১৯৮০-৯০ সালে দেং জিয়াও পিংয়ের অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছিলেন, চীনের বাজার উন্মুক্ত করে দেন, আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থায় চীন যুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চীন বিশ্ব ব্যবস্থায় মিশে যায়।

দেও জিয়াং পিং হলেন চীনের উন্নয়নের মূল রূপকার। তার ভাষায় 'Poverty is not socialism, to be rich is glorious'। তার সংস্কার কর্মজুড়ে দারিদ্র হটানোর সুরই ধ্বনিত হয়।

তার একটি উক্তি ওই সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। 'বিড়াল সাদা বা কালো সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো বিড়াল ইঁদুর মারে কিনা। এ প্রসঙ্গে তার আরো একটি বিখ্যাত আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দেই৷ যার মূলকথা অনুসরণ করে দীর্ঘ দিন চীনের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়েছে। উক্তিটি হলো- 'Hide one's strength and bide one's time.'

দেও জিয়াং পিংয়ের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রকে আশাবাদী করেছিল যে এর মধ্য দিয়ে চীন গভীরভাবে উদার ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় একীভূত হবে, গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন পথ হাঁটলেও উদারবাদী আর্দশকে গ্রহণ করেনি, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের আদর্শকেই গ্রহণ করেছে।

১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের মোহনীয় আশাবাদের বেলুন ফুটো করে দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালে তাইওয়ান স্ট্রেইট সংকট, ১৯৯৯ সালে ন্যাটো কর্তৃক বেলগ্রেডে চীনের দূতাবাসে বোমা বিস্ফোরণ- প্রভৃতি ঘটনা চীনের কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের মোহমুক্তি ঘটায়।

একুশ শতকের শুরু থেকেই চীনকে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করে। ট্রাম্প আমলে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে শুল্ক আরোপের বাহারি খেলা। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, বাইডেনের আগমন চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনবে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে দেশ দুটির মধ্যকার বিরোধ নতুন মাত্রা পাবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us