ইসরাইলকে কি হারানো সম্ভব?

এম আর রাসেল | Apr 16, 2021 01:51 pm
ইসরাইলি বিমান

ইসরাইলি বিমান - ছবি : সংগৃহীত

 

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে চ্যালেঞ্জ করার মতো একমাত্র ইরানই এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে৷ দেশটি এই অঞ্চলে উঠতি শক্তি। অনেক বিশ্লেষক মত দিয়েছেন, ইরান ও ইসরাইল বিরোধই হবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ইস্যু।

মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির লড়াইয়ে আগামীতে পৃথিবী এই দুই দেশের আচকা-আচকির গল্পই শুনবে বেশি। ইসরাইল যেমন প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠেছে ইরানও তেমনি ওই খেলায় জোর কদমেই এগিয়ে চলেছে৷

দেশটি প্রভাব বিস্তারের খেলায় নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক প্রভৃতি দেশে প্রভাব বিস্তার করেছে। ইয়েমেনে হাউছি, লেবাননে হিজবুল্লাহ দিয়ে ইরান বহু দিন ধরেই ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

আইসিস দমনেও ইরান সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। ইরাকে আজ বলতে গেলে ইরানেরই শাসন চলছে। আফগানিস্তান, কাতার, সৌদি আরবসহ প্রতিটি দেশের শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে ইরান আজ একটি আশার ফুল। ইরান অনেক বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মিসাইল প্রতিরক্ষায় ইরানের শক্তি খোদ ইসরাইলকেও তাক লাগিয়ে দেয়৷

ইরানকে থামাতে মরিয়া ইসরাইল

ইরানের এই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে সর্বগ্রাসী কৌশল গ্রহণ করেছে ইসরাইল। তারা ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও এর বিজ্ঞানীদের উপর অন্যায়ভাবে বহু আক্রমণ করেছে। সিরিয়ার ইরানের স্থাপনার ওপর অগুনতি এয়ার স্ট্রাইক পরিচালনা করেছে। গত দুই বছর ইরানের ডজন খানেক জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলা করেছে। কাসেম সুলাইমানি ও সর্বশেষ ফাখরিজাদেহ হত্যাতেও ইরানের হাত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।

এসবের পিছনে একটাই উদ্দেশ্য পরমাণু প্রকল্পকে পিছিয়ে দেয়া অথবা বিনাশ করে সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনা। আর এই কাজের জন্য ইসরাইল তার নতুন আরব বন্ধুদের ব্যবহার করছে।

ইসরাইলকে মোকাবেলায় ইরান ব্যর্থ

এর প্রতিবাদে ইরান প্রতিশোধের হুমকি দিলেও ইসরাইলের দুই একটা জাহাজে আক্রমণ ছাড়া বড় কোনো কিছুই করতে পারেনি। ইতোমধ্যে দেশটি পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিতে ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইল যেকোনো উপায়ে ইরানের এই অগ্রগতি থামিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা, বারবার পরমাণু কেন্দ্র আক্রমণ, সিরিয়ার ইরানি অবস্থানে হামলা প্রভৃতি ঘটনার যথোপযুক্ত জবাব ইরান দিতে পারেনি। কাসেম সুলাইমানি হত্যার পর ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনায় কয়েকটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বাইরে তেমন বড় কিছুই করতে পারেনি। ফাখরিজাদেহ হত্যার পরও হম্বিতম্বির মধ্যে দিয়েই শোক কেটে গেছে।

তবে এখানে উল্লেখ করা যায়, কাসেম সোলাইমানির হত্যার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনায় মিসাইল হামালা চালানোর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে শক্ত বার্তা দিয়েছে। হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৫২টি স্থাপনার উপর পাল্টা হামলার ঘোষণা দিয়েছিল।

এর জবাবে ইরান বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা করলে ইরানের পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হবে আরব আমিরাতের দুবাই ও ইসরাইলের বড় শহর ও বন্ধর নগর হাইফা। হাইফাতে আক্রমণের ছক ইরান ও হিজবুল্লাহ উওয়ের কাছেই রয়েছে।

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ কি আসন্ন?

সাইবার হামলা বা ছায়াযুদ্ধের মধ্যে আপাতত দুই দেশের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকলেও দিন দিন উত্তেজনা যে হারে বাড়ছে এতে করে ভবিষ্যৎ দেশ দুটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিকেও সামনে রেখেছেন। তিনি বছরের শুরুর দিকে বলেছেন, 'ইরান পরামণু অস্ত্র পেতে আগ্রহী। এটা পরিষ্কার যে ইসরাইলকে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'

তবে যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইল দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক কিছু পাবে না এমন মতামত অনেক বিশ্লেষকের। কারণ তখন তাকে বিভিন্ন ফ্রন্টে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের প্রধান মাথাব্যথা। এর আগে হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের পরাজয়ের রেকর্ড রয়েছে। সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা কম এরপরও বিষয়টি একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না।

ইসরাইল কি আসলেই শান্তি চায়?

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখানকার প্রতিটি সংকটেই ইসরাইলের ভূমিকা রয়েছে। যখনই কোনো আরব দেশ পরমাণু শক্তির উত্তরাধিকার পেতে চেষ্টা করেছে তখনই ইসরাইল তা ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়েছে। এর আগে সিরিয়া ও লিবিয়ার পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করে মোসাদ। মিসরের মিসাইল কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিতে পত্রবোমা পাঠিয়ে এই প্রকল্পের সাথে জড়িতদের হত্যা করে মোসাদ।

বাইডেন প্রশাসন যখন ইরানের সাথে একটা সমঝোতার চেষ্টা করছে তখন ইসরাইল সাহায্য না করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ইসরাইলি লবির মাধ্যমেও বাইডেন প্রশাসনকে বাধাগ্রস্ত করতেও থেমে নেই ইসরাইল।

ইরান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলে ইসরাইল নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। এটা মেনে নিলেও এর সমাধান কি অন্যভাবে করা যায় না? উত্তেজনা ছড়ানো, মানুষ হত্যা, যুদ্ধাবস্থা তৈরি করা এগুলোই কি একমাত্র সমাধান?

শেষ করার আগে আল জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশরার সুরে বলতে চাই, 'আর কত যুদ্ধ এই অঞ্চলে হলে ইসরাইল নিরাপদ হবে? আর কত দেশ অস্থিতিশীল করলে ইসরাইলের অহমিকা চরিতার্থ হবে? মধ্যপ্রাচ্যের সংকট শেষ হওয়ার আগে আর কত মানুষকে মরতে হবে?'


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us