কবি আল মাহমুদের সাথে আলাপচারিতা

সাঈদ চৌধুরী | Apr 16, 2021 03:27 pm
কবি আল মাহমুদের সাথে আলাপচারিতা

কবি আল মাহমুদের সাথে আলাপচারিতা - ছবি : সংগৃহীত

 

প্রবাসী কবি ও সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে কবি আল মাহমুদের সাক্ষাৎকার নেন, কবির সাথে একান্ত আলাপচারিতায় সময় কাটান। সেগুলোই একত্র করেছেন এই লেখায়। কবির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি এটুকুই আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য : সম্পাদক

সাঈদ চৌধুরী : আত্মজীবনী লেখার কোনো আগ্রহ আছে কি?

আল মাহমুদ : একটি আত্মজীবনীর খসড়া তৈরি করতে মাঝে মধ্যে আমার ভেতর থেকে প্ররোচনা আসে। তবে আমি অনেক কিছু লিখেছি, যা আমার ওপর দিয়ে একদা প্রবাহিত হয়ে গেছে। তাই আমার লেখাতেই আমাকে খুঁজলে পাওয়া যাবে।

আমার কৈশোরে এই দেশটিকে আমি ভালোবেসে পর্যবেক্ষকের মতো বারবার পায়ে হেঁটে দশ দিক ঘুরে চিনেছিলাম। কতভাবে যে আমি বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছি, সে কথা বলতে গেলে অফুরন্ত এক মহাকাব্যের উপাদান আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে।

সাঈদ চৌধুরী : এদেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
আল মাহমুদ: সাধারণ মানুষের প্রতি আমার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। তারা হাল-বলদের চাষের জমিতে সোনার শস্য ফলিয়েছে।

সাঈদ চৌধুরী : কবিতা আপনার রক্তের মধ্যে ছিল নাকি সাধনার মাধ্যমে অর্জিত?
আল মাহমুদ : কবিতা খুবই কঠিন কাজ। অনেক সাধনা আর পরিশ্রমের কাজ। ছন্দ-মিল জানতে হয়। এ জন্য আমাকেও অনেক কসরত করতে হয়েছে। সারাক্ষণ কবিতার ছন্দ, অন্তঃমিল ইত্যাদি নিয়ে ভেবেছি। এ নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছি। যদিও লেখার কাজটা সবার নয়, তা যদি হতো তাহলে তো কেরানিরাই জগতের শ্রেষ্ঠ লেখক হতেন।

কবিকে অবশ্যই আলাদা মানুষ হিসেবে, স্বপ্নের সৃজনকর্তা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবে আমি যে কবি, এটা সম্ভবত আমার রক্তের মধ্যে ছিল। কবিতার ছন্দ আমাকে সুখ-দুঃখের গন্ধ দেয়। কবিতা না হলে জীবনের যে একটা ছন্দ আছে, সেটা জানা হতো না।

সাঈদ চৌধুরী : আপনি অনেক ভেবেচিন্তে লিখেন নাকি তাৎক্ষণিক?
আল মাহমুদ : খুব ধীরে সুস্থে, যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে লিখি। কী ঘটেছে তা মাথায় নিয়ে আমি লিখি। কল্পনায় একটি চিত্র তৈরি করি। সেটা অন্যরকম এক ব্যাপার। সাহিত্যের মানুষ ছাড়া সহজে তা বোধগম্য নয়।

কবি হিসেবে আমার কল্পনাশক্তির সীমানা অনেক বড়। আমি চোখ বন্ধ করলে কল্পনার তরঙ্গে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় চলে আসে। আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন, জীবনকাল এবং আত্মীয়-পরিজনের মুখ ভেসে আসে। এসব নিয়েই তো আমার কাহিনী, আমার কাব্য। এক অর্থে আমার জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

সাঈদ চৌধুরী : আপনার সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল যেমন বেশি তেমনি কিছু মানুষের বিদ্বেষও পরিলক্ষিত হয়। এই বিদ্বেষটা কেন?

আল মাহমুদ : আমার সম্পর্কে কিছু মানুষের কৌতূহল ছিল। আবার কিছু মানুষের ইর্ষা-বিদ্বেষও ছিল। যারা আমার প্রতি বিদ্বিষ্ট ছিলেন তারা কুৎসা রটিয়ে অন্তর্হিত হয়েছেন। আর আমি স্বপ্নজাল বুনে চলেছি। আমার বই কেউ না কেউ পড়ছে। লেখকের পরমাত্মীয় হলো তার পাঠক-পাঠিকা। তারা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত, তাদের অন্তরাত্মায় আনন্দের ফোয়ারা দেখে আমার মন প্রফুল্লতায় ভরে যায়। আমার আত্মার শক্তি বিশ্বব্যাপী আত্মীয়তা বৃদ্ধি করে চলেছে। এর চেয়ে বড় সার্থকতা কবির জন্য আর কী হতে পারে?

সাঈদ চৌধুরী : লেখালেখি আপনার পেশা নাকি প্রশংসা ও পরিতৃপ্তির জন্য লেখেন?
আল মাহমুদ : আমি কবি। আমি স্বপ্নের কথা বললেও স্বপ্ন আমার খাদ্য নয়। আমি স্বপ্ন ভাঙিয়ে খুচরো পয়সার মতো নানা দুঃখ, অশ্রুজল ও অনুভূতি ক্রয় করে থাকি। যদিও লেখাটাই আমার পেশা। অন্য জীবিকায় যেতে মন চায়নি। আমার জাতির জন্য আমার যা করণীয় ছিল, তা করেছি, কোনো পুরস্কার বা তিরস্কার ভেবে নয়।

সাঈদ চৌধুরী : আপনিতো জীবন ও কবিতাকে দেখেছেন অভিন্ন দৃষ্টিতে, নতুন কিছু ভাবছেন কি?
আল মাহমুদ : ভাবনা-চিন্তার মধ্যে বহির্গমন ছাড়া নতুনত্ব আসে না। বয়সের কারণে প্রতিবন্ধীর মতো বিছানায় পড়ে আছি। যদিও চোখ বন্ধ করে ভাবলে বহু দূর পর্যন্ত পেছনটা দেখতে পাই। তবে স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে ভুগছি। অনেক কিছু মনে রাখতে পারি না। লেখার যে সতেজতা ও প্রাণশক্তি দরকার, সেটা তো আর নেই। হাত গুটিয়ে বসে থাকার মাঝেও এক ধরনের আরাম খুঁজি। কিন্তু তা হয় না। শেষ পর্যন্ত লেখাই আমার নিয়তি। লেখালেখির ব্যাপারে এখনো শ্রান্ত হয়ে পড়িনি। কেউ সাহায্য করলে এখনো অনর্গল বলে যেতে পারি।

সাঈদ চৌধুরী : আপনার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর মাহমুদ। ডাকনাম পিয়ারু। আল মাহমুদ হলেন কিভাবে?

আল মাহমুদ : হ্যাঁ! আমার পুরো নাম ওটাই। নামটি অনেক বড় তো, তাই লেখালেখির প্রায় শুরুর দিকেই এডিট করে নামটি ছোট করে ফেলি, মাহমুদের আগে ‘আল’ শব্দটি বসিয়ে হয়ে যাই আল মাহমুদ। ‘আল’ শব্দটিকে ইংরেজিতে ‘ঞযব’ বলা হয়।

আর আমার ডাকনাম ছিল পিয়ারু। সে-সময় কলকাতায় পিয়ারু নামে বিখ্যাত এক কাওয়ালি গায়ক ছিলেন। আমার আব্বা ছিলেন তার গানের ভক্ত। আমার জন্মের পর ওই কাওয়ালি গায়কের নামে তিনি আমাকে পিয়ারু বলে ডাকতেন। অনেক আদর করে রেখেছিলেন নামটি।

সাঈদ চৌধুরী : ছোটবেলা থেকেই আপনার লেখালেখি শুরু। গ্রামীণ পরিবেশে সাহিত্য চর্চার উৎসাহ পেলেন কিভাবে?

আল মাহমুদ : আমাদের বাড়ির পরিবেশটাই ছিল ভিন্ন রকমের। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তখন বাংলাভাষা কম বলা হতো। বাইরে বাংলা বললেও বাড়ির ভেতরে উর্দু আর ফার্সির চল-ই ছিল বেশি। আমার দাদা-দাদি নিজেদের মধ্যে চোস্ত ফার্সিতে কথা বলছেন- ছেলেবেলায় এটা আমি নিজেই দেখেছি। আমার পরিবারের লোকজন কবিতা পড়তেন- উর্দু ও ফার্সি ক্লাসিক্যাল কবিতা। দাদির মুখেই প্রথম শুনেছি শাহনামার কাহিনী।

আমার দাদার নাম মীর আবদুল ওয়াহাব। তিনি কবি ছিলেন। জারি-সারি লিখতেন। তার একটা লেখা ছিল এমন- ‘পত্র পায়া হানিফায়/শূন্যে দিল উড়া,/দুই ভাই মইরা গেল/ কবুতরের জোড়া।’

দাদার লেখা জারিগুলো খুব ভালো লাগত। গানগুলো গাইতে গাইতে সবাই ঘুরে ঘুরে নাচত।

পারিবারিক সাহিত্যচর্চার একটা প্রভাব আমার মধ্যে জন্মেছিল। প্রথম যখন লেখালেখি শুরু করি, তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। আজ মনে হয়, দাদা কবিতা লিখতেন বলে পরিবারে আমার লেখালেখিও সাদরে গৃহীত হয়েছিল। যখন আমি কিশোর ছিলাম, কবিতা রচনা বা সৃজন-মুহূর্তের উত্তেজনা সারা দিন আমাকে দখল করে রাখতো। নিজের লেখা বারবার পড়তাম। পড়তে পড়তে হাঁটতাম এবং হাঁটতে হাঁটতে পড়তাম। মুখস্থ হয়ে যেত।

সাঈদ চৌধুরী : প্রথম কবিতা লেখার অনুভূতি কেমন ছিল? কখন মনে হলো আপনিও কবি?

আল মাহমুদ : প্রথম কবিতা পড়তে ভালো লাগত- কেমন যেন ঘোরের মতো। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ত্রিশের দশকের সব কবির বই-ই পড়েছি। মনে আছে, জীবনানন্দ দাশের ‘ধূসরপাণ্ডুলিপি’ পড়ে মনের মধ্যে কেমন যেন হলো। মনে হলো, এ এক অন্যরকম জিনিস! এভাবে পড়তে পড়তেই আগ্রহ জেগে উঠল- কী খেয়ালে লিখে ফেললাম কবিতা। তখন মনে হয়েছিল, আমিও তো পারি!’

কবি হতে কী কী করা লাগে, কোন পথে হাঁটতে হয়, প্রথম প্রথম সে-সবের কিছুই জানতাম না, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার শখ ছিল, আই উইশ টু বি অ্যা পোয়েট। তখন পত্র-পত্রিকায় অনেক সঙ্কোচ নিয়ে লেখা পাঠাতাম। সেটা ছাপা হয়ে যেত। সুখের কথা হলো, আমার কোনো লেখাই পত্রিকার সম্পাদকদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়নি। এটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়।

সাঈদ চৌধুরী : বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেন কিভাবে?

আল মাহমুদ : আমাদের এলাকায় লালমোহন স্মৃতি পাঠাগার নামে একটি লাইব্রেরি ছিল। ওখান থেকে বই নিয়ে পড়তাম। ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, ইতিহাসের ধারা- এসব বই। এটা চালাত কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা। মোল্লাবাড়ির ছেলের বইয়ের প্রতি অগাধ আগ্রহ দেখে তারা আমাকে খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করতেন। চাইতেন আমি যেন বাম ঘরানার দিকে ঝুঁকে যাই।

তারা আমাকে বই দিতেন। ওই বইগুলো পড়ে মনে মনে কমিউনিজমের ওপর একটা আবেগের জায়গা তৈরি হয়েছিল। আমার ওপর বামপন্থার একটা প্রভাব ছিল। কিন্তু সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, পরিবারের পরিবেশ সে রকম ছিল না। রক্ষণশীল পরিবারের কারণেই বামপন্থী হওয়া যায়নি। মোল্লাবাড়িতে জন্মানোর কারণে ধর্মকে উপেক্ষা করে অন্য কোনো ধ্যান-ধারণায় যেতে পারিনি আমি। ধর্ম ও কমিউনিজম- এই দুই ধারা এক সময় মনের মধ্যে দ্বিধার তৈরি করেছে, কনফ্লিক্ট করেছে। আর দ্বন্দ্ব ছিল বলেই ধর্মের কাছে ফিরে আসতে পেরেছি আমি।

সাঈদ চৌধুরী : কবিতা লেখার কারণে আপনার বাড়িতে পুলিশি হানার ঘটনা লেখক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি?

আল মাহমুদ : মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে যারা জড়িয়েছে, পাকিস্তান সরকারের পুলিশ তাদেরকে দমিয়ে রাখবার চেষ্টা করেছে। মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেছে। আমি তাদেরই একজন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ঢেউ তখন মফস্বল শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছড়ে পড়ছে। স্থানীয় ভাষা আন্দোলন কমিটির লিফলেটে আমার চার লাইন কবিতা ছাপা হয়েছিল। যে প্রেসে ছাপা হচ্ছিল সারাটা সকাল সেখানে কাটিয়ে বাড়ি ফিরছি। লিফলেটগুলো তখনো বিলি হয়নি। এরই মাঝে আমাদের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়।

আমি বাড়ির গেটে এসে পৌঁছামাত্রই পুতুল নামে আমার এক খালাতো বোন কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে বলল, পালাও। তোমাদের ঘরবাড়ি পুলিশ সার্চ করছে। তোমাকে খুঁজছে। বইপত্র সব তছনছ করে কী যেন খুঁজছে।

আমি একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। যেন একটা বাজপড়া মানুষ। পরক্ষণে সম্বিত ফিরে পেলাম। আমি অন্দরের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু পুতুল বাধা হয়ে দাঁড়াল। না, যাবে না। খালুর অবস্থা ভালো না? এক শ’ তিন ডিগ্রি জ্বর এখন। খালা মাথায় পানির ধারা দিচ্ছে। তোমাকে এ অবস্থায় ধরে নিয়ে গেলে খালু হার্টফেল করবে। পালাও।

আব্বার অসুখের কথা বলে পুতুল আমাকে একদম নরম করে দিলো। কিন্তু আমি কোথায় পালাব? পূর্ব দিকে কলেজের মাঠ পেরিয়ে তিতাসপাড়ের শ্মশানঘাটের দিকে হাঁটা দিলাম।

নেতৃস্থানীয়দের বাড়িতে হানা না দিয়ে পুলিশ আমাদের বাড়িতেই কেন প্রথম সার্চ শুরু করেছে? হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম। পরে অবশ্য জেনেছিলাম প্রেস থেকে লিফলেটের কপি ডিআইবির লোকদের হস্তগত হলে তারা আমার নামসহ কবিতা দেখতে পায়। এতে অন্য কারো নামধাম ছিল না- ছিল শুধু ভাষা আন্দোলন কমিটি। ফলে এই আন্দোলনে কারা কারা জড়িত আছে সে তথ্য বের করার জন্য আমাদের বাড়িতে হানা দিয়েছে। এই ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কবিতার জন্য আমি ঘরছাড়া হই। আমার কবিতার শক্তি আমি অনুভব করতে থাকি।

সাঈদ চৌধুরী : পুলিশি হানার পর এলাকা ছেড়ে কোথায় গেলেন? আবার বাড়ি ফিরলেন কবে?

আল মাহমুদ : ভাষা আন্দোলনের পক্ষে লেখার কারণে আমাকে ফেরার হয়ে যেতে হলো। কবিতাটি ছাপা হওয়ার পর আর বাড়ি থাকতে পারলাম না। এখানে ওখানে বেশ ঘুরাঘুরি করলাম। অবশেষে এক চোরাকারবারির সঙ্গে সীমান্ত পার হয়ে পালিয়ে গেলাম কলকাতা। সে অনেক দীর্ঘ কাহিনী।

এক সময় চট্টগ্রাম এসে আশ্রয় নিলাম। তারপর ঢাকায় এসে একটা সংবাদপত্রে চাকরি পেলাম। মাঝখানে অনেক ঘুরেছি। আমি যখন গ্রাম থেকে নগরের দিকে ছুটে চলেছি। বহু পথ আমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়েছে। জীবিকার জন্য বদলাতে হয়েছে অনেক স্থান। এখান থেকে ওখানে। এভাবে নানা জায়গায় অবস্থান করতে হয়েছে। সংবাদপত্রে চাকরি, পত্রিকা সম্পাদনা, প্রকাশনা সংস্থায় কাজ, শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি ও অবসর গ্রহণ।

সবখানেই কবিতা আমার সাথী ছিল। চট্টগ্রামে থাকাবস্থায় প্রতিবেশী ছিলেন গায়ক শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব। আমি তখন গোর্খা ডাক্তার লেন বলে জেলেপাড়ার দিকে একটা জায়গা আছে, সেখানে থাকতাম। ইকবাল ম্যানশন বিল্ডিংয়ের চারতলায়। কবিতা লিখি বলে শ্যামসুন্দর খুব খাতির করতেন আমাকে- একেবারে আগলে রাখতেন।

আমাদের পাশেই থাকতেন অনেক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নারী। আমাকে তারা কবি বলে ডাকতেন। তাদের সাথে এক ধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। তাদের নিয়েই লেখা হয় আমার সবচেয়ে আলোচিত সনেটগুলো। চৌদ্দটা সনেটের মধ্যে প্রথম সাতটা একটানা লিখেছি। লেখার পর নিজেরই মনে হয়েছিল, অন্যরকম কিছু একটা লিখেছি। সবগুলোই বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হলো। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠল। একসময় আমি নিজেও আমার কবিতার পাঠক হতে লাগলাম।

শব্দের বুঝি অদ্ভুত গন্ধ আছে, যা কেবল কবিরাই টের পায়। আমার মধ্যেও সেই অলৌকিক ঘ্রাণশক্তি অনুভব করে আমি মেতে উঠলাম। কবিতার জন্য সেই যে বাড়ি থেকে পালিয়ে এলাম, আমার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তবে কবি হতে পেরেছি। এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কী হতে পারে।

সাঈদ চৌধুরী : কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া একেবারে যাওয়া হয়নি আর?

আল মাহমুদ : বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছি। গ্রামে বসবাসের জন্য ফিরে যাওয়া আর হয়নি। কয়েক দিন আগে ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়েছিলাম। ছাত্র সংসদের রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীতে প্রধান অতিথি হিসেবে। যখনই কুমিল্লা আসি, মনে হয় যেন স্মৃতির সরোবরে অবগাহন করতে এসেছি। বাল্য ও কৈশোরের অবিস্মরণীয় কত ঘটনা যে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে যায়। পার্কের ভেতর ঢুকতেই পাথরে নিজের দু’টি কবিতার লাইন উৎকীর্ণ দেখে থমকে দাঁড়াই।

মনে পড়ে জেলা প্রশাসক সৈয়দ আমিনুর রহমানকে। যিনি আমার পঙক্তি দিয়ে কুমিল্লার পৌর উদ্যান সজ্জিত করতে চেয়েছিলেন। সন্নিহিত দীঘি বা সরোবরে ভেসে বেড়ানোর জন্য কয়েকটি সুন্দর বোটের ব্যবস্থাও তারই কীর্তি। আমি এগুলোর নাম দিয়েছিলাম ফেনা, বাতাসী, রাজহংসী ইত্যাদি। আমিনুর রহমান কী যে খুশি হয়েছিলেন এই নামগুলো পেয়ে।

সেদিন ময়নামতি দ্বেবিদ্বারের পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ইতিহাসের অধ্যায়গুলো অন্তরে আন্দোলিত হতে থাকে। প্রাচীন জ্ঞানের গুঞ্জনধ্বনি এখন ধ্বংসস্তূপের শেওলাপড়া রক্তবর্ণ ইস্টক প্রাচীরে ঝিঁঝির কান্না হয়ে মাথা কুটছে আমার পিতৃভূমি।

কুমিল্লায় ঢুকে শাসনগাছা পেরুলেই মনে পড়ে এখানেই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শ্বশুরবাড়ি। দৌলতপুরের সেই প্রাচীন নোনাধরা বাড়িটাতে জন্মেছিলেন নার্গিস আসার খানম। কবি নজরুল ইসলামের প্রথম নারী নার্গিস। সেই পুকুরপাড় যেখানে নজরুল বাঁশি বাজিয়ে নার্গিসকে পূর্ণিমার গোল চাঁদের নিচে টেনে আনতে চাইতেন। গীত রচনা করতেন। মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারায় ফুল। সেই বৃক্ষটা এখনো আছে যার কাণ্ডে পিঠ রেখে নজরুল তার কাঠবিড়ালী, লিচু চোর লিখেছিলেন।

শুধু কি নজরুল! বুদ্ধদেব বসু, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, অজয় ভট্টাচার্য, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, আয়াত আলী খাঁ- আরো কত প্রতিভার প্রথম আশ্রয়দাত্রী ছিল এই শহর। আমি ভিক্টোরিয়া কলেজের রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীতে যখন মঞ্চে দাঁড়িয়েছি, তখন বুকটা ধক করে উঠল। এখানেই একদা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি নজরুল বক্তৃতা করে গেছেন। নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে হয়েছিল।

সাঈদ চৌধুরী : কোন কাগজে কবিতা ছাপার পর নিজেকে বেশি প্রফুল্ল মনে হয়েছে?

আল মাহমুদ : বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায়। এখনো মনে আছে, বুদ্ধদেবকে একসঙ্গে তিনটি কবিতা পাঠিয়েছিলাম। ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন শহীদ কাদরী। তার হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল।
কবিতা পাঠানোর ক’দিন পর বুদ্ধদেব বসুর চিঠি পেলাম। পোস্টকার্ডে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, প্রীতিভাজনেষু, তোমার একটি বা দু’টি কবিতা ছাপা যাবে বলে মনে হচ্ছে। সেই পোস্টকার্ডটি অনেক দিন পর্যন্ত আমি সংরক্ষণ করেছি। বাংলা ভাষার একজন নবীন কবির জন্য এটি ছিল অসাধারণ প্রেরণা ও স্বীকৃতির বিষয়।

আমরা তখন একসাথে আড্ডা দিতাম। আমি, শামসুর রাহমান, ফজল শাহাবুদ্দিন, জহির রায়হান, কাইয়ুম চৌধুরী, শহীদ কাদরীসহ আরো অনেকে। তারাও ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখা পাঠায়। কিন্তু সব তো আর ছাপা হয় না। তখন বিউটি বোর্ডিং ছিল আমাদের আড্ডাখানা। একদিন শহীদ আমাকে কবিতা পত্রিকাটা দিয়ে বললেন, তোমার কবিতা ছাপা হয়েছে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। কিন্তু ওরা সকলে তো আর সমান খুশি হতে পারেনি। ওই সংখ্যায় জীবনানন্দ দাশের কবিতাও ছিল। আমার কবিতা ছাপা হওয়ায়, আমার আনন্দের কোনো সীমা ছিল না।

সাঈদ চৌধুরী : প্রথম জীবনে কোন কোন কাগজে কাজ করেছেন? কোনটি আপনার সেরা কাজ?
আল মাহমুদ : ১৯৫৪ সালে দৈনিক মিল্লাতে চাকরি হয়। প্রুফ সেকশনে, প্রুফ রিডারের চাকরি। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই আমাকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। মিল্লাতের মালিক ছিলেন মোহন মিয়া। সম্পাদক ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর। প্রুফ দেখতে গিয়ে পত্রিকার প্রায় সকল লেখা আমাকে পড়তে হয়েছে। এক ধরনের সম্পাদনার কাজও করতে হয়েছে। এ কাজে শব্দের বানান, ব্যাপ্তি, বিস্তৃতিতে আমার দখল বেড়েছে।

কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলা নামে একটি সাপ্তাহিক সম্পাদনা করতেন। মাঝে মধ্যে আমি ইসলামপুরে তার অফিসে যেতাম। কাফেলার মালিক নাজমুল হকও আমাকে চিনতেন। ওয়াসেকপুরী একসময় কাগজটি ছেড়ে দিলে নাজমুল হক আমাকে কাফেলায় নিয়ে আসেন। সহ-সম্পাদক পদে যোগদান করি। আমি সেখানে বহু দিন সম্পাদনার কাজ করেছি।

সাংবাদিকতা জীবনের একটি বড় অংশজুড়ে আছে দৈনিক ইত্তেফাক। পঞ্চান্নর প্রথমদিকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত ইত্তেফাকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। গল্পকার লুৎফুর রহমানের চেষ্টায় ও উৎসাহে ইত্তেফাকে আমার চাকরি হয়েছিল। জুনিয়র সাবএডিটর পদে। নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরেও আমি প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কবিতা লিখতাম।

নিউজ এডিটর সিরাজ সাহেব আমার লেখায় মুগ্ধ হতেন। তার উৎসাহে একদিন মফস্বল বিভাগে যোগ দিলাম বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে। ইত্তেফাকে সারা দেশের সংবাদদাতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট মফস্বল বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রায় ৫ বছর এই দায়িত্ব আন্জাম দিয়েছি। ইত্তেফাকে তোহা খান ও আবেদ খানের মতো লোকের সাথে কাজ করেছি। এটা ছিল এক বিশাল ব্যাপার। বেশ কিছুদিন দৈনিক সংগ্রামে সহসম্পাদক ও দৈনিক কর্ণফুলীতে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি।

সাঈদ চৌধুরী : স্বাধীনতাযুদ্ধে কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন? কোথায় ছিলেন?
আল মাহমুদ : স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কলকাতায় চলে গেলাম। আমার ভগ্নিপতি তৌফিক ইমামের সহায়তায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দীন আহমদ আমাকে একটি কাজ দিলেন। প্রবাসী সরকারের স্টাফ অফিসার পদে। ৮ নং থিয়েটার রোডে ছিলাম। দেশে চলমান যুদ্ধের খরব নেয়া ও লেখালেখি। পাকিস্তানি অত্যাধুনিক অস্ত্রের কাছে এদেশের মুক্তিকামী বাঙালিরা লাঠি, ফলা, তীর-ধনুক আর হালকা ধরনের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছিল। আমাদের বীর জনগণ সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণকারী সশস্ত্র পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেই খবর ছড়িয়ে দেয়া ছিল আমাদের কাজ।

সাঈদ চৌধুরী : যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন পথ চলা কেমন ছিল?
আল মাহমুদ : স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দেশে আসি। এখানে সবকিছু তখন ওলট-পালট হয়ে গেছে। ইত্তেফাকে যোগ দিতে চাইলাম। কিন্তু আফতাব আহমদ একটা নতুন কাগজ সম্পাদনার কথা বললেন। আ স ম আব্দুর রবসহ আরো অনেকে জড়িত ছিলেন। তাদের কথায় দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদনা করি।

গণকণ্ঠের নিঃশঙ্ক সাংবাদিকতা এ দেশের পাঠক সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতি, দুর্ভিক্ষ, সর্বহারা আন্দোলন ও রক্ষীবাহিনী ইত্যাকার পরিস্থিতিতে দেশ তখন বিপর্যস্ত, আমাদের সংবাদ প্রকাশের স্টাইল ও সাহসী সম্পাদকীয় তখন দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করে। কিন্তু অল্পদিনে পত্রিকাটি পরিণত হয় শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে আমাকে কারাবরণ করতে হয়। দৈনিকটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।

সাঈদ চৌধুরী : কেন আপনাকে গ্রেফতার করা হলো? কিভাবে গ্রেফতার হলেন?
আল মাহমুদ : শেখ সাহেব আমাকে স্নেহ করতেন। গ্রেফতারের কয়েক দিন আগে আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। এমন কিছু বলেননি, এমন কোন ইঙ্গিত বা বিষয়ও আলোচনা হয়নি যে, আমি গ্রেফতার হতে পারি। কিন্তু দু’ দিন পরই আমাকে গ্রেফতার করা হলো। ঘড়িতে তখন রাত ২টার কাটা ছুঁই ছুঁই। গণকণ্ঠ অফিস থেকে বাসায় ফিরে কেবল খাওয়া-দাওয়া শেষ করেছি। তখনও বিছানায় যাইনি। পুলিশ এসে হাজির। আমাকে যেতে হবে। কী আর করবো। তারা আমাকে রমনা থানায় নিয়ে গেল। রাতে সেখানেই ছিলাম। পর দিন হাজতে পাঠিয়ে দিলো।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি গিয়াস কামাল চৌধুরী জেল মুক্তির জন্য অনেক সহায়তা করেছেন। তখন তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।

সাঈদ চৌধুরী : কারামুক্তির পর সংবাদপত্রে যুক্ত না হয়ে সরকারি চাকরিতে কেন গেলেন? কেমন কেটেছে ওই সময়টা?

আল মাহমুদ : কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু আমাকে ডেকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। পরে পরিচালক হয়েছি। আট বছর ছিলাম। ১৯৯৩ সালে ওই বিভাগের পরিচালকরূপে অবসর নিই।

শিল্পকলা একাডেমিতে যখন জয়েন করেছি, তখন একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন ড. সিরাজুল ইসলাম। তিনি আমাকে চেয়ারম্যান করে কতগুলো সাংস্কৃতিক গবেষণাসূত্র সন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করেন। আমার দায়িত্বে ছিল সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম।
দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমি যেদিন সিলেট পৌঁছলাম, পূর্ব কথামত আমার বন্ধু আফজাল চৌধুরী রেলস্টেশনে ছিলেন অপেক্ষমাণ। সকালবেলা স্টেশনে নেমে আমার কবি-বন্ধুটির অপেক্ষমাণ মুখচ্ছবিকে মনে হলো বৃষ্টিসিক্ত নারঙি বনের মতো। আমি মাটিতে পা দিয়েই তাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলাম। তারপর চলে গেলাম কবির বাসায়।

আমার উপস্থিতির খবর শহরে চাউর হয়ে যাওয়ায় তরুণ কবিরা এসে ভিড় জমালেন। শুরু হলো সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের কবিতাপাঠ। কারো কারো তারুণ্যে উজ্জ্বল মুখে যখন কবিত্বের চিহ্ন দেখি তখন মনটা প্রফুল্লতায় ভরে যায়। কী সুন্দর ঐসব মুখ আর কী অপার্থিব দীপ্তি।

বিকেলে শাহজালালের (র.) মাজারে যাবো। কিন্তু প্রবল ধারায় বৃষ্টি নেমে এলো। সিলেটের বুনো বৃষ্টি। হিমালয়ের পর্বতশিরার প্রান্তসীমার প্রতিক্রিয়া। কাছেই তো আসামের চেরাপুঞ্জি। পৃথিবীর সর্বাধিক বারিপাতের বারান্দা। আমি এই বিপুল বর্ষণসন্ধ্যায় মাজার জিয়ারতে গেলাম। খাদেম সাহেব গোলাপজল ছড়িয়ে দিলেন মাজারের চতুর্দিকে। বৃষ্টির মধ্যে গোলাপের সৌরভ সারাটা আঙিনা মাতিয়ে তুলল।
তেলাওয়াতের পর মুনাজাতের জন্য যখন প্রস্তুত হলাম আমার চোখের সামনে প্রবল বর্ষণের মধ্যে এক দৃশ্যান্তর অনুভব করলাম। আমি আজও জানি না তা আমারই মানসিকতার ইল্যুশন বা প্রতিচ্ছবি কিনা। আমি দেখলাম কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক মধ্যযুগীয় বীর যোদ্ধা। সারা শরীর লৌহবর্মে আবৃত, মাথায় ইস্পাতের হেলমেট। হেলমেটের চূড়ায় নীল ইস্পাতের চাঁদ চকচক করছে। তার মুখে সুন্দর করে ছাঁটা কালো দাড়ির শোভা। আর তরবারির সোনালি বাঁটটি পর্যন্ত আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ঈষৎ হাসিতে আমার প্রতি যেন প্রীতি প্রকাশ করছেন। সফেদ দন্তপঙক্তিতে দৃঢ়তার ছাপ।

মাজার থেকে বেরিয়ে আফজাল চৌধুরীকে ঘটনাটি বললাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বললেন, আপনি সৌভাগ্যবান। মানবতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ইয়েমেনের বীর যোদ্ধা ও দরবেশ হজরত শাহজালালকে আপনি দেখে ফেলেছেন। আপনি তার সমাজসংস্কারের উত্তরাধিকারী হবেন। কথাটি শুনে আমি আনন্দে কেঁদে ফেললাম।

সাঈদ চৌধুরী : চাকরি থেকে অবসর নিয়ে আবার সাংবাদিকতায়! কেমন কাটলো কর্ণফুলীতে?
আল মাহমুদ: চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ফিরে আসি সাংবাদিকতা পেশায়। অন্য কিছু করার আগ্রহ একেবারেই ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক কর্ণফুলীর সম্পাদক হিসেবে বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলাম। এক নতুন রকম সাংবাদিকতার কাব্যময় ভাষা, উপমা, চিত্রকল্পের জন্ম দিয়ে পাঠকদের চমকে দেয়ার চেষ্টা করেছি।

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us