কখন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে চন্দ্রবোড়া সাপ

অন্য এক দিগন্ত | Apr 21, 2021 03:19 pm
চন্দ্রবোড়া সাপ

চন্দ্রবোড়া সাপ - ছবি : সংগৃহীত

 

বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মারা যায় প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ, কিন্তু সহজ কিছু পদক্ষেপ সর্পদংশন থেকে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে পারে।

‘বর্ষায় আগাছা বেড়ে ক্ষেতের মাটি ঢেকে যায়,’ বলছিলেন টুকারাম রাও, যিনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রত্নাপুরী গ্রামের এক ক্ষেত মজুর। ‘রাতের বেলা ওই ক্ষেতের মধ্য দিয়ে আমাদের হেঁটে যেতে হয় পাম্প চালু করার জন্য। পানির পাইপ ঠিকমতো কাজ না করলে, হাত দিয়ে ওই পাইপ টেনে বের করে তা মেরামত করতে হয়।’

তার মতো গ্রামের বহু কৃষক ও ক্ষেত মজুর খালি পায়েই হাঁটা-চলা করেন। বর্ষাকালে ঘন আগাছার মধ্যেই থাকে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আস্তানা। ভারত আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুবই বিষাক্ত এই সাপের ছোবলে প্রাণ যায় বহু মানুষের।

এই সাপ রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছোবল মারার আগে নিস্তেজ অবস্থায় অনেকক্ষণ নিজেকে লুকিয়ে রাখে চন্দ্রবোড়া। দীর্ঘ সময় নড়াচড়া করে না এই সাপ, তারপর হঠাৎই ভয়ানকভাবে ছোবল বসায়।

এরা সচরাচর ইঁদুরজাতীয় প্রাণী বা ছোটখাট ব্যাঙ শিকার করে খায়। মানুষ সচরাচর তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু থাকে না। তার পরেও ভারতে অন্য যেকোনো জাতের সাপের তুলনায় চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ, আর এই সাপের ছোবলে মৃত্যুও ঘটে সবচেয়ে বেশি।

ভারতে সর্পদংশনে মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই চন্দ্রবোড়ার কামড়ে হয়। শ্রীলঙ্কাতেও সর্পদংশনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী চন্দ্রবোড়া।

বাংলাদেশেও যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া। ১০০ বছর আগে এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হলেও গত বছর দশেক ধরে এই সাপের দংশনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটি।

চন্দ্রবোড়ার দংশন ভয়ানক কারণ হলো তাদের শিকারের ধরন।

ঘাস বা আগাছার মধ্যে দিয়ে তারা চলে অতি ধীরে। এত ধীরে যে মনেই হয় না তারা নড়াচড়া করছে। গায়ের সবুজ ও বাদামী চাকা চাকা দাগের কারণে দিনের বেলা তারা ঘাস বা আগাছার রঙের সাথে মিশে থাকে, তাদের দেখা যায় না। আর রাতের বেলা তাদের দেখতে পাওয়া আরো কঠিন।

ধানক্ষেতে বা বেড়ে ওঠা আগাছায় তাদের গায়ের ওপর অসাবধানে পা পড়লেই চন্দ্রবোড়া ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তার ওপর হামলা হচ্ছে ধরে নিয়ে সে ঘনঘন ছোবল বসায়।

বিশেষ করে যারা ক্ষেতখামারে কাজ করেন, তারা চন্দ্রবোড়া সাপে কাটার আশঙ্কায় থাকেন।

সাপের দংশনে প্রতিবন্ধী
ভারতে প্রতি বছর সর্পদংশনের শিকার হয় প্রায় ২৮ লাখ মানুষ, আর মারা যায় ৫০ হাজার। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, গত দুই দশকে শুধু ভারতেই সাপের কামড়ে মারা গেছে ১২ লাখের বেশি মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হয়, এবং মারা যায় অন্তত ছয় হাজার মানুষ।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৮১ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের মধ্যে। আর বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর সাপের দংশনের শিকার হয় আনুমানিক ৪৫ লাখ মানুষ।

সাপে কামড়ানোর পর যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদের জীবনেও এর সূদুর প্রসারী প্রভাব পড়ে। দংশনের কারণে অনেকের জীবন-জীবিকা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

‘সম্প্রতি একজন হলুদ চাষীর পায়ে সাপে ছোবল মেরেছিল। তিনি ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিল। তার গোড়ালির চারপাশের মাংস পচে গেছে,’ বলছিলেন রাও। ‘ওই পচন তার হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, এখন তিনি আর কোনো কাজকর্ম করতে পারে না।’

ডাক্তারদেরকে তার পায়ের পচে যাওয়া অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের খাওয়া-পরা যোগাতে এখন তার স্ত্রীকে বাড়তি কাজ খুঁজতে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ঘরে ঘরে, বিবিসিকে বলেন রাও।

‘প্রতি বছর প্রায় চার লাখ সাপে কাটা মানুষ কোনো না কোনো ধরনের পঙ্গুত্বের শিকার হন। হয় তাদের কোনো অঙ্গের কোষকলা শুকিয়ে মরে যায়, যার ফলে ওই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়, নয়ত ওই অঙ্গ নষ্ট হয়ে আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। অনেকে সাপের কামড়ের কারণে অন্ধও হয়ে যান,’ বলছেন ব্রিটেনে লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু।

‘সর্পদংশনের কিন্তু একটা বিরাট মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে, যা নিয়ে গবেষণার কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। সাপে কাটার মানসিক প্রভাবও কিন্তু মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।

‘অনেকে সাপে কাটার পর কাজ করতে পারেন না, কেউ ভয়ে, আবার কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার কারণে। প্রতিবন্ধী অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হয় না, তারা ঘরবন্দী হয়ে যায়, অনেকে চিকিৎসার খরচ যোগাতে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।’

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us