পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে সাফ বামেরা

অন্য এক দিগন্ত | May 07, 2021 04:28 pm
পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে সাফ বামেরা

পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে সাফ বামেরা - ছবি : সংগৃহীত

 

১৯৭৭ সাল। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে সিপিএম তথা বামেরা। তার আগে ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যাপক রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যে বামেরা ক্ষমতায় আসতেই মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যায়। চতুর্দিকে দেয়ালে ছড়া লেখা শুরু হয়, বাহাত্তর নয় সাতাত্তর সাল, লাল বাংলা লালে লাল। তারপর যত দিন গড়িয়েছে, বামেদের অবস্থা রাজ্যে আরো মজবুত হয়েছে। বামেদের লাল পতাকা পতপত করে উড়েছে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে। বাম নেতাকর্মীরা বলতেন, রেড কখনও ফেড হয় না। সত্যিই, লাল রং ফিকে হওয়ার সামান্যটুকু সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এসব আজ অতীত ইতিহাস। একুশের নির্বাচনের ফলাফল বলছে বামেদের কার্যত বিসর্জন হয়ে গেল।

একুশে মেরুকরণের নির্বাচন হবে, সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু বামেরা একটি আসনেও জিততে পারবে না, প্রায় প্রত্যেকটি কেন্দ্রে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, এতটা কেউ ভাবতে পারেননি। কংগ্রেসের অবস্থাও তথৈবচ। তারাও এবার খাতা খুলতে পারেনি। ফলাফলের পরেই উত্তর দমদমের সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। এই হারের দায় তাদের নিতে হবে, জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন তিনি। এমনকী নাম না করে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা মোহম্মদ সেলিমকে ব্যাপক নিশানা করেছেন।

উল্লেখ্য সেলিমের উদ্যোগে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফের সঙ্গে জোট হয় বামেদের। কেন বামেরা ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’র সঙ্গে হাত মেলাল, এই অভিযোগ তখন থেকেই উঠতে শুরু করে। এর পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গেও জোট নিয়ে সবাই খুশি ছিলেন না। অথচ করোনা কালে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রচুর কাজ করেছেন, এখনো করে চলেছেন। পাহাড় থেকে সমুদ্র, নীরবে কাজ করে চলেছেন রেড ভলান্টিয়াররা। কিন্তু বাংলার তৃণমূল বিরোধী মানুষ বামেদের ভোট দেননি একটাই কারণে, তাদের জেতার সম্ভাবনা নেই দেখে। তাই বাম ব্রিগেডের উজ্জ্বল মুখ সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ঐশী ঘোষ, সৃজন ভট্টাচার্য, আলি ইমরান ভিক্টর, দীপ্সিতা ধররা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। আলিমুদ্দিন মনে করেছিলেন, আব্বাসের সঙ্গে জোটের ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট তারা আবার ফিরে পাবেন। কিন্তু সেই ভোট ফেরা তো দূরের কথা, উল্টে হিন্দুদের যে অংশের ভোট তারা গত লোকসভাতেও পেয়েছেন, সেটার বড় অংশ এবার হারাতে হয়েছে আব্বাসের সঙ্গে জোটের ফলে। বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে প্রচুর ভিড় হয়েছিল। কিন্তু বামেদের সিংহভাগ সমর্থক মনে করেছেন তৃণমূলকে হারাতে পারে বিজেপি। তাই ভোট তারা বিজেপিকেই দিয়েছেন। নির্বাচনের ফল বলছে অদূর ভবিষ্যতে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। কারণ যত দিন যাবে ততই ধর্মীয় মেরুকরণ রাজ্যে আরো বেশি করে প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেটা বঙ্গ রাজনীতিতে অতীতে দেখা যায়নি। ঠিক এই কারণেই মালদা এবং মুর্শিদাবাদে একটি আসনও জিততে পারেনি কংগ্রেস এবং বামেরা। সেখানকার হিন্দু ভোটের প্রায় পুরোটাই চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে।

অথচ এবারের নির্বাচনে বামেরা প্রচুর তরুণ মুখ তুলে ধরেছিল। ‘টুম্পা সোনা’ গান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। বামেদের ব্যাখ্যা ছিল, এভাবে নতুন প্রজন্মকে কাছে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হল না। গত ৪০ বছরে কেরলে কোনও সরকার পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসেনি। এবার কিন্তু সেখানে বামেদের প্রত্যাবর্তন হয়েছে। আবার ক্ষমতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। আর ঠিক সেদিনই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের একপ্রকার বিসর্জন হয়ে গেল। তারা টানা ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালিয়েছে, এবারের ফল দেখলে সেটা যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তাই এটা বলতেই হবে এখন লাল শুধু ফিকে নয়, একপ্রকার মুছেই গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে।

সূত্র : প্রথম কলকাতা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us